
ছবি: ছবি: সংগৃহীত
সার্ক ফাইন্যান্স গভর্নরদের ৪৭তম সম্মেলনে অর্থনৈতিক সমন্বয় ও আর্থিক অন্তর্ভুক্তির ওপর গুরুত্বারোপ
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, অর্থনীতির প্রতিটি খুঁটিনাটি দিক খেয়াল রাখতে হবে। অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তির পথ সহজ নয়, এতে বহু চ্যালেঞ্জ রয়েছে এবং সামনে আরও চ্যালেঞ্জ আসবে। তবে এই কঠিন পথে চলার কোনো জাদুকরী সমাধান নেই। আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই একমাত্র পথ।
বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) রাজধানীর একটি অভিজাত হোটেলে অনুষ্ঠিত সার্ক ফাইন্যান্স গভর্নরদের ৪৭তম বৈঠক ও সিম্পোজিয়ামের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। বাংলাদেশ ব্যাংকের গবেষণা বিভাগের সার্কফাইন্যান্স উইং আয়োজিত এ অনুষ্ঠানের প্রতিপাদ্য ছিল— “ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন অ্যান্ড সেন্ট্রাল ব্যাংকিং: ব্রিজিং গ্যাপস ইন দ্য সার্ক রিজিয়ন”।
অনুষ্ঠানে দক্ষিণ এশিয়ার সার্কভুক্ত দেশগুলোর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর, অর্থ সচিব, প্রতিনিধিবৃন্দসহ উচ্চপর্যায়ের অর্থনৈতিক নীতিনির্ধারকরা অংশগ্রহণ করেন।
গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, “দক্ষিণ এশিয়ার আর্থসামাজিক বৈচিত্র্য, রাজনৈতিক মতানৈক্য ও উন্নয়নব্যবস্থার ভিন্নতা সত্ত্বেও আমরা একটি অর্থনৈতিক ঐক্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছি। সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে নিয়মিত নীতিগত বিতর্ক, তথ্য ও অভিজ্ঞতা বিনিময় এবং গবেষণায় যৌথ অংশগ্রহণ আমাদের জন্য ইতিবাচক দৃষ্টান্ত তৈরি করছে।”
তিনি বলেন, “অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তি এখন একটি বৈশ্বিক প্রয়োজন। কিন্তু দক্ষিণ এশিয়ার একটি বড় জনগোষ্ঠী এখনও এই কাঠামোর বাইরে রয়ে গেছে। তাদের আর্থিক ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত করা আমাদের জন্য বিশাল চ্যালেঞ্জ। এজন্য প্রতিটি দেশ নিজস্ব কৌশলে এগোচ্ছে। কেউ প্রযুক্তিতে এগিয়ে, কেউ নীতিনির্ধারণে। আমরা এই ফোরামে সবাই সবার সেরা অভিজ্ঞতা শেয়ার করছি, যাতে একটি সমন্বিত ও টেকসই পথ বের করা যায়।”
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আরও বলেন, “আমাদের মধ্যে রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকতে পারে, কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংক পর্যায়ে সহযোগিতা, গবেষণা ও সংলাপের ধারা যেন অব্যাহত থাকে। এই সহযোগিতা আমাদের অঞ্চলে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি ও সামগ্রিক উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখবে।”
অনুষ্ঠানে ভুটানের রয়্যাল মনিটারি অথরিটির গভর্নর দাশো পেনজোর বলেন, “সার্ক দেশগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদার করার সময় এসেছে। আমাদের উচিত একে অপরের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে তা নিজ নিজ দেশে বাস্তবায়ন করা।”
অর্থ বিভাগের সচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার বলেন, “অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনীতি অর্জনের জন্য শুধু নীতিগত পরিকল্পনা নয়, প্রয়োজন বাস্তবায়নের সক্ষমতা ও জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে ইতিবাচক অগ্রগতি দেখিয়েছে।”
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর ড. মো. হাবিবুর রহমান।
তিনি বলেন, “ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুশনের প্রধান অন্তরায় হলো আর্থিক সেবার দুরুহতা, অনিরাপদ লেনদেন ও সাধারণ জনগণের মধ্যে আর্থিক অজ্ঞানতা। এসব সমস্যার সমাধানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভূমিকাই মুখ্য।”
সিম্পোজিয়ামের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক (গবেষণা) ড. সায়েরা ইউনুস। তিনি বলেন, “এই প্ল্যাটফর্ম আমাদের দেশের অভিজ্ঞতাকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তুলে ধরার সুযোগ দেয়। একই সঙ্গে আমরা অন্য দেশের ভালো উদাহরণগুলো আমাদের নীতিনির্ধারণে কাজে লাগাতে পারি।”
দিনব্যাপী সম্মেলনে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধি ও বিশেষজ্ঞরা আর্থিক অন্তর্ভুক্তির চ্যালেঞ্জ, উদ্ভাবনী সমাধান এবং টেকসই অর্থনৈতিক নীতির ওপর আলোচনা করেন।
এই আয়োজনের মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে নীতিগত সংহতি ও আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা আরও সুদৃঢ় হবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন আয়োজক ও অংশগ্রহণকারীরা।
repoter