
ছবি: -সংগৃহীত ছবি
ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক নিয়ে কড়া অবস্থান নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিক সতর্ক করেছেন, শুল্ক না কমালে ভারতের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে বড় ভোক্তা বাজারে ব্যবসা করা কঠিন হয়ে পড়বে। তিনি অভিযোগ করেছেন, ভারত যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য বিক্রি করছে ঠিকই, কিন্তু নিজেদের বাজার মার্কিন পণ্যের জন্য বন্ধ করে রেখেছে।
শনিবার এক সাক্ষাৎকারে লুটনিককে প্রশ্ন করা হয়, ভারত, কানাডা কিংবা ব্রাজিলের মতো ঘনিষ্ঠ মিত্রদের ওপর শুল্ক আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র কি সম্পর্কের ক্ষতি করছে কি না। জবাবে তিনি বলেন, সম্পর্ক আসলে একমুখী হয়ে গেছে। “ওরা আমাদের কাছে বিক্রি করছে, অথচ আমাদের কোনো সুযোগ দিচ্ছে না। নিজেদের অর্থনীতি আমাদের জন্য বন্ধ রেখেছে, অথচ আমাদের বাজার তাদের জন্য পুরোপুরি খোলা।”
তিনি উদাহরণ টেনে বলেন, ভারত প্রায়ই ১৪০ কোটি মানুষের বিশাল জনসংখ্যার কথা বলে, কিন্তু এই বিপুল জনগোষ্ঠী এক বুশেল মার্কিন ভুট্টাও কেনে না। লুটনিকের ভাষায়, “এটা কি অদ্ভুত নয়? তারা সবকিছু বিক্রি করছে, অথচ আমাদের ভুট্টার মতো একটি সাধারণ কৃষিপণ্য কিনতেও রাজি নয়। প্রতিটি জিনিসের ওপর শুল্ক বসিয়েছে।”
মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রী আরও জানান, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অবস্থান একেবারেই পরিষ্কার। তিনি বলেছেন, পারস্পরিক সমান আচরণ করতে হবে। শুল্ক কমাতে হবে, নইলে পাল্টা শুল্ক আরোপ চলতে থাকবে। “বছরের পর বছর ধরে যে অন্যায্য বাণিজ্যিক আচরণ চলছে, সেটি আর চলবে না। ট্রাম্পের মডেল সহজ—আমাদের সঙ্গে ন্যায্য আচরণ করো, নইলে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ভোক্তা দেশের সঙ্গে ব্যবসা করা কঠিন হয়ে পড়বে।”
লুটনিকের বক্তব্যে আরও উঠে আসে, ভারত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বাড়ানোর দাবি করলেও বাস্তবে বাধা তৈরি করছে শুল্ক আরোপের মাধ্যমে। তিনি দাবি করেন, ভারত তাদের স্বার্থে মার্কিন বাজারকে কাজে লাগাচ্ছে, অথচ প্রতিদানে কোনো সুযোগ তৈরি করছে না।
এ প্রসঙ্গে তিনি স্পষ্ট করে বলেন, “ভারত আমাদের বাজারকে ব্যবহার করছে নিজেদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য। কিন্তু যখন আমাদের পণ্যের কথা আসে, তখন তারা শুল্কের দেয়াল তোলে। এই দ্বিমুখী নীতির ইতি ঘটাতে হবে।”
ট্রাম্প প্রশাসন ইতোমধ্যেই ভারতের বিরুদ্ধে বেশ কিছু শুল্ক আরোপ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে ৫০ শতাংশ আমদানি শুল্ক, পাশাপাশি রাশিয়ার তেল কেনার জন্য দিল্লির ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক। যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ, রাশিয়ার কাছ থেকে ডিসকাউন্টে তেল কিনে ভারত পরোক্ষভাবে ইউক্রেন যুদ্ধকে সহায়তা করছে।
বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের এই সতর্কবার্তা ভারত-আমেরিকা বাণিজ্য সম্পর্ককে আরও চাপের মুখে ফেলতে পারে। বিশেষ করে কৃষিপণ্য আমদানির ক্ষেত্রে ভারতের কঠোর অবস্থান এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া দুই দেশের অর্থনৈতিক কূটনীতিতে নতুন জটিলতা তৈরি করছে।
তবে ভারতীয় দিক থেকে এখনো এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। অতীতে নয়াদিল্লি জানিয়েছে, শুল্কনীতি দেশীয় কৃষক ও শিল্পকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্যই গ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের হুঁশিয়ারি ইঙ্গিত দিচ্ছে, এই নীতি পরিবর্তন না করলে ভারতের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বিশাল বাজারে টিকে থাকা আরও কঠিন হয়ে পড়বে।
repoter