ঢাকা,  বৃহস্পতিবার
৩ এপ্রিল ২০২৫ , ০৩:০১ মিনিট

Donik Barta

শিরোনাম:

* চাঁদপুরের ৪০টি গ্রামে সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদ রবিবার * প্রতিযোগী না হয়ে প্রতিপক্ষ হলে ক্ষতিই নিজেদের: পঞ্চগড়ে সারজিস আলম * জুলাই বিপ্লবের শহীদ পরিবারদের পাশে নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক * ভূমিকম্প বিধ্বস্ত মিয়ানমারে যাচ্ছে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর উদ্ধারকারী দল * শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা গেছে, সৌদিতে রবিবার ঈদ উদযাপিত হবে * “বাংলাদেশ কোরআনের উর্বর ভূমি” — পিএইচপি কোরআনের আলো প্রতিযোগিতায় ধর্ম উপদেষ্টার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা * চা শ্রমিকদের পাশে সিলেটের ডিসি — দুর্দশায় ত্রাণ নিয়ে হাজির প্রশাসন * সাত বছর পর পরিবারের সান্নিধ্যে ঈদ উদযাপন করছেন খালেদা জিয়া * মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডে ভয়াবহ ভূমিকম্পে শতাধিক মৃত্যুর আশঙ্কা * আগামীকাল রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর ২ ঘণ্টার লেনদেন

শীর্ষ নির্দেশ অমান্য করে চলছে সাদা পোশাকে পুলিশের অভিযান

repoter

প্রকাশিত: ০৮:০০:২৮পূর্বাহ্ন, ০৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

আপডেট: ০৮:০০:২৮পূর্বাহ্ন, ০৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: ছবি: সংগৃহীত

রাজনৈতিক পরিবর্তনের পরও সাদা পোশাকে পুলিশের অভিযান বন্ধ হয়নি। শীর্ষ পর্যায় থেকে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও পুলিশের একাংশ কৌশলে এই অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। বিনা ওয়ারেন্টে অভিযান চালানোসহ সাধারণ নাগরিকদের গ্রেপ্তারের ঘটনায় নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশ সাদা পোশাকে অভিযান পরিচালনা করছে বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা।

সম্প্রতি কুমিল্লায় যুবদল নেতা তৌহিদুল ইসলামকে বাড়ি থেকে তুলে নেওয়ার সময়ও পুলিশের সঙ্গে সাদা পোশাকে কয়েকজন ছিল বলে তার পরিবার অভিযোগ করেছে। ঘটনাটি দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করার পর পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করছে। এছাড়া, ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারা প্রয়োগের মাধ্যমে বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেপ্তারের ঘটনাও ঘটছে।

গত সরকারের আমলে সাধারণ জনগণের মধ্যে আতঙ্ক ছড়ানোর অন্যতম মাধ্যম ছিল সাদা পোশাকে অভিযান এবং ৫৪ ধারার অপপ্রয়োগ। ১৫ বছর ধরে এ নিয়ে আলোচনা হলেও এর কোনো প্রতিকার হয়নি। উচ্চ আদালত স্পষ্ট নির্দেশনা দিলেও বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার আমলেও পুলিশ এই প্রবণতা অব্যাহত রেখেছে। ব্যক্তির মর্যাদা ও সম্মান রক্ষার জন্য উচ্চ আদালত নির্দেশনা দিলেও বাস্তবে তা কার্যকর হচ্ছে না।

পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) দেশ রূপান্তরকে জানান, সাধারণত সিআইডি, ডিবি এবং এসবি-র মতো গোয়েন্দা সংস্থাগুলো অপরাধীদের ধরতে সাদা পোশাকে কাজ করে। তবে গ্রেপ্তারের সময় পরিচয় নিশ্চিত করা বাধ্যতামূলক। আটক ব্যক্তির কাছে পরিচয় দিতে হবে এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজির করতে হবে। কিন্তু বাস্তবে এসব নিয়মের চরম লঙ্ঘন হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, পুলিশ বাহিনীকে অবশ্যই আইন মেনে কাজ করতে হবে। সাদা পোশাকে নজরদারি করা যেতে পারে, তবে গ্রেপ্তার করতে হলে পোশাক পরে অভিযান চালানোই উত্তম।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভুক্তভোগী জানান, তার দুই স্বজনকে সম্প্রতি ঢাকার মতিঝিল ও বাড্ডা এলাকা থেকে সাদা পোশাকে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়। বিভিন্ন থানায় খোঁজ নেওয়ার পরেও সন্ধান পাওয়া যায়নি। পরে গভীর রাতে তাদের থানায় পাওয়া যায় এবং ৫৪ ধারায় আটক দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়।

এছাড়া, মানবাধিকারকর্মীরা জানান, ২০০৩ সালে হাইকোর্ট এক রায়ে পুলিশকে ৫৪ ধারার অপপ্রয়োগ বন্ধের নির্দেশ দেয়। পরে ২০১৬ সালে আপিল বিভাগও এই রায় বহাল রাখে। আদালতের রায়ে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে, নাগরিকদের হয়রানি করা যাবে না, বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেপ্তার করা যাবে না এবং রিমান্ডে নির্যাতন করা যাবে না। তবুও এসব নিয়ম মানা হচ্ছে না।

গুম কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত সরকার বিভিন্ন সংস্থার বিরুদ্ধে ১,৬৭৬টি গুমের অভিযোগ পেয়েছে। এর মধ্যে ৭৫৮টি অভিযোগ যাচাই-বাছাই করা হয়েছে এবং ৭৩ শতাংশ ভুক্তভোগী ফিরে এসেছেন। বাকি ২৭ শতাংশ এখনো নিখোঁজ।

এদিকে, গত ৬ জানুয়ারি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) পরিদর্শনকালে বলেন, সাদা পোশাকে কাউকে গ্রেপ্তার করা যাবে না। অভিযানের সময় পুলিশ সদস্যদের অবশ্যই নিজ বিভাগের লোগোযুক্ত জ্যাকেট পরতে হবে এবং পরিচয়পত্র দেখাতে হবে। কিন্তু এই নির্দেশনা মানা হচ্ছে না বলেই অভিযোগ রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, থানার পুলিশের কোনো সিভিল টিম থাকার বিধান নেই। পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতেও এমন কোনো টিমের অনুমোদন নেই। তবে ওসিরা ব্যক্তিগতভাবে কিছু সদস্যকে সিভিল টিম হিসেবে ব্যবহার করে থাকেন, যা আইনসম্মত নয়। অনেক সময় সন্দেহভাজনদের আটকের নামে অর্থ আদায়ের অভিযোগও ওঠে।

পুলিশ সদর দপ্তরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, সাদা পোশাকে অভিযান চালানোর কোনো বৈধতা নেই। যদি কোনো পুলিশ সদস্য অপকর্মে লিপ্ত হয়, তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নিরীহ নাগরিকদের হয়রানি না করার জন্য বিশেষ নজরদারি রাখা হচ্ছে।

কুমিল্লার যুবদল নেতা তৌহিদুল ইসলামের আটকের বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তর জানায়, জেলা পুলিশ দাবি করেছে, এ ঘটনায় তারা জড়িত নয়। তবে অন্য কোনো বাহিনী অভিযানে অংশ নিয়েছিল কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

রাজনৈতিক পরিবর্তনের পরও সাদা পোশাকে পুলিশের অভিযান বন্ধ হয়নি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুলিশের এই কার্যক্রম বন্ধ না হলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

repoter