ঢাকা,  রবিবার
১৯ অক্টোবর ২০২৫ , ০৪:৪৯ মিনিট

Donik Barta

শিরোনাম:

* চার সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত বহাল * ঢাকার বাতাস আজও অস্বাস্থ্যকর পর্যায়ে * ট্রাম্পের আমন্ত্রণে নৈশভোজে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের উপস্থিতি * মালয়েশিয়ায় গ্রেফতার বাংলাদেশিদের জঙ্গিবাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা নেই: এটিইউ প্রধান * হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করবেন শেহবাজ শরিফ * চাকসু নির্বাচনে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা ও ব্যালট নম্বর প্রকাশ * মানুষের আস্থা অর্জনই বিচার বিভাগের প্রধান লক্ষ্য : প্রধান বিচারপতি * শাপলা প্রতীকের বিষয়ে ব্যাখ্যা দেবে না নির্বাচন কমিশন: সিইসি * বাংলাদেশ-ইতালি বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণে বৈঠক * ডেঙ্গুতে আরও ৫ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৬৬৮ জন

‘সুইস ব্যাংকে অর্থপাচার ফ্যাসিস্ট আমলেরই প্রমাণ’ — মির্জা ফখরুল

repoter

প্রকাশিত: ০৬:২২:০৫অপরাহ্ন , ২১ জুন ২০২৫

আপডেট: ০৬:২২:০৫অপরাহ্ন , ২১ জুন ২০২৫

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: ছবি: সংগৃহীত

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রের সব স্তম্ভ ধ্বংস করেছে, অন্তর্বর্তী সরকার সেই ধ্বংসস্তূপে পুনর্গঠনের কাজ শুরু করেছে’

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সুইস ব্যাংকে বিপুল অর্থ জমা থাকার খবর জাতিকে হতাশ করেছে। তিনি বলেন, এই অর্থ দেশের সম্পদ, যা ফ্যাসিস্ট শাসনামলে পাচার হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়, কী পরিমাণ লুটপাট ও দুর্নীতির মাধ্যমে দেশের অর্থসম্পদ বিদেশে পাচার করা হয়েছে।

শনিবার (২১ জুন) বিকেলে আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “আজকের একটি খবর পড়ে মনটা খারাপ হয়ে গেল। সুইস ব্যাংকে অনেক টাকা জমা হয়েছে। আমি জানি না এই টাকা কার, কখন বা কীভাবে গেল, তবে এটা নিশ্চিত—এই টাকা আমাদের নয়। যারা লুটপাট করেছে, তারা দেশের সম্পদ লুটে নিয়ে বিদেশে পাচার করেছে।”

মির্জা ফখরুল বলেন, এই অর্থপাচার দেশের ইতিহাসে এক কালো অধ্যায়। তিনি এর জন্য ফ্যাসিবাদী সরকারের দায় নির্দ্বিধায় তুলে ধরে বলেন, “যারা দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতা দখলে রেখে দেশ চালিয়েছে, তারা রাষ্ট্রের সমস্ত প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দিয়েছে। আমলাতন্ত্র, নির্বাচনব্যবস্থা, বিচারব্যবস্থা সবকিছুতেই তারা হস্তক্ষেপ করেছে, নিয়ন্ত্রণ করেছে।” 

তিনি বলেন, “গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ সরকার দেশের প্রতিটি স্তম্ভ ধ্বংস করে দিয়েছে। তারা প্রশাসনকে দলীয়করণ করেছে, জনগণের অধিকার হরণ করেছে, বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে পদদলিত করেছে। আজ রাষ্ট্রের প্রতিটি খাত ধ্বংসপ্রাপ্ত। দেশের অর্থনীতি, সমাজব্যবস্থা, আইনশৃঙ্খলা ও রাজনৈতিক কাঠামো সবই সংকটে।”

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে যারা চিন্তিত, যারা দেশকে ভালোবাসে, তাদের জন্য এই খবর অত্যন্ত দুঃখজনক। “আমরা দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছি—দেশে গণতন্ত্র নেই, জনগণের কোনো অধিকার নেই। এই লুটপাট আর দমন-পীড়নের সংস্কৃতিই এখন শাসনব্যবস্থার নিয়মে পরিণত হয়েছে।”

তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব হলো—দেশের ধ্বংসপ্রাপ্ত কাঠামো পুনর্গঠন করা। এই সরকার সেই উদ্যোগই নিয়েছে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। “আমরা দেখেছি, অন্তর্বর্তী সরকার বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের চেষ্টা করছে। তারা এমন এক জটিল রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দায়িত্ব নিয়েছে, যেখানে আস্থা ফিরিয়ে আনাটাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।”

সম্প্রতি আলোচিত ড. ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যে বৈঠক প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, “গত ১০ মাসে নানা ঘটনাপ্রবাহে আমরা অনেকটাই সন্দিহান হয়ে পড়েছিলাম। কিন্তু ইউনূস-তারেক বৈঠকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় আমরা আশাবাদী হতে শুরু করেছি। এটি নিঃসন্দেহে একটি ইতিবাচক রাজনৈতিক বার্তা দিয়েছে।”

তিনি বলেন, “এই আলোচনার মাধ্যমে একটি স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পথ তৈরি হবে বলে আমরা আশা করছি। কারণ, জনগণ এখন পরিবর্তন চায়। তারা আর অতীতের ভুল ও প্রতারণার মধ্যে ফিরে যেতে চায় না। নতুন নেতৃত্ব, নতুন কাঠামো ও নতুন চিন্তাধারায় দেশকে গড়ে তোলার জন্য এখনই সময়।”

আন্দোলন ও সংস্কার প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, “বিগত আন্দোলনে আমরা যেসব দাবি উত্থাপন করেছি, সেগুলোর বেশিরভাগই যৌক্তিক ও জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট। এখন অন্তর্বর্তী সরকার যদি এই দাবিগুলোর ভিত্তিতে কাজ শুরু করে, তবে আমরা বিশ্বাস করি—জনগণের প্রত্যাশা পূরণ হবে।”

তিনি আরও জানান, সংস্কারের সব প্রস্তাবে একমত না হলেও বেশিরভাগ বিষয়ে ঐক্যমত্য তৈরি হয়েছে। যেসব বিষয় এখনও বাকি রয়েছে, তা পরবর্তী জাতীয় সংসদে বাস্তবায়নের জন্য উপযুক্ত উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আমরা চাই একটি গণতান্ত্রিক, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক শাসনব্যবস্থা। যেখানে জনগণ হবে সর্বোচ্চ ক্ষমতার উৎস। একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সেই অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।”

তিনি বলেন, “দেশ আজ চরম এক সংকটের মধ্যে রয়েছে। একদিকে অর্থনৈতিক দুরবস্থা, অন্যদিকে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা। এই সময় প্রয়োজন একটি সর্বজনগ্রাহ্য রাজনৈতিক ঐক্য, যে ঐক্য জাতিকে সামনে এগিয়ে নিতে পারবে। অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব হবে সেই ঐক্যের ভিত্তি তৈরি করা।”

সংসদের ভবিষ্যৎ রূপ এবং রাষ্ট্রীয় কাঠামোর সংস্কার নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে মির্জা ফখরুল বলেন, “আমরা একটি অংশগ্রহণমূলক, স্বাধীন ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে একটি বৈধ সরকার প্রতিষ্ঠা দেখতে চাই। সেই সরকারই হবে সংস্কার বাস্তবায়নের প্রধান চালিকা শক্তি। জনগণ চায়, তাদের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেয়া হোক। আমরা সেই আন্দোলনেরই ধারক ও বাহক।”

তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশ আজ এক চরম সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। একদিকে গত ১৫ বছরের দুঃশাসনের ভার, অন্যদিকে নতুন সূচনার সম্ভাবনা। এই অবস্থায় আমরা চাই সবাই একসাথে কাজ করুক, যেন রাষ্ট্র ও সমাজকে নতুনভাবে গড়ে তোলা যায়।”

বক্তব্যের এক পর্যায়ে তিনি বলেন, “প্রয়োজন হলে আমরা আবার আন্দোলনে যাব। তবে আমাদের লক্ষ্য সহিংসতা নয়, পরিবর্তনের জন্য শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মসূচি। আমরা বিশ্বাস করি, মানুষই পরিবর্তন ঘটাতে পারে। আর সেই পরিবর্তনের পথ এখন খুলতে শুরু করেছে।”

সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য, দলীয় বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দ এবং পেশাজীবী ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। বক্তারা সবাই একমত পোষণ করেন যে, দেশের বর্তমান পরিস্থিতি আশু সমাধান দাবি করে এবং সেই সমাধানের কেন্দ্রবিন্দু হবে একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন। 

repoter