
ছবি: ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশে গ্যাস অনুসন্ধানের কাজ ধারাবাহিকভাবে চালিয়ে যেতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে রাশিয়া। এ লক্ষ্যে রাষ্ট্রীয় গ্যাস কোম্পানি গ্যাজপ্রম ইন্টারন্যাশনালের কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সহযোগিতা চেয়েছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার জি খোজিন। মঙ্গলবার (১১ মার্চ) রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎকালে তিনি এ অনুরোধ জানান।
রাষ্ট্রদূত খোজিন বলেন, গ্যাজপ্রম ২০১২ সাল থেকে বাংলাদেশে গ্যাস অনুসন্ধানের কাজ করছে এবং এ ক্ষেত্রে অংশীদার হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। ২০২৩ সালে গ্যাজপ্রম ভোলায় আরও গ্যাসের মজুত খুঁজে পেতে পাঁচটি নতুন কূপ চিহ্নিত করেছে। তিনি প্রধান উপদেষ্টার কাছে এই কূপগুলো খননের প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য গ্যাজপ্রমের প্রচেষ্টার কথা উল্লেখ করেন।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস গ্যাজপ্রমের এই উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেন, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় এই বিষয়ে কাজ করছে এবং ভবিষ্যতে আরও সহযোগিতার জন্য বাংলাদেশ উন্মুক্ত রয়েছে। তিনি রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথা স্মরণ করেন এবং এ সম্পর্ক আরও জোরদার করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বাণিজ্যিক সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা
সাক্ষাৎকালে রাষ্ট্রদূত খোজিন বাংলাদেশ ও রাশিয়ার মধ্যে সাধারণ ও বাণিজ্যিক সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি জানান, ২০২৪ সালে বাংলাদেশে রাশিয়ান গমের সরবরাহ সর্বকালের রেকর্ড ছাড়িয়েছে। জুলাই ২০২৪ থেকে জানুয়ারি ২০২৫ পর্যন্ত ‘জি টু জি’ চুক্তির মাধ্যমে ৬ লাখ ২৩ হাজার টন গম সরবরাহ করা হয়েছে। এছাড়া, মোট ২৩ লাখ টন রাশিয়ান গম বাংলাদেশে পৌঁছেছে, যা দেশটিকে মিসরের পর রাশিয়ান গমের দ্বিতীয় বৃহত্তম ভোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
রাষ্ট্রদূত আরও জানান, বাংলাদেশের কৃষি খাতকে সহায়তা করতে রাশিয়া ৩০ হাজার টন এমওপি সার সরবরাহের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এটি দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বের নিদর্শন হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি।
কর্মসংস্থান ও ভিসা ইস্যুতে উন্নতি
রাশিয়ায় বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে বলেও রাষ্ট্রদূত খোজিন জানান। তিনি বলেন, কৃষি ও জাহাজ নির্মাণ খাতে রাশিয়ায় বাংলাদেশিদের চাকরির সুযোগ বেড়েছে। এর ফলে রাশিয়ায় বাংলাদেশিদের ভিসা ইস্যুর সংখ্যাও উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ মাসে ইস্যু করা ভিসার সংখ্যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় চারগুণ বেড়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
মুক্তিযুদ্ধে রাশিয়ার ভূমিকা স্মরণ
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও তার পরবর্তী সময়ে রাশিয়ার অবদানের কথা স্মরণ করেন। তিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে রাশিয়ার সমর্থন এবং যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে দেশ পুনর্গঠনে তাদের সহায়তার কথা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, রাশিয়া সবসময় বাংলাদেশের পাশে থেকেছে এবং এই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।
ভবিষ্যতের সম্ভাবনা
রাশিয়া ও বাংলাদেশের মধ্যে বর্তমান সহযোগিতা আরও গভীর ও বিস্তৃত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন রাষ্ট্রদূত খোজিন। তিনি বলেন, গ্যাস অনুসন্ধান, কৃষি, বাণিজ্য ও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা আরও জোরদার হবে। প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসও এই সহযোগিতার ধারাবাহিকতা বজায় রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
সাক্ষাতের শেষে দুই পক্ষই বাংলাদেশ ও রাশিয়ার মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় করতে সম্মত হন এবং ভবিষ্যতে নতুন নতুন ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ানোর আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
repoter