
ছবি: ছবি: সংগৃহীত
ভুল রেজিস্ট্রেশনের ঘটনায় শিক্ষক সাময়িক বরখাস্ত, তদন্ত কমিটি গঠন; অধ্যক্ষ বললেন, সত্য উদঘাটনে কোনো আপস হবে না
উত্তরা হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজের দুই শিক্ষার্থীর এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করতে পারা ঘটনাকে ‘অন্যায়’ হিসেবে উল্লেখ করে পাশে থাকার অঙ্গীকার করেছেন প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ইভানা তালুকদার। একই সঙ্গে অভিযোগের তীর যাওয়া শিক্ষক ড. মো. আমিনুর রহমানকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে এবং গঠন করা হয়েছে তদন্ত কমিটি।
শনিবার সকাল ১১টায় উত্তরা হাই স্কুলের অডিটোরিয়ামে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে অধ্যক্ষ এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, "প্রতিষ্ঠানের সুনাম রক্ষার্থে এবং শিক্ষার্থীদের প্রতি ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে আমরা এই ঘটনাটিকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছি। কোনো অন্যায় প্রশ্রয় পাবে না।"
এর আগে শুক্রবার (২৭ জুন) বিকেলে উত্তরা ৭ নম্বর সেক্টরে অবস্থিত বিদ্যালয় প্রাঙ্গণের বাইরে দাঁড়িয়ে দুই ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী—সাজ্জাদ হোসেন ও ইয়াসির আরাফাত—সংবাদ সম্মেলন করে সহযোগিতা কামনা করেন। তাঁরা অভিযোগ করেন, কলেজ কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও অনিয়মের কারণে এসএসসি পরীক্ষার প্রবেশপত্র পাননি তাঁরা। তাদের অভিযোগ, যথাযথ প্রক্রিয়ায় ক্লাসে উপস্থিত ও ফলাফলে উত্তীর্ণ হওয়া সত্ত্বেও রেজিস্ট্রেশনের তালিকায় তাঁদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন দুই শিক্ষার্থীর অভিভাবকেরাও। তারা অভিযোগ করেন, সন্তানদের ভবিষ্যৎ ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেওয়া হয়েছে এবং এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের বিচারের দাবি জানান।
এ বিষয়ে অধ্যক্ষ ইভানা তালুকদার বলেন, "আমাদের কাছে প্রাথমিকভাবে যা জানা গেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, অভিযুক্ত শিক্ষক আমিনুর রহমান তার ক্লাসের ৮৫ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে থেকে ইয়াসির আরাফাত ও সাজ্জাদ হোসেনকে বাদ দিয়ে মাশফিকুল আলী ও মেহেদী হাসান নামে দুই শিক্ষার্থীর নাম রেজিস্ট্রেশনে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। এ বিষয়ে তাঁর কোনো সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা নেই এবং বিষয়টি সন্দেহজনক।"
তিনি আরও বলেন, "এ ধরনের কাজ প্রতিষ্ঠানকে প্রশ্নবিদ্ধ করার সামিল এবং দায়িত্বে অবহেলার পাশাপাশি আর্থিক অনিয়মের আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। এ ঘটনায় আমরা সাত সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি, যা আগামী সাত দিনের মধ্যে রিপোর্ট দেবে।"
তবে আর্থিক অনিয়ম বা ভয়ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগ নিয়ে অধ্যক্ষ বলেন, “এই মুহূর্তে আমি কোনো কিছু নিশ্চিত করে বলতে চাই না। তদন্তেই প্রকৃত তথ্য বেরিয়ে আসবে।”
প্রশ্ন উঠেছে, কেন এমন ভুল রেজিস্ট্রেশন হলো এবং সংশ্লিষ্ট শিক্ষক কী উদ্দেশ্যে এমন কাজ করলেন। অধ্যক্ষ বলেন, "যে শিক্ষক এমন দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছেন, তিনি বর্তমানে নিখোঁজ রয়েছেন। তাঁর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছে, কিন্তু কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।"
এ ঘটনায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে চরম ক্ষোভ এবং হতাশা তৈরি হয়েছে। উত্তরা হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজের অন্যান্য শিক্ষক ও প্রশাসনিক কর্মকর্তারাও সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত থেকে আশ্বাস দেন যে, কোনো শিক্ষার্থী যাতে এ ধরনের অন্যায়ের শিকার না হয়, তা নিশ্চিত করা হবে।
উল্লেখ্য, এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে না পারা শিক্ষার্থীদের জন্য এই ঘটনা একটি দৃষ্টান্তমূলক গুরুত্ব পাচ্ছে। অনেকেই বলছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দায়িত্বে অবহেলা বা স্বজনপ্রীতি যেকোনো শিক্ষার্থীর জীবনে বড় ক্ষতি ডেকে আনতে পারে।
এ মুহূর্তে পুরো ঘটনা ঘিরে উত্তরা হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজে একটি অস্থির পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তবে অধ্যক্ষ আশ্বাস দিয়েছেন, “আমরা সঠিক তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের শনাক্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো এবং ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের পাশে থাকবো—এটাই আমাদের নৈতিক ও পেশাগত দায়িত্ব।”
পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বোর্ড কর্তৃপক্ষেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে এ ঘটনা। সবাই আশা করছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সুশাসন রক্ষায় যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে এবং দোষীদের শাস্তির আওতায় আনা হবে যাতে ভবিষ্যতে এমন ঘটনা আর না ঘটে।
repoter