
ছবি: ছবি: সংগৃহীত
উচ্চ আদালতে জামিন আবেদন পেন্ডিং থাকায় আদালতের পরবর্তী শুনানির তারিখ নির্ধারণ, রিমান্ডে ৭ দিন জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন পুলিশের
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় গুলিতে নিহত রিকশাচালক তুহিন হত্যা মামলায় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক) সাবেক মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি ডা. সেলিনা হায়াত আইভীর রিমান্ড শুনানি পিছিয়ে গেছে।
সোমবার (৩০ জুন) দুপুরে নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাঈনুদ্দিন কাদিরের আদালতে এই শুনানি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও, উচ্চ আদালতে তার জামিন আবেদন বিচারাধীন থাকায় আদালত রিমান্ড শুনানির নতুন তারিখ আগামী ৭ জুলাই নির্ধারণ করেছেন।
মামলার তদন্ত সংস্থা পুলিশ এদিন আইভীর ৭ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে আবেদন করে। তবে শুনানি স্থগিত থাকায় সে বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। বর্তমানে কাশিমপুর মহিলা কারাগারে থাকা ডা. আইভী শুনানিতে ভার্চুয়ালি অংশ নেন।
মামলার নথি অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ২০ জুলাই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের শিমরাইল মোড় এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার মিছিলে অংশ নেওয়ার সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন রিকশাচালক তুহিন (৩৬)। তিনি মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান। ঘটনার প্রায় দুই মাস পর, ১৩ সেপ্টেম্বর নিহতের স্ত্রী আলেয়া আক্তার মীম নারায়ণগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মামলায় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীসহ মোট ৯৯ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। এদের মধ্যে ডা. আইভীকে ১১ নম্বর আসামি করা হয়েছে।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ও ভারপ্রাপ্ত পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট ওমর ফারুক নয়ন বলেন, “এই মামলায় পুলিশ আইভীর ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করেছে। কিন্তু যেহেতু তার জামিন আবেদন এখনো উচ্চ আদালতে বিচারাধীন, আদালত শুনানি পিছিয়ে দিয়েছেন। পরবর্তী শুনানি আগামী ৭ জুলাই অনুষ্ঠিত হবে।”
বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আওলাদ হোসেন জানান, “আমরা জেলা জজ আদালতে ফৌজদারি মিস মামলায় জামিন না পেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করি। এখন সেই আবেদন পেন্ডিং থাকায় আদালত রিমান্ড শুনানির নতুন তারিখ দিয়েছেন।”
অন্যদিকে, আইভীর পক্ষে থাকা আইনজীবী অ্যাডভোকেট মাহাবুবুর রহমান মাসুম দাবি করেন, “ডা. আইভী বরাবরই আওয়ামী লীগ করলেও তিনি গডফাদার রাজনীতির বিরুদ্ধে ছিলেন। শামীম ওসমানের সঙ্গে তার প্রকাশ্য বিরোধ ছিল। সেই আইভী কোনো মিছিলে গিয়ে গুলি করবেন—এটি সম্পূর্ণ কল্পনাতীত। তাকে রাজনৈতিকভাবে বিতর্কিত করতেই এই মামলায় জড়ানো হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি, উচ্চ আদালতে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে এবং ডা. আইভীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের চিত্র পরিষ্কার হবে।”
মামলাটি ঘিরে নারায়ণগঞ্জে রাজনৈতিক উত্তেজনা বিরাজ করছে। একাধিক পক্ষ একে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অংশ হিসেবে বিবেচনা করছেন। অন্যদিকে নিহত তুহিনের পরিবার দ্রুত বিচার ও প্রকৃত দোষীদের শাস্তি দাবি করে আসছে।
এ মামলার অগ্রগতি ও পরবর্তী আইনি প্রক্রিয়া এখন নির্ভর করছে উচ্চ আদালতের জামিন আবেদনের নিষ্পত্তি এবং ৭ জুলাই রিমান্ড শুনানির ওপর। আদালত তখন রিমান্ড মঞ্জুর করবেন কি না, তা নির্ধারণ হবে মামলার শুনানি ও প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে।
চলমান রাজনৈতিক পটভূমিতে মামলাটির গুরুত্ব দিন দিন বাড়ছে এবং জনসাধারণের নজর এখন আদালতের পরবর্তী সিদ্ধান্তের দিকেই।
repoter