ঢাকা,  মঙ্গলবার
১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ , ০৭:০৫ মিনিট

Donik Barta

শিরোনাম:

* সীমানা পুনর্নির্ধারণে আদালতের রায়ের অপেক্ষায় ইসি * ভাঙ্গায় অবরোধের সপ্তম দিনে সড়ক ও রেল যোগাযোগ স্বাভাবিক * গত এক বছরে দেশের কোনো অগ্রগতি হয়নি: রুমিন ফারহানা * নতুন বাংলাদেশে সমান অধিকারের প্রত্যাশা: প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস * জাতীয়করণের দাবিতে শিক্ষকদের মিছিল, পুলিশের জলকামান ও সাউন্ড গ্রেনেডে ছত্রভঙ্গ * শুল্ক কমাতে হবে, নইলে ভারতের ব্যবসা ঝুঁকিতে পড়বে: যুক্তরাষ্ট্রের সতর্কবার্তা * জনসমর্থন ছাড়া গণতন্ত্র টিকবে না: আমীর খসরু * মানুষ জন্মগতভাবে উদ্যোক্তা: প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস * জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলের বৈঠকে জুলাই সনদের বাস্তবায়ন নিয়ে আলোচনা * যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ সামরিক মহড়া নিয়ে উত্তর কোরিয়ার কড়া হুঁশিয়ারি

নতুন বাংলাদেশে সমান অধিকারের প্রত্যাশা: প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস

repoter

প্রকাশিত: ০৩:২৩:৫৭অপরাহ্ন , ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

আপডেট: ০৩:২৩:৫৭অপরাহ্ন , ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

-সংগৃহীত ছবি

ছবি: -সংগৃহীত ছবি

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, নতুন বাংলাদেশ গড়ার মূল লক্ষ্য হলো এমন একটি রাষ্ট্র নির্মাণ করা যেখানে সকল নাগরিক সমান অধিকার ভোগ করবে এবং নিরাপত্তা বাহিনীর বেষ্টনির মধ্যে নয়, বরং মুক্তভাবে মানুষ তার ধর্মীয় অনুশীলন করতে পারবে। তিনি বলেন, নিজেদের মধ্যে বিভক্ত হলে জাতি হিসেবে ব্যর্থ হতে হবে, আর আমরা সেই ব্যর্থতা চাই না। তাই আমাদের লক্ষ্য এমন একটি রাষ্ট্র গড়া, যা বিশ্বে অনুকরণীয় হয়ে উঠবে।

মঙ্গলবার রাজধানীর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির পরিদর্শনে গিয়ে প্রধান উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। তিনি দুর্গাপূজার শুভেচ্ছা জানাতে মন্দিরে আসেন এবং সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।

মন্দির পরিদর্শন শেষে ইউনূস বলেন, বাংলাদেশের জন্য প্রয়োজন এমন এক সামাজিক পরিবেশ, যেখানে মানুষ তার ধর্মীয় উৎসব পালন করবে ভয়ের মধ্যে নয়, আনন্দ আর মুক্তির আবহে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, “যত ধর্মীয় পার্থক্য থাকুক না কেন, রাষ্ট্র কোনো নাগরিককে তার ধর্মের কারণে আলাদা আচরণ করতে পারবে না। রাষ্ট্রের দায়িত্ব হবে সব ধর্মের সমান মর্যাদা নিশ্চিত করা।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা চাই বাংলাদেশ এমন একটি রাষ্ট্রে পরিণত হোক যেখানে শারদীয় দুর্গোৎসব হোক বা ঈদ কিংবা বড়দিন—সব উৎসবই মানুষ নির্বিঘ্নে, পরস্পরের সঙ্গে ভাগ করে উদযাপন করবে। নিরাপত্তা বাহিনীর কঠোর নজরদারির প্রয়োজন হবে না। মানুষ নিজে নিজেই তার ধর্ম পালন করবে এবং অন্যের ধর্মকে সম্মান করবে।”

ড. ইউনূস জানান, নতুন বাংলাদেশের ধারণা শুধু রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক উন্নয়ন নয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সমতা প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়েই বাস্তবায়ন হবে। তিনি মনে করেন, বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ের ভেতরে যে বহুত্ববাদ আছে, তা-ই রাষ্ট্রকে শক্তিশালী করে তুলতে পারে। তিনি বলেন, “জুলাই আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের জন্য সব ধর্ম ও সম্প্রদায়ের মানুষকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। বিচ্ছিন্নতা বা বৈষম্য দূর না করতে পারলে আমরা নতুন রাষ্ট্র গড়তে পারব না।”

শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা উল্লেখ করেন, ধর্মীয় সম্প্রীতি বাংলাদেশের ঐতিহ্য। এই ঐতিহ্যকে ধরে রাখাই নয়, বরং নতুন প্রজন্মের কাছে আরও দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তিনি বলেন, “একটি রাষ্ট্র কেবল তখনই বিশ্বে সম্মান পায়, যখন সেখানে নাগরিকদের মধ্যে সমতা, মানবিকতা এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধা থাকে। আমরা চাই বাংলাদেশ হোক সেই উদাহরণ।”

এদিন ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে আগত সনাতন ধর্মাবলম্বীরা প্রধান উপদেষ্টাকে স্বাগত জানান। ইউনূস মন্দির প্রাঙ্গণে তাদের সঙ্গে কিছু সময় কাটান এবং উৎসবের আনন্দ ভাগ করে নেন। শুভেচ্ছা বিনিময় সভায় তিনি বলেন, “আমরা চাই না কোনো ধর্মীয় উৎসব কেবল একটি সম্প্রদায়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকুক। এটা হবে আমাদের সবার উৎসব, আমাদের সবার আনন্দ।”

প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, “বাংলাদেশ এমন একটি জায়গা হয়ে উঠুক যেখানে বিশ্ব দেখবে, কীভাবে একটি ছোট দেশ তার ভেতরে বৈচিত্র্যকে ধারণ করে ঐক্য তৈরি করেছে। এটি যদি আমরা করতে পারি, তবে কেবল নিজেদের জন্য নয়, গোটা বিশ্বের জন্যও একটি নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারব।”

তিনি বক্তব্যের শেষাংশে সকলকে মিলেমিশে দেশ গড়ার আহ্বান জানান এবং বলেন, নতুন বাংলাদেশে কারও ধর্ম, ভাষা, সংস্কৃতি বা বিশ্বাসের কারণে বৈষম্যের সুযোগ থাকবে না। প্রত্যেকেই সমান অধিকার ভোগ করবে, এটাই হবে ভবিষ্যতের বাংলাদেশের মূল বৈশিষ্ট্য।

ড. ইউনূসের ভাষণে উঠে আসে শান্তি, সম্প্রীতি ও ঐক্যের বার্তা, যা তিনি নতুন বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান ভিত্তি হিসেবে চিহ্নিত করেন। তিনি জানান, অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব শুধু প্রশাসনিক কার্যক্রম চালানো নয়, বরং আগামী দিনের জন্য একটি দৃঢ় ভিত্তি গড়ে দেওয়া, যেখানে নাগরিকেরা সমান মর্যাদায় বাঁচতে পারবে।

মন্দির পরিদর্শন শেষে প্রধান উপদেষ্টা সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় সভায় যোগ দেন এবং সকলের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে দেশের সার্বিক উন্নয়নে ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে একসঙ্গে কাজ করার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।

repoter