
ছবি: ছবি: সংগৃহীত
কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের দানসিন্দুক খুলে পাওয়া গেছে নতুন রেকর্ড পরিমাণ অর্থ। শনিবার সকালে মসজিদের ১১টি দানসিন্দুক খোলার পর দীর্ঘ গণনার মাধ্যমে সন্ধান মেলে ৯ কোটি ১৭ লাখ ৮০ হাজার ৬৮৭ টাকার। সকাল ৭টা থেকে শুরু হয়ে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলে এই গণনা কার্যক্রম।
এই নতুন দান যুক্ত হওয়ার পর মসজিদে মোট দানকৃত অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮৯ কোটি ৯৩ লাখ ৫৪ হাজার ২৬৩ টাকা, যা বর্তমানে স্থানীয় একটি ব্যাংকে সংরক্ষিত আছে। কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মিজাবে রহমত গণনার পর সাংবাদিকদের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
এদিন চার মাস ১১ দিন পর দানসিন্দুকগুলো খোলা হয়। এরপর মসজিদের দ্বিতীয় তলার মেঝেতে সব অর্থ ঢেলে গণনা শুরু করা হয়। পূর্বে ব্যাংকে জমা ছিল ৮০ কোটি ৭৫ লাখ ৭৩ হাজার ৫৭৬ টাকা। এবারের গণনায় সিন্দুক থেকে বেরিয়ে আসে বিশাল অঙ্কের টাকা, যা ছিল ২৮টি বস্তাভর্তি।
গণনা কার্যক্রমে অংশ নেন ২৪৭ শিক্ষার্থী। তাদের সহায়তায় ছিলেন জেলা প্রশাসনের ২৪ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, ১০ জন শিক্ষক, ১৪ জন সেনা সদস্য, ৩০ জন পুলিশ সদস্য, ১০ জন আনসার এবং ৮০ জন ব্যাংক কর্মকর্তা ও কর্মচারী।
প্রসঙ্গত, সাধারণত তিন মাস পরপর এই সিন্দুকগুলো খোলা হয়। তবে এবারের ব্যবধান ছিল দীর্ঘতর, প্রায় চার মাসের বেশি সময়। স্থানীয়দের বিশ্বাস অনুযায়ী, এই মসজিদে দান করলে মনোবাসনা পূর্ণ হয়। সেই কারণে শুধু মুসলমান নয়, অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরাও এখানে দান করতে আসেন।
পাগলা মসজিদে শুধু নগদ টাকা নয়, সঙ্গে দান করা হয় স্বর্ণ ও রুপার অলঙ্কার, বিদেশি মুদ্রা, গবাদিপশু, হাঁস-মুরগি, ফলমূল, মোমবাতি ও ধর্মীয় বই। সারা দেশ থেকে লোকজন এই মসজিদে দান করতে আসে।
সিন্দুক খোলার সময় জেলা প্রশাসক ও মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ফৌজিয়া খান, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী, সেনা, পুলিশ ও আনসার সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন এবং পুরো সময়জুড়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন।
জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান বলেন, দানসিন্দুক থেকে সংগৃহীত অর্থ স্থানীয় ব্যাংকে জমা রাখা হয় এবং সেখান থেকে প্রাপ্ত লভ্যাংশ বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় কাজে ব্যয় করা হয়। বিশেষ করে মসজিদ ও মাদ্রাসার উন্নয়ন এবং দরিদ্র ও জটিল রোগে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়।
তিনি আরও জানান, মসজিদকে ঘিরে একটি আধুনিক ইসলামিক কমপ্লেক্স নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, যার সম্ভাব্য ব্যয় ১১৫ থেকে ১২০ কোটি টাকা। এই কমপ্লেক্সে একসঙ্গে ৩০ হাজারের বেশি মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারবে। থাকবে একটি ইসলামিক গবেষণা কেন্দ্র ও আধুনিক গাড়ি পার্কিং ব্যবস্থা।
এছাড়া তিনি জানান, গত ৩০ বছর ধরে এই মসজিদের খাজনা ও ভূমি কর প্রদান করা হয়নি। গত মাসে তা পরিশোধ করা হয়েছে। পাশাপাশি মসজিদের নামে জায়গার নামজারি প্রক্রিয়াও সম্পন্ন করা হয়েছে। তবে এখনো কিছু জমি ব্যক্তি মালিকানাধীন রয়েছে, যেগুলো ইসলামিক কমপ্লেক্স নির্মাণের জন্য প্রয়োজন। এ বিষয়ে ওয়াকফ প্রশাসনের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে এবং অনুমোদন পেলে প্রয়োজনীয় জমি কিনে কমপ্লেক্স নির্মাণ শুরু করা হবে।
এভাবেই পাগলা মসজিদ শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে নয়, সমাজের কল্যাণে অবদান রাখা একটি ঐতিহাসিক ও মানবিক স্থানে পরিণত হয়েছে।
repoter