
ছবি: ছবি: সংগৃহীত
ডেনমার্ক প্রবাসী সাকিব মাহমুদের সমন্বয়ে জাতীয় স্টেডিয়ামে শুরু হয়েছে ৪৮ ফুটবলারের বাছাই কার্যক্রম; ভালো সম্ভাবনার ইঙ্গিত দিলেন সাবেক তারকারা
আগামী দিনের জাতীয় ফুটবল দলের সম্ভাব্য খেলোয়াড়দের খুঁজে বের করতেই শুরু হয়েছে ‘নেক্সট গ্লোবাল স্টার’ কর্মসূচির ট্রায়াল পর্ব। জামাল ভূঁইয়া, হামজা চৌধুরী কিংবা শমিত হোয়ানদের পথ ধরে ভবিষ্যতের লাল-সবুজ সেনানীদের আবিষ্কারে তিন দিনের এই ট্রায়ালের প্রথম দিন আজ অনুষ্ঠিত হয় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে।
প্রবাসে বেড়ে ওঠা ও খেলাধুলায় প্রশিক্ষণ পাওয়া ৪৮ জন তরুণ ফুটবলার অংশ নিয়েছেন এই বাছাই প্রক্রিয়ায়। সকাল ও বিকেলের দুটি সেশনে ভাগ হয়ে দিনব্যাপী চলেছে তাদের সামর্থ্য যাচাইয়ের কার্যক্রম।
ডেনমার্ক প্রবাসী ফুটবল সংগঠক ও ‘নেক্সট গ্লোবাল স্টার’ ট্রায়ালের সমন্বয়ক সাকিব মাহমুদ প্রথম দিনের অভিজ্ঞতা নিয়ে বলেন, “আজ দুই সেশন মিলিয়ে প্রায় পঞ্চাশজন ফুটবলারের সামগ্রিক অবস্থা আমরা পর্যবেক্ষণ করেছি। স্বল্প সময়ে প্রতিটি ফুটবলারের প্রকৃত প্রতিভা বিচার করা কঠিন, তবে আমাদের কাছে যেটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তা হলো, এদের মানসিকতা ও মনোভাব। ওরা সবাই খুব পরিশ্রমী এবং এখানে নিজের অবস্থান প্রমাণ করতে এসেছে।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা ইতোমধ্যেই এমন কিছু ফুটবলার পেয়েছি যারা কৌশলগত দিক থেকে বেশ পরিপক্ব। এদের খেলায় যে পরিকল্পনার ছাপ আছে, তা আমাদের উৎসাহিত করেছে। তবে পূর্ণাঙ্গ মূল্যায়নের জন্য আরো কিছুদিন পর্যবেক্ষণ প্রয়োজন। এছাড়া আমাদের কোচরা ও খেলোয়াড়রাও প্রোগ্রামটি উপভোগ করছেন। আমাদের বিশ্বাস, এই আয়োজন দেশের ফুটবলে একটি ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে।”
এই ট্রায়াল কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া ফুটবলারদের মধ্যে অনেকেই এসেছেন ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আমেরিকার বিভিন্ন দেশের ক্লাব ও একাডেমি থেকে। তাঁদের শারীরিক গঠন, ফুটবল স্কিল এবং আন্তর্জাতিক পরিবেশে খেলার অভিজ্ঞতা ট্রায়ালের আয়োজকদের আশা জাগাচ্ছে।
প্রাক্তন জাতীয় দলের গোলরক্ষক ও মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের বর্তমান গোলরক্ষক কোচ সাঈদ হাসান কানন পুরো কার্যক্রম ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন। তিনি বলেন, “প্রথম দিনেই চূড়ান্ত মন্তব্য করা কঠিন। কারণ অনেকেই দীর্ঘ ভ্রমণ করে এসেছে এবং ঢাকার গরম আবহাওয়ায় খেলার মানসিক ও শারীরিক প্রস্তুতি নেওয়াটা সহজ নয়। তবুও আমি দেখেছি, অনেকের ফুটবল বোধ দারুণ। ট্যাকটিক্যাল অ্যাওয়ারনেস ও পজিশন সেন্স ভালো।”
তবে কিছু সীমাবদ্ধতার কথাও তুলে ধরেছেন কানন। তাঁর মতে, “ফিটনেসের দিক থেকে কিছু খেলোয়াড়ের ঘাটতি দেখা গেছে। তবে সেটা স্বাভাবিক, কারণ তারা ভিন্ন জলবায়ু ও রুটিন থেকে এখানে এসেছে। তাদের কিছুটা সময় দিলে আরও ভালোভাবে মানিয়ে নিতে পারবে।”
এই ট্রায়াল আয়োজনের পেছনে রয়েছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) ও বিভিন্ন প্রবাসী সংগঠনের যৌথ প্রয়াস। উদ্দেশ্য, বিদেশে বেড়ে ওঠা ফুটবলারদের জাতীয় দলের আওতায় আনা এবং বাংলাদেশের ফুটবলে নতুন এক জোয়ার সৃষ্টি করা।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, তিন দিনব্যাপী এই বাছাই কার্যক্রমে যেসব খেলোয়াড়রা নিজেকে প্রমাণ করতে পারবেন, তাদের মধ্য থেকে বাছাইকৃত একটি দলকে গঠন করা হবে। ভবিষ্যতে এদের নিয়ে বিশেষ প্রশিক্ষণ ও প্রস্তুতি ক্যাম্প আয়োজনের পরিকল্পনাও রয়েছে।
সাকিব মাহমুদ জানান, “আমরা চাই এমন একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে, যেখানে বিদেশে বেড়ে ওঠা প্রতিভাবান তরুণরা বাংলাদেশের পতাকা গায়ে জড়ানোর সুযোগ পাবে। আমাদের বিশ্বাস, এখান থেকে ভবিষ্যতের জাতীয় দলের মূল খেলোয়াড় তৈরি হবে।”
ফুটবলের ভবিষ্যৎ শক্তি গড়ে তুলতে এই উদ্যোগ যে সময়োপযোগী এবং আশাজাগানিয়া, সেটি জানিয়েছেন উপস্থিত ফুটবল বিশ্লেষকরাও। তাদের মতে, আন্তর্জাতিক পরিবেশে খেলা এই তরুণদের অভিজ্ঞতা বাংলাদেশ দলের মান বাড়াতে সহায়ক হবে, যদি সঠিক পরিকল্পনায় তাদের ব্যবহার করা যায়।
শেষ পর্যন্ত, এই তিন দিনের ট্রায়াল শুধু ফুটবলার খোঁজার এক উদ্যোগই নয়, বরং জাতীয় ফুটবল কাঠামোয় নতুন প্রতিভা যুক্ত করার একটি ভবিষ্যতমুখী পদক্ষেপ হিসেবেই বিবেচিত হচ্ছে। এখন দেখার বিষয়, এই বাছাই থেকে কাদের ভাগ্যে জোটে লাল-সবুজ জার্সির সম্মান।
repoter