
ছবি: -সংগৃহীত ছবি
কাঠমান্ডুতে সরকার পতনের পর রাজধানী এখন কার্যত শাসকহীন অবস্থায় পৌঁছেছে। নাগরিক ও সাংবাদিকদের মতে, পরিস্থিতি এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে যা অনেককেই বিস্মিত ও হতবাক করেছে। সংসদ ভবনে আগুনের ধোঁয়া উঠতে দেখা গেছে, যা সাধারণ মানুষ এবং নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের জন্য উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরি করেছে। সম্প্রতি কাঠমান্ডুর সাংবাদিক রাম্যতা লিম্বু আল জাজিরাকে জানান, এখন যেন কেউই দায়িত্বে নেই, রাজধানী এক ধরনের বিশৃঙ্খলার মধ্যে রয়েছে।
শহরের মেয়র বালেন্দ্র শাহ বিক্ষোভকারীদের শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। ফেসবুকে প্রকাশিত এক পোস্টে তিনি উল্লেখ করেন, সরকারের পদত্যাগের পর সহিংসতা বন্ধ করা অত্যন্ত জরুরি। তিনি বলেন, “আপনাদের হত্যাকারী পদত্যাগ করেছে। এখন দেশের সম্পদের ক্ষতি মানে আমাদের সবার ক্ষতি—এ কারণে জনসম্পদ ধ্বংস করবেন না।” মেয়র শাহ আরও বলেন, এখন প্রজন্মের হাতে দেশের নেতৃত্ব দেওয়ার সময় এসেছে এবং তরুণদের প্রস্তুত থাকা উচিত।
মেয়র বালেন্দ্র শাহ বিক্ষোভকারীদের সেনাপ্রধানের সঙ্গে আলোচনার জন্যও প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানান। তার মতে, এই আলোচনার মাধ্যমে রাজধানীতে সহিংসতা বন্ধ করা এবং নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব। তিনি স্থানীয় প্রশাসন এবং নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।
কাঠমান্ডুর পরিস্থিতি এখন বেশ উত্তপ্ত। নিরাপত্তা বাহিনী, সিভিল পুলিশ, সশস্ত্র পুলিশ এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ছয় শীর্ষ কর্মকর্তা সম্প্রতি যৌথ বিবৃতি প্রদান করেছেন। তাদের বক্তব্যে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা ও সহিংসতা রোধে সকল নাগরিকের সহমতের আহ্বান জানানো হয়েছে। এই যৌথ বিবৃতিটি স্থানীয়ভাবে আশার আলো দেখিয়েছে, তবে বিক্ষোভকারীদের মধ্যে এখনও উত্তেজনা বিদ্যমান।
বিক্ষোভকারীরা মূলত সরকারের পদত্যাগের পরও দেশব্যাপী দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি এবং গণতান্ত্রিক স্বরূপের ঘাটতির বিরুদ্ধে তাদের দাবি জানাচ্ছেন। তরুণ শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে বিক্ষোভকারীরা আশা করছেন, এই আন্দোলনের মাধ্যমে তারা দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে সক্ষম হবেন।
রাজধানীতে বর্তমান শাসকহীন পরিস্থিতিতে প্রশাসনিক শূন্যতা স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে। সংসদ ভবনের আগুনের ধোঁয়া, বিভিন্ন সড়কে অস্থিরতা এবং নিরাপত্তা বাহিনীর উপস্থিতি সহ পরিস্থিতি ক্রমশ উত্তপ্ত হচ্ছে। নাগরিকরা উদ্বেগ প্রকাশ করছেন যে, নিয়ন্ত্রণহীনতা দীর্ঘদিন স্থায়ী হলে শহরের শান্তি এবং জনসম্পদ মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়তে পারে।
শহরের প্রশাসন এবং নিরাপত্তা সংস্থাগুলি একসাথে কাজ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে চেষ্টা করছেন। মেয়র বালেন্দ্র শাহ এবং নিরাপত্তা প্রধানরা একাধিকবার শান্তি ও সংযমের আহ্বান জানিয়েছেন। পাশাপাশি, তারা বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আলোচনা করে যৌথ সমাধান বের করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
রাজধানীর এই অনিশ্চিত পরিস্থিতি প্রমাণ করে যে, শাসনহীনতার সময়ে নাগরিক নিরাপত্তা এবং জনসম্পদের রক্ষা এক বড় চ্যালেঞ্জ। জনগণের দাবি শান্তি, ন্যায়বিচার এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা। মেয়র বালেন্দ্র শাহ এবং সেনাপ্রধানের মধ্যে আলোচনা সম্ভাব্য সমাধানের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
নিপাল সরকারের পদত্যাগের পর রাজধানী কাঠমান্ডুতে যে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে, তা কেবল স্থানীয় নয়, আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক ও সংবাদমাধ্যমেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। নাগরিকরা আশা করছেন, সেনাপ্রধানের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের আলোচনার মাধ্যমে শহরে স্থিতিশীলতা ফেরানো সম্ভব হবে এবং সহিংসতা বন্ধ হবে। এই মুহূর্তে রাজধানী এক অস্থিরতা ও উত্তেজনার মিশ্রণে রয়েছে, যেখানে তরুণদের নেতৃত্ব এবং নিরাপত্তা বাহিনীর পদক্ষেপের ওপর দেশবাসীর দৃষ্টি নিবদ্ধ।
repoter