
ছবি: -সংগৃহীত ছবি
সিলেটের পাথর লুটসহ বিভিন্ন নারীঘটিত ঘটনার সঙ্গে জামায়াতের সম্পৃক্ততার অভিযোগ তুলেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ। তিনি বলেন, এসব ঘটনায় জামায়াতের নাম উচ্চারিত হলেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বরং বিএনপিকেই ঘিরে আলোচনা বেশি হচ্ছে। অথচ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিএনপি কী পদক্ষেপ নিচ্ছে, তা নিয়ে প্রকাশ্যে খুব বেশি কিছু বলা হচ্ছে না।
রবিবার (২১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ: নাগরিক ও জাতিবাদী জাতীয়তাবাদের সংকট’ শীর্ষক একটি বইয়ের আলোচনাসভায় তিনি এসব অভিযোগ করেন। অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে রিজভী বলেন, ৫ আগস্টের ঘটনার পর থেকে রাজনৈতিক অঙ্গনে ভেতরে ভেতরে বিভাজনের নানা সুর শোনা যাচ্ছে। কোথাও বলা হচ্ছে অমুক খারাপ, আমরা ভালো; আবার কোথাও পক্ষ-বিপক্ষ তৈরি হচ্ছে। এ ধরনের বক্তব্য পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে।
তিনি উল্লেখ করেন, বালুমহাল কিংবা পাথর খনির মতো খাতের সঙ্গে বিএনপির সম্পৃক্ততা নিয়ে গণমাধ্যমে অনেক আলোচনা হলেও একই সঙ্গে জামায়াতের সম্পৃক্ততার কথাও উঠে আসছে। কিন্তু এ বিষয়গুলো নিয়ে প্রচার সীমিত, যা রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যমূলক বলে তিনি মন্তব্য করেন। তার দাবি, মিডিয়ার কাভারেজে একটি পক্ষকে বেশি করে লক্ষ্যবস্তু বানানো হচ্ছে, অন্যদিকে সমানভাবে জড়িত আরেক পক্ষের নাম খুব একটা সামনে আসছে না।
রিজভী আরও বলেন, নারীঘটিত ঘটনাগুলিতেও জামায়াতের নাম শোনা যাচ্ছে। কিন্তু সেই প্রসঙ্গগুলোকে আড়াল করে রাখা হচ্ছে। বরং নানা কৌশলে বিএনপির নাম সামনে আনা হচ্ছে, যা জনমনে বিভ্রান্তি তৈরি করছে। তার ভাষায়, “সমাজে একধরনের অপপ্রচার চালানো হচ্ছে, যাতে বিএনপিকে দায়ী করে রাজনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করা যায়।”
তিনি রাজনৈতিক অঙ্গনে চলমান অস্থিরতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, এ ধরনের প্রচারণা এবং বিভাজন জাতীয়তাবাদী চেতনা দুর্বল করছে। বিএনপি জনগণের দল হিসেবে সবসময় জাতীয় স্বার্থে কাজ করেছে এবং করবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। একই সঙ্গে তিনি অভিযোগ করেন, রাজনৈতিক বিরোধকে কেন্দ্র করে যেসব ঘটনা ঘটছে তার অনেকগুলোতেই একটি মহল ইচ্ছাকৃতভাবে বিএনপির নাম জড়িয়ে দিচ্ছে।
জাতীয়তাবাদী রাজনীতির ভবিষ্যৎ প্রসঙ্গে আলোচনায় তিনি বলেন, এখনকার সময়ে নাগরিক জাতীয়তাবাদ ও জাতিবাদী জাতীয়তাবাদের মধ্যে সংকট তৈরি হয়েছে। এই সংকট সমাধান না হলে দেশের গণতান্ত্রিক ধারাকে সুদৃঢ় করা সম্ভব হবে না। তার মতে, গণতান্ত্রিক কাঠামোকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হলে জনগণের আস্থা ফিরে পেতে হবে এবং সেই আস্থা অর্জনে সৎ ও স্বচ্ছ রাজনীতি অপরিহার্য।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত বক্তারা বইয়ের আলোচনার পাশাপাশি সমসাময়িক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়েও মতামত দেন। তারা বলেন, দেশে বিভাজনমূলক রাজনীতি সমাজে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা ও অনিয়মকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে, যা দেশের সার্বিক অগ্রযাত্রার জন্য ক্ষতিকর।
রিজভী তার বক্তব্যে দাবি করেন, বিএনপি সবসময় অন্যায়ের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে এবং ভবিষ্যতেও নেবে। তবে একই সঙ্গে তিনি প্রশ্ন তোলেন, কেন জামায়াতের বিরুদ্ধে আসা অভিযোগগুলোকে তেমনভাবে প্রচার করা হচ্ছে না। তার ভাষায়, “অভিযোগ যদি বিএনপির কারও বিরুদ্ধে আসে, সেটা নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। কিন্তু একই ধরনের ঘটনায় জামায়াতের নাম আসলে সেটা গুরুত্ব হারায়।”
তিনি বলেন, রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা থাকা স্বাভাবিক, তবে প্রতিযোগিতাকে ভিত্তি করে যদি বিভাজন, অপপ্রচার ও পক্ষপাতিত্ব ছড়িয়ে দেওয়া হয়, তাহলে তা জাতির জন্য শুভ হবে না। তার মতে, বর্তমান সময়ের রাজনৈতিক অঙ্গনে সবচেয়ে জরুরি হলো ঐক্যবদ্ধ হয়ে গণতন্ত্র রক্ষা করা।
repoter