
ছবি: -সংগৃহীত ছবি
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির অভিযোগে দায়ের করা তিন মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আসামিদের বিরুদ্ধে আরও ছয়জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। মঙ্গলবার ঢাকার পাঁচ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মো. আব্দুল্লাহ আল মামুনের আদালতে এ সাক্ষ্যগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।
সাক্ষীরা আদালতে তাদের জবানবন্দি প্রদান করেন। তবে মামলার আসামিরা পলাতক থাকায় তাদের জেরা করা সম্ভব হয়নি। আদালত পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ হিসেবে আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর নির্ধারণ করেছেন।
সাক্ষ্যদানকারীরা হলেন সোনালী ব্যাংকের গণভবন শাখার সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার গৌতম কুমার সিকদার, একই শাখার প্রিন্সিপাল অফিসার মো. শরিফুল ইসলাম, কর সার্কেলের প্রধান সহকারী মোহাম্মদ লুৎফর রহমান, কর সার্কেলের কম্পিউটার অপারেটর মো. রেজাউল হক, কর সার্কেলের নোটিস সার্ভার মো. আবু তাহের এবং অফিস সহায়ক দেলোয়ার হোসেন।
মামলার কার্যক্রম প্রসঙ্গে দুদকের প্রসিকিউটর খান মো. মঈনুল হাসান লিপন সাংবাদিকদের জানান, আদালত থেকে সমন জারি করার পর এ ছয়জন সাক্ষী হাজির হন এবং সাক্ষ্য দেন। তিনি আরও বলেন, অভিযোগ গঠনের পর থেকেই মামলাগুলোর অগ্রগতি নিয়মিতভাবে এগোচ্ছে।
এর আগে গত ৩১ জুলাই ঢাকার বিশেষ জজ আদালত তিন মামলায় অভিযোগ গঠন করে আনুষ্ঠানিকভাবে বিচার শুরু করার নির্দেশ দেন। অভিযোগ গঠনের সময় আসামিরা আদালতে হাজির না হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়।
মামলার নথি থেকে জানা যায়, প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির অভিযোগে দায়ের করা মামলাগুলোর একটিতে শেখ রেহানা, ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক, শেখ হাসিনাসহ মোট ১৭ জনকে আসামি করা হয়েছে। অন্য একটি মামলায় আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তী, রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি, শেখ হাসিনাসহ ১৮ জন এবং তৃতীয় মামলায় রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি, শেখ হাসিনাসহ আরও ১৮ জনকে আসামি করা হয়েছে।
এর আগে গত ২০ জুলাই ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এবং বিশেষ জজ আদালত-৫-এ মোট ছয়টি মামলা বিচারের জন্য পাঠানো হয়। এ মামলাগুলোতে শেখ হাসিনা ছাড়াও তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, বোন শেখ রেহানা, রেহানার মেয়ে টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক, ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক এবং মেয়ে আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তীসহ পরিবারের একাধিক সদস্যকে আসামি করা হয়েছে।
শুধু রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নয়, এ মামলায় জড়িত রয়েছেন সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারাও। তাদের মধ্যে রয়েছেন জাতীয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব শহীদ উল্লা খন্দকার, অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) কাজী ওয়াছি উদ্দিন, প্রশাসনিক কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম সরকার, সিনিয়র সহকারী সচিব পূরবী গোলদার, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান মিঞা, সাবেক সদস্য মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, সদস্য তন্ময় দাস, সদস্য কবির আল আসাদ, সদস্য নুরুল ইসলাম, সাবেক সদস্য মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, সাবেক সদস্য সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী, পরিচালক শেখ শাহিনুল ইসলাম, উপ-পরিচালক হাফিজুর রহমান ও হাবিবুর রহমান। এছাড়া সাবেক প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব সালাউদ্দিনকেও এ মামলার আসামি করা হয়েছে।
দুদক গত জানুয়ারিতে পৃথকভাবে মোট ছয়টি মামলা দায়ের করে। এসব মামলায় অভিযোগ আনা হয় যে, রাজউকের প্লট বরাদ্দ প্রক্রিয়ায় জালিয়াতি, স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতির আশ্রয় নেওয়া হয়েছিল। তদন্ত শেষে দুদক সম্প্রতি আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে।
বর্তমানে আসামিরা পলাতক থাকায় আদালত তাদের অনুপস্থিতিতে বিচার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি থাকা সত্ত্বেও তারা এখনও আইনের আওতায় আসেননি। আদালতের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পরবর্তী তারিখে আরও সাক্ষী হাজির হয়ে জবানবন্দি দেওয়ার কথা রয়েছে।
মামলাগুলোর অগ্রগতি নিয়ে আইন মহলে নানা আলোচনা চলছে। অনেকে বলছেন, এত সংখ্যক উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তি এবং প্রভাবশালী পরিবার সদস্যদের একসঙ্গে আসামি করার ঘটনা বিরল। আবার অন্যরা মনে করছেন, এই মামলার ফলাফল ভবিষ্যতে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার মানদণ্ডে প্রভাব ফেলতে পারে।
প্রসঙ্গত, রাজউকের প্লট বরাদ্দ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি, অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন মহলে উত্থাপিত হয়ে আসছে। দুদকের মামলাগুলো সেই অভিযোগের ধারাবাহিকতা। আদালতে সাক্ষ্যপ্রমাণ ও জেরা শেষে এ মামলাগুলোর রায় দেশের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক অঙ্গনে বড় প্রভাব ফেলবে বলে আইনজীবী মহলে ধারণা করা হচ্ছে।
repoter