
ছবি: ছবি: সংগৃহীত
ভিক্টর অরবান ইউক্রেনকে ন্যাটো ও ইইউতে অন্তর্ভুক্ত করার বিরোধিতা করে ইউরোপকে যুদ্ধক্ষেত্র হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন
হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবান এক বিস্ফোরক মন্তব্য করে বলেছেন, ইউক্রেন যদি উত্তর আটলান্টিক সামরিক জোট ন্যাটোতে যোগ দেয়, তবে সেটি রাশিয়ার সঙ্গে সরাসরি সংঘাতের দিকে নিয়ে যাবে, যা শেষ পর্যন্ত তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধে রূপ নিতে পারে। একইসঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) ইউক্রেনকে দ্রুত অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টাকে তিনি ‘পাগলামি’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
শনিবার (তারিখ উল্লেখ করা হয়নি) এক্স (সাবেক টুইটার) প্ল্যাটফর্মে পোস্ট করে অরবান বলেন, “ইউক্রেন যদি ন্যাটোতে যোগ দেয়, তবে এর মানে সরাসরি রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ। আর তার পরদিনই শুরু হবে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ।” তিনি ইইউ নেতাদের উদ্দেশ্যে বলেন, তারা যেভাবে ইউক্রেনকে ইইউতে ঢোকাতে তাড়াহুড়া করছেন, তাতে করে গোটা ইউরোপ যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হওয়ার ঝুঁকিতে পড়বে।
অরবান আরও জানান, ইউক্রেন ইইউতে যুক্ত হলে হাঙ্গেরি এবং সমগ্র ইউরোপ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তিনি বলেন, “আমি ইউরোপকে যুদ্ধক্ষেত্র হতে দেব না।”
ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ন্যাটোর বিভিন্ন সিদ্ধান্তে বরাবরই ভিন্নমত প্রকাশ করে এসেছে বুদাপেস্ট। ইউক্রেন সংকটে ইইউ ও পশ্চিমা বিশ্বের অবস্থানের ব্যাপারে হাঙ্গেরি বরাবরই সংযত মনোভাব দেখিয়েছে। অস্ত্র সরবরাহ, রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা এবং ইউক্রেনের পশ্চিমা সামরিক জোটে অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে হাঙ্গেরি শুরু থেকেই আপত্তি জানিয়ে আসছে।
হাঙ্গেরির সরকারি সম্প্রচারমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অরবান বলেন, ইউক্রেনকে ইউরোপীয় ইউনিয়নে অন্তর্ভুক্ত করলে গোটা অঞ্চল রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকটে পড়বে। তিনি দাবি করেন, ইউক্রেনের সস্তা কৃষিপণ্যের কারণে হাঙ্গেরির কৃষকরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। দেশটির বাজারে ইউক্রেনের কৃষিপণ্য ঢুকে পড়লে হাঙ্গেরির নিজস্ব কৃষি খাত ধ্বংস হয়ে যেতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
উল্লেখ্য, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ইউক্রেনকে ন্যাটোতে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে পশ্চিমা নেতাদের পক্ষ থেকে একাধিকবার আশ্বাস দেওয়া হলেও এখন পর্যন্ত ন্যাটো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো সদস্যপদ দেয়নি। তবে ইইউ সদস্যপদের বিষয়ে গত বছর ইউক্রেনকে আনুষ্ঠানিকভাবে সদস্য হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করার সিদ্ধান্ত নেয় ইইউ, যা এখনও চলছে।
ভিক্টর অরবান এই প্রক্রিয়াকে ইউরোপের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ আখ্যা দিয়ে বলেন, “এটা আমাদের কৃষি, অর্থনীতি, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা—সব কিছুর জন্য হুমকি।”
অরবান তার সরকারের অবস্থান তুলে ধরে বলেন, ইউক্রেনকে ন্যাটো ও ইইউতে তড়িঘড়ি করে অন্তর্ভুক্ত করার চেয়ে শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথ খুঁজে বের করাটাই জরুরি। ইউরোপে যুদ্ধ আরও বিস্তৃত হলে তাতে কারও লাভ হবে না, বরং সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
তিনি বলেন, “আমরা চাই একটি স্থিতিশীল ও শান্তিপূর্ণ ইউরোপ। কিন্তু এখনকার যেসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে, সেগুলো ইউরোপকে বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।”
এদিকে, ইউক্রেন ইইউ ও ন্যাটোতে যোগ দিতে আগ্রহ প্রকাশ করলেও রাশিয়া শুরু থেকেই এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। মস্কোর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ন্যাটোর সম্প্রসারণ রাশিয়ার জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। এই প্রেক্ষাপটে অরবানের মন্তব্য রাশিয়ার অবস্থানকেই যেন প্রতিধ্বনিত করছে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা।
বিশ্লেষকদের মতে, হাঙ্গেরির এই অবস্থান ইউরোপের ঐক্যে একটি ফাটল সৃষ্টি করতে পারে। ইউক্রেন ইস্যুতে এখন পর্যন্ত ইইউ ও ন্যাটোর বেশিরভাগ দেশ একমত হলেও হাঙ্গেরির বিরোধিতা আলোচনায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
ইউক্রেনকে দ্রুত অন্তর্ভুক্ত করতে গিয়ে যেসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে, সেগুলো ভবিষ্যতে ইউরোপের জন্য আরও সংকট তৈরি করতে পারে বলে মনে করছেন অনেকেই। আর এই অবস্থায় অরবানের মন্তব্য ইউক্রেন সংকটের আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে।
repoter