ঢাকা,  শুক্রবার
১৮ এপ্রিল ২০২৫ , ০৯:৫৭ মিনিট

Donik Barta

শিরোনাম:

* ইউরোপে রাজনৈতিক আশ্রয় পেতে কঠিন হবে বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য * আলোচনায় অসন্তুষ্ট কারিগরি শিক্ষার্থীরা, আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা * চীন থেকে অর্থ আনার অনিয়মে জড়িত থাকার অভিযোগে এনবিআরের দুই কর্মকর্তা বাধ্যতামূলক অবসরে * ঢাকার চারপাশে গড়ে উঠছে ব্লু নেটওয়ার্ক: পানি সম্পদ উপদেষ্টা * বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্ক নিয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা * গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি বাড়ালেও সরবরাহ সংকট ও চুরি কমেনি * দেশজুড়ে বজ্রসহ বৃষ্টির আভাস, কোথাও কোথাও শিলাবৃষ্টির সম্ভাবনা * ২১ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন, বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি নেমে এসেছে ৬ দশমিক ৮২ শতাংশে * মাত্র ৮ দিনের মাথায় জামিনে মুক্ত ‘ডন মাসুদ’, এলাকায় ফের আতঙ্কের ছায়া * প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বিএনপি প্রতিনিধি দল

বাঘাবাড়ী বন্দরে রাতের আঁধারে তেল চোরাচালানের মহাযজ্ঞ: সরকারের বছরে শত শত কোটি টাকার ক্ষতি

repoter

প্রকাশিত: ১১:০৩:৫৭অপরাহ্ন , ১৪ মার্চ ২০২৫

আপডেট: ১১:০৩:৫৭অপরাহ্ন , ১৪ মার্চ ২০২৫

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: ছবি: সংগৃহীত

সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ী বন্দরে রাতের অন্ধকারে তেল চোরাচালানের বিশাল বাজার গড়ে উঠেছে। প্রতিদিন হাজার হাজার লিটার ডিজেল ও অকটেন চুরি হয়ে যাচ্ছে তেলবাহী জাহাজ থেকে। এই চুরির সঙ্গে জড়িত জাহাজের সারেং, তেল ডিপোর কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং স্থানীয় শক্তিশালী সিন্ডিকেট। চুরি হওয়া তেল বিশেষ পাইপলাইনের মাধ্যমে ড্রামে ভরে ছোট নৌকায় করে রাতের আঁধারে পৌঁছে যাচ্ছে কালোবাজারে।

প্রতি রাতে চুরি হওয়া তেলের কারণে সরকারের রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে শত শত কোটি টাকা। এই টাকায় ফুলেফেঁপে উঠেছে একটি অপরাধী চক্র। স্থানীয় প্রশাসনের নাকের ডগায় এই লুটপাট চললেও বিগত দুই বছরে এ ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি।

রাতের অন্ধকারে তেল চুরির চিত্র:
বড়াল নদীর ওপর ব্রিজ পার হয়ে রামখেরুয়া সড়ক। এই মেঠোপথটি উন্নয়নকাজের কারণে চলাচল অযোগ্য। কিন্তু তারপরেও এই সড়ক ঘিরেই চলছে নানান অপকর্ম। অন্ধকারে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে নদীর সংযোগস্থল চরচিথুলিয়া গ্রাম। রাতে এলাকাটিতে স্তব্ধ নীরবতা। অস্পষ্ট আলোয় একটি তেলবাহী জাহাজ ঘিরে কিছু ছোট নৌকা চোখে পড়ে। নৌকাগুলো ধীরে ধীরে জাহাজের কাছে যায়। শ্রমিকরা দ্রুত কাজ করলেও তাদের মধ্যে কোনো তাড়াহুড়া নেই।

অল্পদূরে অন্য একটি নৌকায় বসে এই দৃশ্য দেখে মনে হচ্ছে শ্রমিকদের এই কাজ একেবারে স্বাভাবিক। তারা জাহাজের তেল ভর্তি ট্যাংকার থেকে পাইপে দিয়ে তেল সরিয়ে নিতে সহযোগিতা করছে। আর নৌকায় থাকা সিন্ডিকেট সদস্যরা ভরা ড্রাম নৌকায় সাজানোর কাজ করছে।

চোরাই তেলের বাজার:
অনুসন্ধানকালে জানা গেছে, বাঘাবাড়ী ডিপোতে আসা জাহাজ থেকে চুরি হওয়া তেল সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কালোবাজারে ছড়িয়ে পড়ে। এই কাজটি করা হয় কয়েকটি ধাপে। তেল চুরির পর নদীপথে অন্যত্র পাঠানো ছাড়াও স্থানীয় সিন্ডিকেট পরিচালিত গুদাম ও ডিপোগুলোতে মজুত করা হয়। এসব গুদামে একসঙ্গে হাজার হাজার লিটার তেল মজুত রাখা যায়। পরে সেগুলো পাইকারি দামে বিক্রি করা হয়।

বোরো মৌসুমে ডিজেলের চাহিদা থাকে বেশি। এজন্য এসময় তেল বেশি চুরি হয়। সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে প্রতি লিটারে ১০-১৫ শতাংশ কম দামে বিক্রি করা হয় চোরাই তেল। চক্রের একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, প্রতিদিন গড়ে বিভিন্ন জাহাজ ও ট্যাংকার থেকে ৫০ থেকে ৭০ হাজার লিটার তেল চুরি হয়। মাসে যার পরিমাণ দাঁড়ায় ১৫-২০ লাখ লিটার। বছরে ২ থেকে আড়াই কোটি লিটার। লিটারপ্রতি ২ টাকা করে লাভ হলেও চোরাই এই তেলের আনুমানিক বাজারমূল্য প্রতিদিন ২ কোটি টাকা। মাসে ৬০ কোটি এবং বছরে টাকার অঙ্কে মূল্য দাঁড়ায় ৭০০ কোটি টাকার ওপরে।

স্থানীয় প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা:
স্থানীয় প্রশাসনের নাকের ডগায় এই লুটপাট চললেও বিগত দুই বছরে এ ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। শাহজাদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আসলাম আলীর কাছে বিগত দুই বছরে চোরাই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে অভিযানের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি কোনো তথ্য দিতে পারেননি। একই সাথে সেখানে তেল চুরির অবৈধ কার্যক্রম চলে বলে কোনো অভিযোগ তার কাছে নেই বলে জানান।

বাঘাবাড়ী তেল ডিপোর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এসএম সাদেকীনের সাথে মোবাইলে কথা বলা সম্ভব হয়নি। শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুজ্জামান বলেন, বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর। উপজেলা প্রশাসনের এখানে সরাসরি হস্তক্ষেপ করার সুযোগ নেই। বিষয়টি দেখভাল করার দায়িত্ব পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের।

চোরাই তেলের ব্যবহার:
চুরি হওয়া তেল সাধারণত কৃষি এবং পরিবহন খাতে বেশি ব্যবহৃত হয়। ভেজাল থাকলে কোনো কোনো ক্ষেত্রে দাম ২০ শতাংশও কম রাখা হয়। এই তেলের কারণে সরকারি রাজস্ব ক্ষতির পাশাপাশি সাধারণ মানুষেরাও ভেজাল তেল ব্যবহারের শিকার হচ্ছেন।



বাঘাবাড়ী বন্দরে তেল চুরির এই অবৈধ কার্যক্রম বন্ধ করতে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। অন্যথায়, সরকারের রাজস্ব ক্ষতির পাশাপাশি সাধারণ মানুষেরাও ভেজাল তেল ব্যবহারের শিকার হবেন।

repoter