
ছবি: ছবি: সংগৃহীত
ফেব্রুয়ারিতে দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৩২ শতাংশে, যা গত ২২ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। তবে এই কমতি মূল্যস্ফীতির সুফল পাচ্ছে না নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো। কারণ, মজুরি বৃদ্ধির হার মূল্যস্ফীতির তুলনায় অনেক কম। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)-এর তথ্য অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারিতে মজুরি বৃদ্ধির হার ছিল মাত্র ৮ দশমিক ১২ শতাংশ, যা জানুয়ারির তুলনায়ও কম। এর ফলে শ্রমজীবী ও চাকরিজীবীদের প্রকৃত আয় কমে গেছে, কমেছে ক্রয়ক্ষমতা।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্ট (র্যাপিড) এর মতে, ২০২২ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে বিপুলসংখ্যক মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে গেছে। আরও প্রায় এক কোটি মানুষ দরিদ্র হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মূল্যস্ফীতির তুলনায় মজুরি বৃদ্ধির হার কম থাকায় নিম্ন ও মধ্যবিত্তের ক্রয়ক্ষমতা ধারাবাহিকভাবে হ্রাস পাচ্ছে।
ইনস্টিটিউট ফর ইনক্লুসিভ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ মোস্তফা কে মুজেরী বলেন, "মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমলেও দীর্ঘদিন ধরে এটি ১০ শতাংশের কাছাকাছি রয়েছে। মজুরি বৃদ্ধির হার কমে যাওয়ায় নিম্ন ও মধ্যবিত্তের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে টিসিবির ট্রাকের পিছনে মানুষের দৌড়ানো অমানবিক। সরকারকে মানবিক উদ্যোগ নিতে হবে।"
সমাজমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে টিসিবির ট্রাকের পিছনে দৌড়াচ্ছেন অসংখ্য নারী-পুরুষ। তীব্র গরমে রোজা রেখে তারা দৌড়াচ্ছেন ন্যায্যমূল্যে কিছু পণ্য পাওয়ার আশায়। টিসিবি সারা দেশে ৪১০টি, ঢাকায় ৫০টি এবং চট্টগ্রামে ২০টি স্থানে পণ্য বিক্রি করছে। একজন ভোক্তা সর্বোচ্চ ২ লিটার ভোজ্য তেল, ২ কেজি মসুর ডাল, ১ কেজি চিনি, ২ কেজি ছোলা ও ৫০০ গ্রাম খেজুর কিনতে পারেন। বাজারমূল্যের তুলনায় এসব পণ্য কিনলে জনপ্রতি ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা সাশ্রয় হয়।
রাজধানীর মিরপুরের ৬ নম্বর কাঁচাবাজারে টিসিবির ট্রাকের অপেক্ষায় দাঁড়ানো এক মহিলা বলেন, "স্বামীর আয়ে সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। টিসিবির পণ্য কিনলে কিছু টাকা সাশ্রয় হয়, তাই এখানে দাঁড়িয়ে আছি।" টিসিবির মুখপাত্র হুমায়ূন কবীর জানান, রমজানের চাহিদা মেটাতে ট্রাকের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। আগে ২০০ ট্রাকে পণ্য বিক্রি হতো, এখন তা ৪০০ ট্রাকে উন্নীত করা হয়েছে। তবে চাহিদা মেটানো এখনও চ্যালেঞ্জ হয়ে রয়েছে।
মোস্তফা কে মুজেরী বলেন, "টিসিবির পণ্য নেওয়ার জন্য মানুষের মধ্যে যে প্রতিযোগিতা ও মারামারি হচ্ছে, তা অমানবিক। সরকারকে দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের দিকে নজর দিতে হবে। মানুষের প্রকৃত আয় বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।" তিনি আরও যোগ করেন, "ট্রাকসেল দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব নয়, মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ানোই একমাত্র সমাধান।"
repoter