ছবি: হাইকোর্ট।
খাগড়াছড়িতে অবৈধ ইটভাটা চালু করার উদ্দেশ্যে হাইকোর্টের আদেশ জালিয়াতির মাধ্যমে পাল্টে দেওয়া হয়েছে। ইটভাটা মালিকরা আদালতের প্রকৃত আদেশের পরিবর্তে এক জাল আদেশ তৈরি করেন, যাতে ইটভাটা চালু রাখতে চাওয়া হয়। আদালত ইটভাটা মালিকদের পরিবেশগত ছাড়পত্র পেতে স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়ার পরও তারা একটি জাল আদেশ তৈরি করে, যাতে ইটভাটা চালু রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। এমনকি, এই জাল আদেশে মামলার সঙ্গে সম্পর্কহীন বহিরাগত ব্যক্তিদের বাদী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয় এবং আদেশের তারিখও পাল্টানো হয়।
এই ঘটনায় হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ বুধবার (১১ ডিসেম্বর) একটি আদেশে এ জালিয়াতির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করতে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে নির্দেশ দিয়েছেন। এই ঘটনা আইনজীবীদের কাছে বিস্ময়ের কারণ হয়েছে এবং তারা এমন জালিয়াতির কঠোর শাস্তি দাবি করেছেন।
২০২২ সালের জানুয়ারিতে পরিবেশ ও মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি) খাগড়াছড়ি, বান্দরবান এবং রাঙামাটিতে অবৈধ ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধ করার জন্য হাইকোর্টে রিট আবেদন করে। ২৫ জানুয়ারি হাইকোর্ট একটি দ্বৈত বেঞ্চের মাধ্যমে এই তিন পার্বত্য জেলায় অবৈধ ইটভাটা বন্ধের নির্দেশ দেয় এবং নির্দেশনার বাস্তবায়ন সম্পর্কে অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিলের আদেশ দেয়।
আইনজীবী মনজিল মোরসেদ জানালেন, ইটভাটা মালিকরা এই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে গেলে, আদালত হাইকোর্টের রায় আংশিক সংশোধন করে তার রায় বহাল রাখে। এরপর, গত ২৬ নভেম্বর হাইকোর্টের বেঞ্চ একটি অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসনকে ৬০ দিনের মধ্যে ইটভাটা মালিকদের পরিবেশগত ছাড়পত্রের আবেদন নিস্পত্তি করতে নির্দেশ দেয়।
তবে, পরে খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসন থেকে একটি আদেশ পায়, যা নির্দেশ দিচ্ছিল যে, হাইকোর্ট গত ২ ডিসেম্বর ইটভাটার কার্যক্রম চালু রাখার জন্য আদেশ দিয়েছে। এর পর, আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বিষয়টি সন্দেহজনক মনে হলে হাইকোর্টের নজরে আনেন। আদালত নথি পর্যালোচনা করে দেখেন যে, এমন কোনো আদেশ তারা দেননি। হাইকোর্ট আদেশে ইটভাটা চালু রাখতে নির্দেশ দেননি; বরং পরিবেশ অধিদপ্তর ও স্থানীয় প্রশাসনকে আবেদন নিষ্পত্তি করতে বলা হয়েছিল।
এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী নূর মুহাম্মদ আজমী জানান, হাইকোর্টের আদেশ বিকৃত করে একটি জাল আদেশ তৈরি করা হয়েছে, যেখানে ইটভাটা চালু রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, "জালিয়াতির মাধ্যমে হাইকোর্টের আদেশ পাল্টানো হয়েছে এবং এতে মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নন এমন ব্যক্তিদের বাদী করা হয়েছে।" এই জালিয়াতির ঘটনা সঠিকভাবে অনুসন্ধান করা প্রয়োজন।
আইনজীবী সজল মল্লিকও জানান, আদেশের অনুলিপি সংগ্রহ করার পর রিটকারীরা ২ ডিসেম্বর তারিখ উল্লেখ করে আদেশ পরিবর্তন করেছে। তিনি বলেন, "এই জালিয়াতি নিয়ে কীভাবে কী ঘটেছে তা আমার ধারণা নেই, তবে বিষয়টি আদালতে জানানো হয়েছে।"
হাইকোর্টের আদেশের পর, ইটভাটা মালিকদের পরিবেশ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসনকে আবেদন নিষ্পত্তি করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু জাল আদেশে ইটভাটা চালু রাখার কথা বলা হয়েছে এবং অতিরিক্ত বাদী যোগ করা হয়েছে। এই ঘটনা আইনের প্রতি শ্রদ্ধা এবং ন্যায়বিচারের ক্ষেত্রে একটি বড় বিপর্যয়।
এই জালিয়াতির ঘটনায় বিস্মিত আইনজীবীরা মনে করেন, এমন ঘটনা কোনোভাবেই সহ্য করা উচিত নয় এবং এর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চের আদেশে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে এই জালিয়াতির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করতে।
এই ঘটনা প্রমাণ করে যে, আদালতের আদেশকে বিকৃত করে নিজেদের সুবিধা হাসিল করার চেষ্টা কখনোই সফল হতে পারে না, এবং এর বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি দেওয়া উচিত।
repoter