ছবি: ছবি: সংগৃহীত
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) নতুন চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেন দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। বুধবার বিকেলে তিনি প্রথমবারের মতো দুদক কার্যালয়ে আসেন। একই সময়ে নতুন কমিশনার হিসেবে যোগ দেন অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবার আজিজী। তবে আরেক কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পাওয়া হাফিজ আহ্সান ফরিদ এখনো দায়িত্ব গ্রহণ করেননি। এর আগে গত মঙ্গলবার মন্ত্রিপরিষদ সচিব স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে দুদকের নতুন চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের নিয়োগের সিদ্ধান্ত জানানো হয়।
দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের আয়-সম্পদের হিসাব প্রকাশের আহ্বান জানিয়েছে। টিআইবি এক বিবৃতিতে তাদের সম্পদের বিবরণী প্রকাশ, আয় ও সম্পদের সামঞ্জস্য যাচাই, দলীয় আনুগত্য বিষয়ে স্বচ্ছতা এবং দায়িত্ব পালনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকার আহ্বান জানায়।
দুদকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেন গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে জানান, আগামী সাত দিনের মধ্যে তার ও কমিশনারদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ও আয়-ব্যয়ের হিসাব প্রকাশ করা হবে। নিজের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, ২০০৯ সালে এসব অভিযোগ আসে এবং দীর্ঘ তদন্ত শেষে ২০২৩ সালে দুদক সেসব অভিযোগের সত্যতা খুঁজে পায়নি। তিনি আরও বলেন, ‘দুর্নীতি নির্মূল করা সম্পূর্ণভাবে সম্ভব না হলেও ন্যায়নিষ্ঠভাবে আইন মেনে কাজ করা হবে।’
নতুন চেয়ারম্যান তার রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে বলেন, তিনি বিভিন্ন সরকার ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে কাজ করেছেন এবং বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের রাজনৈতিক কোনো প্রভাব নেই। তার মতে, দুদক রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত থেকে কাজ করবে।
দুদকের মামলাজট ও হয়রানি কমানোর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কাজ শুরুর মাধ্যমে প্রমাণ করা হবে যে হয়রানি কমেছে কি না, তদন্তে গতি এসেছে কি না, এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করা হয়েছে কি না।
পূর্ববর্তী চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের পদত্যাগ প্রসঙ্গে জানা যায়, গত ২৯ অক্টোবর ক্ষমতার পালাবদলের মধ্যে দুদক চেয়ারম্যান মুহাম্মদ মইনউদ্দীন আব্দুল্লাহ ও দুই কমিশনার ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেন। পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে তারা মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই পদত্যাগ করেন।
এরপর সরকার ১০ নভেম্বর দুদক চেয়ারম্যান ও কমিশনার নিয়োগে সুপারিশ করতে সার্চ কমিটি গঠন করে। কমিটির নেতৃত্বে ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. রেজাউল হক। কমিটির অন্যান্য সদস্যরা ছিলেন বিচারপতি ফারাহ মাহবুব, মহা হিসাব-নিরীক্ষক মো. নূরুল ইসলাম, সরকারি কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যান মোবাশ্বের মোনেম এবং সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন।
বাছাই কমিটি প্রতিটি শূন্য পদের জন্য দুটি করে নাম সুপারিশ করে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানোর নিয়ম অনুযায়ী নতুন চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের নিয়োগ দেওয়া হয়। নতুন দুদক কমিশন গঠনে সার্চ কমিটির কাজ শেষ হওয়ার এক মাসের মধ্যেই নতুন নেতৃত্ব নিয়োগ দেওয়া হলো।
দুদকের চেয়ারম্যান মোমেন ও তার সহকর্মীরা দায়িত্ব গ্রহণের মাধ্যমে দুর্নীতি দমনের নতুন অধ্যায় শুরু করলেন। দেশের দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি তাদের সামনে একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হিসেবে বিবেচিত।
repoter