
ছবি: ছবি: সংগৃহীত
মাসজুড়ে সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী, মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে ৭; স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের ঘরে থাকার পরামর্শ
চট্টগ্রামে আবারও করোনাভাইরাস সংক্রমণ বাড়ছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ১০ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। সোমবার (৩০ জুন) বিকেলে চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জনের কার্যালয় থেকে পাঠানো এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে মোট ২১৯ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে ১০ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর মাধ্যমে চলতি জুন মাসে চট্টগ্রামে মোট করোনা শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৪৫ জনে।
নতুন আক্রান্তদের মধ্যে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১ জন, ন্যাশনাল হাসপাতালে ১ জন, শেভরন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ৭ জন এবং এপিক হেলথকেয়ারে ১ জনের করোনা শনাক্ত হয়।
চলতি মাসে করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধির পাশাপাশি মৃত্যুও বেড়েছে। এ পর্যন্ত জুন মাসে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। সর্বশেষ শুক্রবার (২৭ জুন) চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সালেহা বেগম নামে ৬৪ বছর বয়সী এক নারী।
সংক্রমণের পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, আক্রান্তদের মধ্যে ৭২ জন নারী, ৭২ জন পুরুষ এবং ১ জন শিশু রয়েছে—যা জনসংখ্যাভিত্তিক আক্রান্তের সমতুল্য হারকেই নির্দেশ করে। বয়সভিত্তিক ও ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিরা বেশি আক্রান্ত হলেও সাধারণ মানুষের মধ্যেও সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, শহরের বেশ কিছু স্থানে স্থানীয় পর্যায়ে ক্লাস্টার হিসেবে সংক্রমণ বেড়েছে। বিশেষ করে হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে নিয়মিত স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ না করায় ঝুঁকি বাড়ছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, করোনা এখনো পুরোপুরি বিদায় নেয়নি এবং যেকোনো সময় এটি আবারও বড় আকারে ফিরে আসতে পারে।
চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জনের কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, সংক্রমণ রোধে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো এবং স্বাস্থ্যবিধি পালনে কড়াকড়ি আরোপের জন্য কাজ চলছে। বিশেষ করে জনসমাগম হয় এমন জায়গায় মাস্ক ব্যবহার ও স্যানিটাইজারের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করার কথা বলা হচ্ছে।
এদিকে, বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, করোনা সংক্রমণ আবারও যদি মহামারির মতো বিস্তার লাভ করে, তাহলে স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার ওপর অতিরিক্ত চাপ তৈরি হবে। হাসপাতালগুলোর আইসিইউ ও অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থাও এখন থেকেই প্রস্তুত রাখতে পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা।
করোনার নতুন এই ঢেউয়ের মধ্যেই স্বাস্থ্য বিভাগ সবাইকে সচেতন থাকার অনুরোধ জানিয়েছে। কেউ যদি সর্দি, কাশি, জ্বর বা শ্বাসকষ্টে ভোগে, তাহলে দ্রুত পরীক্ষা করিয়ে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিতে বলা হয়েছে।
চট্টগ্রামবাসীর প্রতি বিশেষভাবে মাস্ক পরা, হাত ধোয়া, ভিড় এড়িয়ে চলা এবং অসুস্থ হলে ঘরে অবস্থান করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও অফিস-আদালতগুলোকেও সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। কর্মীদের মাঝে করোনা লক্ষণ দেখা গেলে দ্রুত পরীক্ষা এবং আক্রান্ত হলে আইসোলেশনে রাখার নির্দেশনা দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
করোনার এই নতুন সংক্রমণ পরিস্থিতি আবারও স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে, মহামারি এখনো শেষ হয়নি। ভাইরাসটি এখন হয়তো কম ক্ষতিকর হয়ে উঠেছে, তবে সামান্য অসতর্কতা পরিস্থিতিকে ভয়াবহ করে তুলতে পারে।
সামগ্রিকভাবে, জুন মাসে চট্টগ্রামে করোনা পরিস্থিতি উদ্বেগজনক হয়ে উঠছে। সংক্রমণের সংখ্যা বৃদ্ধি, মৃত্যুর হার এবং জনসচেতনতার অভাব—সব মিলিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আবারও সক্রিয় পদক্ষেপ নিতে হবে। জনসাধারণকেও এই মুহূর্তে নিজেদের ও পরিবারের সুরক্ষায় সতর্ক থাকতে হবে।
repoter