
ছবি: ছবি: সংগৃহীত
‘নিরাপত্তার স্বার্থে বৈধ অস্ত্র রাখা স্বাভাবিক, ভুলবশত ব্যাগে ম্যাগাজিন থেকে যায়’— ফেসবুক পোস্টে ব্যাখ্যা
যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ তার ও তার পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিতের লক্ষ্যে লাইসেন্সধারী অস্ত্র রাখার বিষয়টি স্বাভাবিক ও যৌক্তিক বলে মন্তব্য করেছেন। রবিবার (২৯ জুন) রাতে নিজের ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেন, ‘নিরাপত্তার স্বার্থে আমার লাইসেন্স করা বৈধ অস্ত্র আছে। গণ-অভ্যুত্থানের নেতৃত্বের ওপর একাধিকবার যেভাবে হত্যাচেষ্টা চালানো হয়েছে, সেখানে বৈধ অস্ত্র রাখাটা একেবারেই যৌক্তিক।’
সম্প্রতি ভ্রমণের সময় তার ব্যাগে একটি ম্যাগাজিন থাকার বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এবং সংবাদমাধ্যমে যে আলোচনা শুরু হয়েছে, তা নিয়ে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করেন তিনি। আসিফ মাহমুদ জানান, মরক্কোর মারাকেশে ‘ওআইসি ইয়ুথ ক্যাপিটাল ইন্টারন্যাশনাল প্রগ্রাম’-এ অংশগ্রহণের উদ্দেশ্যে তিনি ভোর ৬টা ৫০ মিনিটের ফ্লাইটে দেশ ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। ভ্রমণের সময় প্যাকিংয়ের মধ্যে একটি ম্যাগাজিন ভুলবশত ব্যাগে থেকে যায়।
তিনি বলেন, "প্যাকিং করার সময় আমি একটি অস্ত্র ও ম্যাগাজিন রেখে এলেও, আরেকটি ম্যাগাজিন অনিচ্ছাকৃতভাবে ব্যাগেই রয়ে যায়। স্ক্যান করার সময় সেটি ধরা পড়লে আমি সঙ্গে সঙ্গে আমার প্রটোকল অফিসারের কাছে হস্তান্তর করি। এটি পুরোপুরি অনিচ্ছাকৃত ঘটনা। শুধু ম্যাগাজিন দিয়ে আমি কী করব? যদি কোনো অসৎ উদ্দেশ্য থাকত, তাহলে অস্ত্রটিও সঙ্গে রাখতাম।"
আসিফ মাহমুদ আরও জানান, এই ঘটনাকে ঘিরে অনেকে ‘চাপ দিয়ে সংবাদ সরিয়ে ফেলা হয়েছে’ বলে যে অভিযোগ তুলেছেন, তা ভিত্তিহীন ও মিথ্যা। তিনি বলেন, “ঘটনার পর আমি পুরো টিমসহ টানা ১০ ঘণ্টার ফ্লাইটে ছিলাম। ট্রানজিটে পৌঁছে অনেকক্ষণ পর যখন অনলাইনে আসি, তখনই এসব আলোচনা ও গুজব দেখতে পাই।”
তিনি আরও বলেন, “নাগরিক হিসেবে যদি আপনার বা আপনার পরিবারের নিরাপত্তা ঝুঁকি থাকে, তাহলে আপনি আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে অস্ত্রের লাইসেন্স করতে পারেন। এখানে অবৈধ কিছু নেই, বরং আইন মেনে নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা একজন সচেতন নাগরিকের দায়িত্ব।”
এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে নানা বিতর্ক শুরু হলে তার এই অবস্থান ব্যাখ্যমূলক পোস্টটি তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে ওঠে। তিনি তার পোস্টে কারো নাম উল্লেখ না করলেও ইঙ্গিত দেন, কেউ কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে ঘটনাটিকে অতিরঞ্জিত করে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করার চেষ্টা করছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, একজন সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে নিজের লাইসেন্সকৃত অস্ত্র সংরক্ষণ নিয়ে স্পষ্ট ব্যাখ্যা দিয়ে আসিফ মাহমুদ যে স্বচ্ছতা দেখিয়েছেন, তা রাজনৈতিক সচেতনতা ও জবাবদিহিতার একটি দৃষ্টান্ত। তবে একইসঙ্গে এটি আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর জন্যও একটি বার্তা— যে সকল নাগরিককে নিয়মনীতির আওতায় আনতে হলে আইন সবার জন্য সমানভাবে প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
এই ঘটনার মাধ্যমে আবারও সামনে উঠে এসেছে দেশে নাগরিক নিরাপত্তা, অস্ত্রের বৈধ ব্যবহার এবং ব্যক্তিগত সুরক্ষার ক্ষেত্রে আইনানুগ প্রস্তুতির গুরুত্ব।
সংক্ষিপ্ত এই বিভ্রান্তির মধ্যেও একজন সরকারি উপদেষ্টা হিসেবে দায়বদ্ধতার সঙ্গে বিষয়টির ব্যাখ্যা দেওয়া এবং সরাসরি সামাজিক মাধ্যমে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করা ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন অনেকেই। এখন দেখার বিষয়, এই ঘটনার প্রেক্ষিতে জনমনে আর কোনো বিভ্রান্তি তৈরি হয় কিনা, নাকি আসিফ মাহমুদের ব্যাখ্যা বিতর্কের অবসান ঘটাতে সক্ষম হয়।
repoter