ঢাকা,  বৃহস্পতিবার
১২ ডিসেম্বর ২০২৪ , ০৫:৩৯ মিনিট

Donik Barta

শিরোনাম:

* এডিবির গবেষণা: জলবায়ু পরিবর্তন ও বাংলাদেশের শিশুদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি * বৈশ্বিক ক্ষুধা সূচক ২০২৪: বাংলাদেশে মাঝারি মাত্রার ক্ষুধা * দুদকে যোগ দিলেন নতুন চেয়ারম্যান মোমেন * ব্যাংকে কোটি টাকার অ্যাকাউন্ট কমেছে * আয়েবার এক যুগ পূর্তি উপলক্ষে ইউরোপ প্রবাসীদের জন্য সাত দফা দাবি জানানো হয়েছে * খাগড়াছড়িতে অবৈধ ইটভাটা চালু করতে জালিয়াতি, হাইকোর্টের আদেশ পরিবর্তন * বাংলাদেশ দখলের হুমকি: পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল নেতা বললেন, "১৫ মিনিটে বাংলাদেশ দখল করে নেবে মুসলিমরা" * সরকারের ২২ হাজার কোটি টাকার জ্বালানি তেল ক্রয়ের সিদ্ধান্ত * ইউএনও’র ‘আওয়ামী লীগ ফিরবে’ মন্তব্য নিয়ে বিতর্ক: প্রত্যাহারের নির্দেশ * জাবি শিক্ষার্থীদের বাস আটকের প্রতিবাদ: অসৌজন্যমূলক আচরণের অভিযোগে রাজধানী পরিবহনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ

ভারতীয় আগ্রাসন ও আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সাবেক পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রতিবাদ: ৬ দফা দাবি

repoter

প্রকাশিত: ০৮:৫৬:২৪অপরাহ্ন , ১১ ডিসেম্বর ২০২৪

আপডেট: ০৮:৫৬:২৪অপরাহ্ন , ১১ ডিসেম্বর ২০২৪

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার্স কল্যাণ সমিতি ভারতের আগ্রাসন এবং বাংলাদেশবিরোধী কার্যকলাপের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। সমিতি আজ বুধবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি প্রতিবাদলিপি জমা দিয়ে ভারতীয় আগ্রাসন ও আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে ৬ দফা দাবি জানিয়েছে। এর মধ্যে ভারতীয় মিডিয়া এবং সরকারের বাংলাদেশবিরোধী তৎপরতা বন্ধ করা এবং বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।

সমিতির বক্তব্যে বলা হয়, ভারত সরকারের বাংলাদেশে গণতন্ত্র হত্যার প্রচেষ্টায় এবং দেশে মাফিয়া রাজত্ব প্রতিষ্ঠার ষড়যন্ত্রে ভারতের ভূমিকা স্পষ্ট। ভারতীয় মিডিয়া বাংলাদেশ সম্পর্কে ভিত্তিহীন নেতিবাচক প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে এবং সংখ্যালঘুদের ওপর কথিত আক্রমণ নিয়ে কাল্পনিক কাহিনী তৈরি করছে। অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তারা দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় নিজেদের জীবন দিতে প্রস্তুত বলে জানায় সমিতি।

আজকের প্রতিবাদ মিছিলটি রাজারবাগ থেকে শুরু হয়ে শান্তিনগর, কাকরাইল, সেগুনবাগিচা হয়ে প্রেসক্লাবের সামনে গিয়ে শেষ হয়। মিছিল শেষে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে সমিতির নেতারা ভারতীয় আগ্রাসন এবং আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেওয়ার কথা বলেন। তাদের বক্তব্যে বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতার জন্য নানান হুমকির কথা উল্লেখ করা হয় এবং এসব মোকাবিলায় দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানানো হয়।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, ভারতের প্রভাবশালী মিডিয়া বাংলাদেশকে নিয়ে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন প্রচারণা চালাচ্ছে। এ অপপ্রচারের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা চলছে। ভারতের নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে তারা দাবি করেন, এ ধরনের তৎপরতা বন্ধ না হলে বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে সম্পর্কের আরও অবনতি ঘটবে।

ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের গোপন চুক্তি নিয়ে বক্তারা অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তারা বলেন, ভারতের সঙ্গে গোপন চুক্তিগুলো দেশের জনগণের কাছে প্রকাশ করতে হবে এবং সেই চুক্তিগুলোর বৈষম্যমূলক দিকগুলো পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে। বিদ্যুৎ, ট্রানজিটসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে সমস্ত চুক্তি হয়েছে তা বাংলাদেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে যাচ্ছে বলে তাদের দাবি।

অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে ৬ দফা দাবির প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়। তাদের দাবিগুলো হলো: অবিলম্বে ভারতকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অপপ্রচার বন্ধ করতে হবে; ভারতে বাংলাদেশ হাই কমিশন ও অন্যান্য স্থাপনার সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে; শেখ হাসিনার সব অপতৎপরতা বন্ধ করতে হবে এবং তাকে বাংলাদেশের কাছে ফেরত দিতে হবে; সীমান্তে বাংলাদেশিদের ওপর হত্যা বন্ধ করতে হবে; ভারতের সঙ্গে হওয়া গোপন চুক্তি যদি থাকে, তা প্রকাশ করতে হবে; এবং দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা উন্নত করতে হবে, যাতে বাংলাদেশেই বিশ্বমানের স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া যায়।

সমিতির পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ ভারতীয় আধিপত্যের শিকার হতে পারে না। তারা দাবি করেন, ভারতের মদদে দেশ পরিচালিত হলে তা স্বাধীনতার বিপরীত। সমিতির নেতারা বলেন, ভারত তাদের সামরিক এবং কূটনৈতিক শক্তি ব্যবহার করে বাংলাদেশের ওপর কর্তৃত্ব করতে চায়, যা দেশের সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি। তারা আরও উল্লেখ করেন যে ভারতীয় মিডিয়ায় বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর আক্রমণ নিয়ে যে মিথ্যাচার প্রচার করা হচ্ছে তা দুই দেশের জনগণের মধ্যে ভ্রান্ত ধারণা এবং উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে।

মিছিল শেষে বক্তারা ভারতীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে আরও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান। তারা বলেন, ভারতের আধিপত্যবাদী নীতির কারণে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে, যা দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। তারা দাবি করেন, ভারত তার ক্ষমতা ব্যবহার করে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করছে, যা দেশের জনগণের জন্য ক্ষতিকর। বক্তারা এ ব্যাপারে সচেতনতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেন এবং সরকারের কাছে আরও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান।

কল্যাণ সমিতির সভাপতি সাবেক ডিআইজি এম আকবর আলি খান বলেন, "আমরা এমন এক সময়ে আছি, যখন দেশের স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্ব বিপন্ন। আমরা যে বাহিনীর উত্তরসূরি, সেই বাহিনী স্বাধীনতার জন্য প্রথম প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল, এবং প্রয়োজনে আমরা আবারও প্রতিরোধ গড়ে তুলতে প্রস্তুত আছি।" তিনি আরও উল্লেখ করেন, "ভারতের নীতিগত আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আমাদের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে এবং জাতীয় স্বার্থে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।"

সাবেক এসপি মিয়া লুৎফর রহমান বলেন, "ভারত বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করছে, যা দেশের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি। তাদের এই হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে এবং বাংলাদেশ সরকারকে আরও দৃঢ়ভাবে ভারতের এই আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে হবে।"

অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তারা আরও বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য তাদের জীবনের কোনো মূল্য নেই। তারা স্মরণ করিয়ে দেন, তারা সেই বাহিনীর উত্তরসূরি, যারা রাজারবাগ পুলিশ লাইন থেকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। জাতীয় স্বার্থে তাদের কর্তব্য পালন করতে তারা আবারও প্রস্তুত বলে জানান।

সাবেক পুলিশ কর্মকর্তাদের বক্তব্যে শেখ হাসিনা সম্পর্কে বিরোধিতার বিষয়টিও উঠে আসে। তারা অভিযোগ করেন, ভারতের মদদে শেখ হাসিনা বাংলাদেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করছেন এবং দেশটির সার্বভৌমত্বকে ক্ষতিগ্রস্ত করছেন। তারা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান এবং ভারত সরকারকে এ বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন।

সংবেদনশীল বিষয়ে ভারতের স্থাপনার সুরক্ষা নিয়ে কথা বলেন সমিতির সদস্যরা। তারা দাবি করেন, কলকাতা এবং ত্রিপুরায় বাংলাদেশের উপ-হাই কমিশনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভারত সরকার ব্যর্থ হয়েছে। তারা বলেন, সেখানে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার অবমাননা করা হয়েছে, যা বাংলাদেশের জনগণকে মর্মাহত করেছে।

সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন সাবেক আইজিপি আশরাফুল হুদা, সাবেক এসপি আব্দুর রহমানসহ সমিতির অন্যান্য সদস্যরা। 

repoter