
ছবি: ছবি: সংগৃহীত
সিঙ্গাপুরে রোমাঞ্চকর ফাইনালে জাপানি প্রতিপক্ষকে হারিয়ে আরচ্যারিতে বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠা করলেন আব্দুর রহমান আলিফ
সিঙ্গাপুরের আকাশে উড়ল লাল-সবুজ পতাকা, আরচ্যারির নিশানায় রচিত হলো নতুন এক ইতিহাস। এশিয়ান কাপ আরচ্যারির রিকার্ভ পুরুষ একক ইভেন্টে সোনা জয় করে বিশ্ব মঞ্চে বাংলাদেশের নাম আরও একধাপ ওপরে তুলে ধরলেন তরুণ তীরন্দাজ আব্দুর রহমান আলিফ। রুদ্ধশ্বাস এক ফাইনালে জাপানের প্রতিদ্বন্দ্বী মিয়াতা গাকুতোকে ৬-৪ সেটে হারিয়ে বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে নতুন আলো ছড়ালেন আলিফ।
শুক্রবার, ২০ জুনের বিকেলে অনুষ্ঠিত এই ফাইনাল ম্যাচটি শুরু থেকেই ছিল উত্তেজনায় ঠাসা। প্রথম সেটেই নিজের দক্ষতার প্রমাণ দেন আলিফ। নিখুঁত লক্ষ্যভেদে ২৮ স্কোর করে এগিয়ে যান, যেখানে মিয়াতা করেন ২৭। এই সূচনা আলিফকে দেয় ২-০ সেট পয়েন্টের লিড, যা ছিল আত্মবিশ্বাসের ভিত্তিপ্রস্তর।
দ্বিতীয় সেটে আরও দৃঢ়তায় লক্ষ্যভেদ করেন আলিফ। তিনটি তীরেই অসাধারণ নিপুণতায় ২৯ পয়েন্ট তুলে নেন। তার জাপানি প্রতিদ্বন্দ্বী মিয়াতা করেন ২৮ পয়েন্ট। তখনই স্পষ্ট হয়ে ওঠে, সোনার পথ বাংলাদেশের দিকেই মোড় নিচ্ছে।
কিন্তু প্রতিযোগিতা কখনো সরল পথে চলে না। তৃতীয় ও চতুর্থ সেটে ঘটে নাটকীয় পরিবর্তন। আলিফ কিছুটা ছন্দ হারান। মিয়াতা তৃতীয় সেটে স্কোর করেন ২৮ এবং চতুর্থে ২৭। আলিফ সেখানে সংগ্রহ করেন যথাক্রমে ২৭ ও ২৬ পয়েন্ট। ফলাফল দাঁড়ায় ৪-৪ সেট পয়েন্টে, ফাইনাল গড়ায় চূড়ান্ত ও পঞ্চম সেটে।
সমস্ত চাপ আর প্রত্যাশার ভার কাঁধে নিয়ে যেভাবে পঞ্চম সেটে নিজের স্নায়ু নিয়ন্ত্রণে আনলেন আলিফ, তা কেবল একজন প্রকৃত চ্যাম্পিয়নই পারেন। তিনটি তীরই ছুড়লেন নিখুঁত কৌশলে—যার ফলাফল ২৯ পয়েন্ট। প্রতিদ্বন্দ্বী মিয়াতা সংগ্রহ করেন মাত্র ২৬। আর তাতেই বাংলাদেশের জন্য আসে স্বর্ণপদকের গর্বিত মুহূর্ত।
এই বিজয়ের সঙ্গে শুধু একটি সোনা যুক্ত হয়নি দেশের ক্রীড়াভান্ডারে, বরং আরচ্যারিতে বাংলাদেশের সক্ষমতা ও সম্ভাবনার আরেকটি দিগন্ত খুলে গেছে। যেখানে প্রতিবেশী দেশগুলোর আধিপত্য দীর্ঘদিন ধরে প্রাধান্য পেয়েছে, সেখানে আলিফের এই জয় নতুন আশার বাতিঘর।
জাতীয় ক্রীড়াঙ্গনের অভিজ্ঞজনরা বলছেন, এই সাফল্য শুধু ব্যক্তিগত কৃতিত্ব নয়, বরং এটি দেশের প্রশিক্ষণব্যবস্থা, অবকাঠামো ও প্রতিভা বিকাশে ধারাবাহিক বিনিয়োগের ফল। আব্দুর রহমান আলিফ হয়ে উঠেছেন সেই নতুন প্রজন্মের প্রতীক, যারা সীমিত সুযোগেও অসীম স্বপ্ন দেখতে জানে এবং সেগুলো বাস্তবে রূপ দিতে সাহসী হয়ে ওঠে।
আলিফের এই বিজয় উদযাপন শুধু ক্রীড়াপ্রেমী মানুষের হৃদয়কেই আলোড়িত করেনি, বরং দেশের তরুণ সমাজের মধ্যেও ছড়িয়ে দিয়েছে আত্মবিশ্বাসের বার্তা—বাংলাদেশ পারে, এবং বাংলাদেশের ছেলেরা এখন আর পেছনে নয়, বিশ্বমঞ্চে শীর্ষে উঠতে জানে।
সিঙ্গাপুরের মাটিতে ছোয়া এই সাফল্য শুধু একটি পদক নয়, এটি একটি বার্তা—যেখানে লেখা, “বাংলাদেশ তীর ছুড়ছে, লক্ষ্যভেদ করছে, আর সারা বিশ্ব তাকিয়ে দেখছে।”
repoter