
ছবি: ছবি: সংগৃহীত
কমপ্লিট শাটডাউন ও কর্মবিরতির পরেও জুনের শেষ সময়ে রাজস্ব আদায়ে গতি ফিরেছে; এনবিআর চেয়ারম্যান বললেন, ‘স্বাভাবিক কর্মতৎপরতা শুরু হয়েছে’
চলমান আন্দোলন ও কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচির মধ্যেও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) গত চার দিনে রাজস্ব আদায়ে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান জানিয়েছেন, সোমবার (৩০ জুন) সকাল ১০টা পর্যন্ত এ অর্থবছরে মোট রাজস্ব আদায় হয়েছে ৩ লাখ ৬০ হাজার ৯২২ কোটি টাকা। অর্থাৎ, গত চার দিনে আদায় হয়েছে ৭ হাজার ৯২২ কোটি টাকা।
সোমবার এনবিআর ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এই তথ্য জানান। এর আগে গত বৃহস্পতিবার তিনি জানিয়েছিলেন, বুধবার পর্যন্ত রাজস্ব আদায় হয়েছিল ৩ লাখ ৫৩ হাজার কোটি টাকা। সেই হিসেব অনুযায়ী গত চার দিনের প্রবৃদ্ধি ৭ হাজার ৯২২ কোটি টাকা।
চেয়ারম্যান বলেন, “গতবারের তুলনায় রাজস্ব আদায় বেশি হবে এটা নিশ্চিত। তবে যেরকম আশাবাদী ছিলাম, বিগত কয়দিনের আন্দোলন কিছুটা প্রভাব ফেলেছে। জুন ক্লোজিংয়ের সময় সরকারি প্রকল্পের বিল ও সমন্বয়ের কাজ কিছুটা সময় নেয়। সব কিছু চূড়ান্ত হতে ২-৩ সপ্তাহ লাগবে।”
গত ঈদুল আজহার পর থেকে এনবিআরের সংস্কার দাবিতে “এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ” আন্দোলনে নামে। কর্মকর্তারা “মার্চ টু এনবিআর” ও “কমপ্লিট শাটডাউন” কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এই সময় এনবিআরের বেশ কয়েকটি শাখায় কাজ প্রায় স্থবির হয়ে পড়ে।
তবে সরকারের কঠোর অবস্থানের পর গতকাল (রোববার) রাত সাড়ে ৯টায় তেজগাঁওয়ে বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই) কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দেন সংগঠনের নেতারা। ফলে সোমবার প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হলেন এনবিআর চেয়ারম্যান।
চেয়ারম্যান জানান, “এখন আমাদের রাজস্ব রিপোর্টিং ব্যবস্থা পুরোপুরি ডিজিটাল। ম্যানুয়াল নয়, আমরা আইবাস (iBAS++) সিস্টেমে রিপোর্ট করি। কয়েকদিনের আন্দোলনে ব্যবসা-বাণিজ্য ব্যাহত হওয়ায় আদায় কিছুটা হোঁচট খেয়েছে। তবে আজও (সোমবার) আমরা আশা করছি বড় অঙ্কের অর্থ জমা হবে।”
তিনি আরও বলেন, “সরকার জুলাই মাসে ব্যয়ের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাই আমাদের রাজস্ব কর্মতৎপরতা থেমে থাকবে না। জুলাইতেও আমরা নতুনভাবে ড্রাইভ দেব এবং আদায় বাড়ানোর চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।”
কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “যা কিছু অতীতে হয়েছে, তা পেছনে ফেলে সবাইকে রাষ্ট্রীয় স্বার্থে কাজ করতে হবে। অতীতের মতো দক্ষতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে এনবিআরকে এগিয়ে নিতে হবে।”
আন্দোলন প্রত্যাহারের পর কাস্টমস হাউজ, ভ্যাট অফিস, কর কার্যালয়সহ সব শাখায় কর্মচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে জানিয়ে তিনি বলেন, “গতকাল রোববার বিকেল থেকেই সব কাস্টমস হাউজে কাজ শুরু হয়েছে। আজ (সোমবার) সকাল থেকেই সব দপ্তরে শতভাগ উপস্থিতি রয়েছে। যেহেতু আজ অর্থবছরের শেষ দিন, তাই রাজস্ব আদায়ে বড় ড্রাইভ চলছে। পাইপলাইনে থাকা রাজস্ব দ্রুত ট্রেজারিতে স্থানান্তরের চেষ্টা চলছে।”
চেয়ারম্যান আরও বলেন, “ট্যাক্স অফিসাররা জানেন কারা বছরের শেষে কর দেন, সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করছেন তারা। ব্যাংক ও দপ্তর খোলা থাকায় আজকের দিনে ভালো আদায়ের সম্ভাবনা রয়েছে।”
আন্দোলন প্রসঙ্গে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, “দেশের বৃহত্তর স্বার্থে ও ব্যবসা-বাণিজ্যের গতিশীলতা বজায় রাখতে কর্মকর্তারা আন্দোলন প্রত্যাহার করেছেন। এতে নীতিনির্ধারক ও ব্যবসায়ী মহলে স্বস্তি ফিরেছে।”
চলমান আন্দোলন ও এর প্রভাব নিয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনি জানান, “গত কয়েকদিনের কর্মবিরতির ফলে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটলেও আমরা ঘুরে দাঁড়াচ্ছি। এখন আমাদের ফোকাস রাজস্ব আদায় বাড়ানো এবং সরকারের জুলাই মাসের অর্থ চাহিদা পূরণে সহায়তা করা।”
রাজস্ব আদায়ে ফের গতি ফেরায় আশা করা হচ্ছে, জুন মাস শেষে দেশের অর্থনৈতিক সূচকগুলো কিছুটা ইতিবাচক অবস্থানে যাবে। এনবিআর কর্মকর্তারা বলেছেন, চলতি অর্থবছরের শেষ দিন এবং আগামী জুলাই মাসজুড়ে তারা নতুন করে উদ্যোগ নেবেন রাজস্ব ঘাটতি পুষিয়ে তুলতে।
সব মিলিয়ে আন্দোলনের প্রভাব কাটিয়ে এনবিআর এখন ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে। আগামীর লক্ষ্য—ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ বজায় রেখে ডিজিটাল ও কার্যকর রাজস্ব ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে জাতীয় আয় বৃদ্ধি করা।
repoter