
ছবি: ছবি: সংগৃহীত
পিলখানা ট্র্যাজেডিকে ঘিরে আলোচিত বিডিআর হত্যাকাণ্ড মামলায় সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর (অব.) জাহিদি আহসান হাবিব আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন যে, এই ঘটনার পেছনে রাজনৈতিক নেতৃত্বও জড়িত ছিল। তার সাক্ষ্যে উঠে এসেছে, সাবেক মেয়র ফজলে নূর তাপসের নেতৃত্বে একটি মিটিং হয়, যেখানে আরও উপস্থিত ছিলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন, আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানক, মির্জা আজম ও মাহবুব আরা গিনি। এই সাক্ষ্যের তথ্য নিশ্চিত করেছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বোরহান উদ্দিন।
বৃহস্পতিবার (৮ মে) ঢাকার একটি আদালতে বিডিআর হত্যাকাণ্ডের মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী। তিনি জানান, ওই সেনা কর্মকর্তা ঘটনার দিনের বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন।
সাক্ষ্য অনুযায়ী, ঘটনার দিন সকালে দরবার হলে দক্ষিণ দিক থেকে দুই সিপাহি মইন ও কাজল অস্ত্র হাতে প্রবেশ করেন। মইন গুলি করতে চাইলে ব্রিগেডিয়ার বারি তাকে থামাতে চেষ্টা করেন, কিন্তু কাজল হল থেকে বের হয়ে ফাঁকা গুলি ছোঁড়ে। এরপর দরবার হলের ভেতরে থাকা সৈনিকরা হুংকার দিয়ে বাইরে চলে যায় এবং বাইরে ব্যাপক গোলাগুলি ও বিস্ফোরণের ঘটনা শুরু হয়।
মেজর (অব.) জাহিদি জানান, তারা ঘটনাস্থলে আটকে পড়েন এবং পরিস্থিতি থেকে মুক্তির জন্য মোবাইল ফোনে সাহায্যের জন্য যোগাযোগের চেষ্টা করেন। তিনি বলেন, “আমি মেজর জেনারেল তারেক আহমেদ সিদ্দিকিকে বার্তা পাঠাই, পরে কর্নেল শাকিল আহমেদকে তারেকের সঙ্গে কথা বলতে বলি, কিন্তু ওই প্রান্ত থেকে ফোন কেটে দেওয়া হয়। এর মধ্যেই সৈনিকেরা ঘিরে ফেলে আমাদের এবং গুলি-বিস্ফোরণ আরও বাড়তে থাকে। আমরা পিছু হটে স্টেজের পেছনে আশ্রয় নিই।”
তিনি আরও বলেন, “ডিজি দরবার হলের মাইক থেকে মেজর নূরুল ইসলামকে সৈনিকদের শান্ত করতে বলেন। আমি মেজর মইনকে ফোন করে হাসিনার হাউসগার্ড হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিই। এরপর আমি নিজে গিয়ে শাকিলকে হাসিনার সঙ্গে কথা বলতে দেখি। শাকিল বলছিলেন, কিছু সৈনিক সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা করছে।”
সাক্ষ্যে উল্লেখ করা হয়, কিছুক্ষণ পর ১০-১২ জন জওয়ান দরবার হলে প্রবেশ করে গুলি চালাতে থাকে। পর্দার আড়ালে থাকা অফিসাররা পর্দা সরিয়ে তাদের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ কথাবার্তা বলার চেষ্টা করেন। একজন সৈনিক পরিচয় দিয়ে জানান, তিনি লাট্টু খানের ব্যাচমেট এবং ওই সেনা কর্মকর্তাকে দরবার হল থেকে টেনে নিয়ে যান। পরে দেখা যায়, গাছের নিচে সৈনিকেরা অস্ত্র ও গ্রেনেড নিয়ে বসে রয়েছে। তখন তারা আক্রমণ করে এবং রড দিয়ে মারধর করে।
এই সময় সুবেদার নূরুল ইসলাম সামনের দিকে এসে বাঁচানোর চেষ্টা করলে তিনি গুরুতর আহত হন। তাকে পেট ফুটো করে ফেলা হয়। এরপর আহত জাহিদিকে টেনে কোয়ার্টারের দোতলায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তিনি গোফরান মল্লিক নামে এক ব্যক্তির ঘরে আশ্রয় নেন এবং তাকে অস্ত্রসহ দেখেন।
সাক্ষ্যে আরও বলা হয়, বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যায় পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলে সৈনিকেরা আবারও তার প্রতি সম্মান দেখিয়ে ‘স্যার’ বলে সম্বোধন করে এবং রাইফেল স্কয়ারে একটি বৈঠকের কথা জানায়। তিনি জানান, বিডিআর সদস্যদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়, যেটি তৎকালীন সংসদ সদস্য ফজলে নূর তাপসের নেতৃত্বে হয়। সেখানে উপস্থিত নেতারা বলেন, সেনাবাহিনী পিলখানা থেকে সরে যাবে এবং অনির্দিষ্ট কালের জন্য তাপস বিডিআরের দায়িত্ব পালন করবেন। এ মিটিংয়ে সাহারা খাতুন, জাহাঙ্গীর কবির নানক, মির্জা আজম ও মাহবুব আরা গিনিও উপস্থিত ছিলেন বলে দাবি করেন তিনি।
এই সাক্ষ্য বিডিআর হত্যাকাণ্ডের মামলায় রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নিয়ে নতুন আলোচনার সৃষ্টি করেছে। তবে এসব অভিযোগের সত্যতা নিয়ে বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত আসার আগ পর্যন্ত বিষয়টি যাচাইযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হবে। আদালতে মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণ এখনও চলমান রয়েছে।
repoter