ছবি: রাজশাহীর পবা উপজেলার খড়খড়ি এলাকায় স্থানীয় প্রার্থী চেয়ে মহাসড়কে শুয়ে অবরোধে অংশ নেয় বিএনপির একাংশের নেতা–কর্মীরা।
বিএনপির ঘোষিত প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পর থেকেই দলজুড়ে তীব্র অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। দেশের ৪০টির বেশি আসনে মনোনয়ন নিয়ে ক্ষোভ, বিক্ষোভ, সড়ক অবরোধ, মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি চলছে। অনেক জায়গায় মনোনয়নবঞ্চিত নেতারা নিজেদের সমর্থকদের নিয়ে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন, যা দলের স্থানীয় ঐক্যকে নড়বড়ে করে তুলেছে।
দলের বিভিন্ন পর্যায় থেকে জানা যায়, একাধিক জেলায় বঞ্চিত নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার প্রস্তুতিও নিচ্ছেন। এতে বিএনপির ভোটব্যাংক ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ঢাকায় ডেকে ধারাবাহিক বৈঠক করছেন। প্রয়োজনে কিছু আসনে প্রার্থী পুনর্বিবেচনার ইঙ্গিতও পাওয়া গেছে।
কয়েকটি আলোচিত আসন
নাটোর-১ আসনে ফারজানা শারমিনকে প্রাথমিক প্রার্থী ঘোষণার পরেই তাইফুল ইসলাম টিপু ও ইয়াছির আরশাদ রাজন বিক্ষোভ করেন। বিষয়টি সামাল দিতে তাঁদের গুলশানে ডেকে কথা বলেছেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
এ ছাড়া জয়পুরহাট, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, কুমিল্লা ও ময়মনসিংহের একাধিক আসনে বঞ্চিতরা দলের কাছে পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছেন। অনেকে নিরপেক্ষ জরিপ চালানোর অনুরোধও করেছেন।
অভিনব প্রতিবাদ
ফেনী-২ আসনে ছয়জন মনোনয়নপ্রত্যাশীর একজন আলাল উদ্দিন ধানক্ষেতে দাঁড়িয়ে ক্রিকেটারের স্টাইলে “রিভিউ” চেয়ে ছবি পোস্ট করলে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। পরে ওই আসনের কয়েকজন নেতা লিখিত আপিলও করেছেন।
স্থগিত হওয়া আসন ও জটিলতা
মাদারীপুর-১ আসনে ঘোষিত প্রার্থী কামাল জামান মোল্লাকে ঘিরে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়। পরে তাঁর মনোনয়ন স্থগিত করা হলে আসনটি নিয়ে নতুন সংকট তৈরি হয়। লাভলু সিদ্দিকী ও কামাল জামানের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতারা এখনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেননি।
বিক্ষোভ, অবরোধ ও সামাজিক মাধ্যমে উত্তাপ
ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, কুষ্টিয়া, রাজশাহী, পাবনা, সুনামগঞ্জ, সিলেট, চাঁদপুর, নওগাঁ, দিনাজপুরসহ বহু জেলায় একইভাবে বিক্ষোভ চলছে। কোথাও মশালমিছিল, কোথাও আবার নেতারা কাফনের কাপড় পরে প্রতীকী প্রতিবাদ করেছেন।
দিনাজপুর-২ ও নোয়াখালী-৫ আসনে বিক্ষুব্ধ কর্মীরা কাফনের কাপড় পরে মিছিল করেন। চট্টগ্রাম-৪ আসনে আসলাম চৌধুরীর সমর্থকদের অবরোধের কারণে মহাসড়কে চার ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে।
দলের অবস্থান
স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, বড় দলে aspirant–দের মধ্যে প্রতিযোগিতা স্বাভাবিক। তবে চার–পাঁচটির বেশি আসনে বড় সমস্যা হবে না বলে আশা করছেন।
মহাসচিব ফখরুল জানিয়েছেন, যেসব আসনে দুই-তিনজন করে যোগ্য নেতা ছিলেন, সেখানে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। এ কারণে প্রত্যেককে ডেকে আলোচনা চলছে।
তবে দলীয় সূত্র জানায়, কিছু আসনে “প্রভাবশালী গোষ্ঠীর পছন্দ” বিবেচনায় প্রার্থী দেওয়ায়基层 নেতাদের মধ্যে ক্ষোভ বেড়েছে। কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব আশঙ্কা করছে—বিক্ষোভ প্রশমিত না হলে বহু আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী দাঁড়াতে পারেন, যা বিএনপির ভোটে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
repoter

