
ছবি: -সংগৃহীত ছবি
নেপালে ক্রমবর্ধমান বিক্ষোভ ও জনরোষের মুখে প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি পদত্যাগ করেছেন। চলমান এই আন্দোলনে বিক্ষোভকারীরা তাকে হিটলারের সঙ্গে তুলনা করেছেন এবং অভিযোগ করেছেন যে বর্তমান সরকার নির্বিচারে তরুণদের হত্যা করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে সেনাবাহিনী প্রধানমন্ত্রীসহ কয়েকজন মন্ত্রীকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়েছে। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা জানিয়েছে, ওলির পদত্যাগে রাজনৈতিক অচলাবস্থার অবসান ঘটলেও আন্দোলনকারীরা এখনো রাজপথ ছাড়েনি।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী বিষ্ণু থাপা ছেতরি বলেন, দেশের পরিস্থিতি এতটাই অবনতি ঘটেছে যে তরুণদের আর এখানে থাকার পরিবেশ নেই। তিনি জানান, তাদের একমাত্র দাবি শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং দুর্নীতির অবসান, যাতে মানুষ দেশে কাজ করতে ও বসবাস করতে পারে। তরুণ প্রজন্মের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে এবং এ পরিস্থিতি থেকে মুক্তির একমাত্র পথ হলো সরকারের পতন।
অন্য এক বিক্ষোভকারী নারায়ণ আচার্য বলেন, আন্দোলনে নামার মূল কারণ হচ্ছে সহপাঠীদের নির্বিচারে হত্যা। তিনি অভিযোগ করেন, নিরাপত্তা বাহিনী আন্দোলন দমাতে গুলি চালাচ্ছে এবং তরুণদের প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে। তার ভাষায়, তারা রাজপথে ন্যায়বিচারের দাবিতে এবং বর্তমান সরকারকে উৎখাতের উদ্দেশ্যে নেমেছেন। শিক্ষার্থীদের হত্যার প্রতিবাদ করা প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব, আর এ কারণেই তারা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।
শিক্ষার্থী দুরগানাহ দালাল বলেন, সরকার যতদিন ক্ষমতায় থাকবে ততদিন সাধারণ মানুষ ভোগান্তির শিকার হবে। তিনি জানান, মাত্র গতকালই নিরাপত্তা বাহিনী বেশ কয়েকজন তরুণকে হত্যা করেছে, যাদের সামনে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছিল। এই অমানবিক শাসন চলতে দেওয়া যাবে না বলে তিনি উল্লেখ করেন এবং ঘোষণা দেন, সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত তারা রাজপথ ছাড়বেন না।
প্রধানমন্ত্রী অলি ও তার মন্ত্রিসভার বেশ কয়েকজন সদস্য পদত্যাগ করার পর সেনাবাহিনী তাদের রাজধানী কাঠমান্ডু থেকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়েছে। তবে বিক্ষোভকারীরা বলছেন, শুধু পদত্যাগেই তারা সন্তুষ্ট নন। তারা দাবি করছেন, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ সংস্কার এবং হত্যার দায়ীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
নেপালে এই বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধ করার সরকারি সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে। তবে দ্রুতই তা দুর্নীতি, বেকারত্ব, বৈষম্য এবং স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধে সর্বজনীন আন্দোলনে পরিণত হয়। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের নেতৃত্বে এই আন্দোলন দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। আন্দোলনকারীরা দাবি করেন, সরকার তাদের মৌলিক অধিকার কেড়ে নিয়েছে এবং জনস্বার্থের বদলে নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় ব্যস্ত থেকেছে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিরাপত্তা বাহিনী কঠোর অবস্থান নিলে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে এবং কয়েক ডজন প্রাণহানি ঘটে। সরকারের কঠোর দমননীতি আন্দোলন থামাতে ব্যর্থ হয়, বরং তা আরও তীব্র আকার ধারণ করে। রাজধানী কাঠমান্ডু থেকে শুরু হওয়া বিক্ষোভ একে একে দেশের বিভিন্ন প্রদেশে ছড়িয়ে পড়ে।
আন্দোলনকারীদের মতে, নেপালের ইতিহাসে এই আন্দোলন এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। তরুণ প্রজন্মের সক্রিয় অংশগ্রহণ প্রমাণ করেছে যে তারা অন্যায়ের কাছে মাথানত করবে না। হিটলারের সঙ্গে তুলনা করে তারা জানায়, অলি সরকারের স্বৈরাচারী আচরণ জনগণ মেনে নেবে না।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নেপালে এই আন্দোলন শুধু একটি সরকারের পতন ঘটায়নি, বরং নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতার জন্ম দিয়েছে। দুর্নীতিমুক্ত ও গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার দাবিতে তরুণদের যে দৃঢ় অবস্থান তা দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতেও বড় প্রভাব ফেলতে পারে। নেপালের এই পরিস্থিতি এখনো অস্থিতিশীল হলেও বিক্ষোভকারীরা আশাবাদী যে আন্দোলনের মাধ্যমে তারা একটি নতুন রাজনৈতিক দিগন্ত উন্মোচন করতে সক্ষম হবেন।
repoter