
ছবি: ছবি: সংগৃহীত
ময়মনসিংহ শহরের ফায়ার সার্ভিস রোডে অবস্থিত সুন্দর মহল, যা একসময় জাতীয় পার্টির রাজনৈতিক কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হতো, এখন রেস্তোরাঁতে পরিণত হতে যাচ্ছে। এই ভবনটি দেশের রাজনৈতিক ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অন্যতম সাক্ষী। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের স্ত্রী বেগম রওশন এরশাদের পৈতৃক সম্পত্তি এই সুন্দর মহল। কিন্তু বর্তমানে ভবনটির অবস্থা শোচনীয়। ছাত্র-জনতার হামলায় ভবনটি ভাঙচুরের শিকার হয়েছে, দেওয়ালে দেওয়ালে লেখা হয়েছে 'দালাল মহল'।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ভবনটির পুরনো রাজনৈতিক কার্যালয় এবং কেয়ারটেকারের থাকার জায়গা ভেঙে ফেলা হয়েছে। ইটগুলো এলোমেলোভাবে পড়ে আছে, দেওয়ালের পলেস্তারা খুলে ফেলা হয়েছে। ভবনের সামনে একটি কবরও রয়েছে, যেখানে বেগম বদরুন্নাহার নামে এক মহিলার নামফলক দেখা যায়।
ভবনের কেয়ারটেকার মোখলেছুর রহমান জানান, বজলুর রহমান মিন্টু নামের একজন ব্যবসায়ী ভবনটি ভাড়া নিয়েছেন এবং এখানে 'কুটুমবাড়ি রেস্টুরেন্ট' নামে একটি রেস্তোরাঁ খোলার পরিকল্পনা করছেন। মিন্টু ইতিমধ্যে ভবনটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করিয়েছেন এবং রেস্তোরাঁর কাজ শুরু করেছেন। তবে স্থানীয় কিছু লোক এই পরিকল্পনার বিরোধিতা করছেন, যদিও মিন্টু তাদের বুঝিয়ে কাজ এগিয়ে নিচ্ছেন।
জাতীয় পার্টির নেতারা এই বিষয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। দলটির কিছু নেতা বলেছেন, সুন্দর মহল থেকে জাতীয় পার্টির রাজনীতি পরিচালিত হতো এবং এটি দলের ইতিহাসের অংশ। তবে বেগম রওশন এরশাদের ভাই ভবনটি ভাড়া দিয়েছেন বলে জানা গেছে। জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আহম্মেদ বলেন, ভবনটি ১০ বছরের জন্য ভাড়া দেওয়া হয়েছে এবং মাসে ৪০ হাজার টাকা ভাড়া পরিশোধ করতে হবে।
বজলুর রহমান মিন্টু এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে তার ম্যানেজার আল আমিন নিশ্চিত করেছেন যে সুন্দর মহলে 'কুটুমবাড়ি রেস্টুরেন্ট' নামে একটি রেস্তোরাঁ খোলা হবে। এটি তাদের চতুর্থ শাখা হবে, যার অন্যান্য শাখাগুলো ঢাকা, ময়মনসিংহ সদর ও ফুলবাড়িয়ায় অবস্থিত।
স্থানীয়রা এবং রাজনৈতিক মহল এই পরিকল্পনা নিয়ে বিভক্ত। কেউ কেউ মনে করছেন, এটি ভবনটির ঐতিহ্যকে ক্ষুণ্ন করবে, আবার কেউ কেউ মনে করছেন, এটি একটি পরিত্যক্ত ভবনকে নতুন জীবন দেবে। তবে রেস্তোরাঁ চালু হওয়ার আগেই যদি কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে, তাহলে পরিকল্পনা বন্ধও হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সুন্দর মহল, যা একসময় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু ছিল, এখন নতুন পরিচয়ে মোড় নিতে চলেছে। কিন্তু এই পরিবর্তন কি ইতিহাসের সাক্ষী এই ভবনের মর্যাদা রক্ষা করবে, নাকি এর ঐতিহ্যকে ক্ষুণ্ন করবে, তা এখনও অনিশ্চিত।
repoter