ঢাকা,  শুক্রবার
১৯ ডিসেম্বর ২০২৫ , ০২:০৮ মিনিট

Donik Barta

শিরোনাম:

* জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধ: ওবায়দুল কাদেরসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল * গুলিবিদ্ধ শরিফ ওসমান হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, দেশে–বিদেশে উদ্বেগ * ঢাকা–দিল্লি সম্পর্কে নতুন করে উত্তেজনা, আজ চালু থাকছে ভারতীয় ভিসা কেন্দ্র * ৬৬ হাজার কোটি টাকার সম্পদ জব্দ, বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারে গতি আনছে সরকার * যুক্তরাষ্ট্রের ‘সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ’ ফিরিয়ে আনছেন ট্রাম্প, সমালোচনার কেন্দ্রে ভেনেজুয়েলা অভিযান * পাবনার বেড়ায় স্পিডবোটে এসে বাজারে ডাকাতি, ব্যবসায়ীরা আতঙ্কিত * যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভেনেজুয়েলা অভিযান: মাদুরো সরকারের ওপর চাপ বাড়ছে * ট্রাম্পের ২৮ দফা শান্তি পরিকল্পনা: ইউক্রেন–রাশিয়া যুদ্ধ বন্ধে নতুন জটিলতা * গুম ও মানবতাবিরোধী অভিযোগে ১৩ সেনা কর্মকর্তা ট্রাইব্যুনালে * বিএনপির ৪০টির বেশি আসনে মনোনয়নসংক্রান্ত অসন্তোষ, কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ব্যস্ত সমাধান খুঁজতে

নেপালে বিক্ষোভে নিহত বেড়ে ১৪, আহতদের ভিড়ে নাজেহাল হাসপাতাল

repoter

প্রকাশিত: ০৭:০৪:৫২অপরাহ্ন , ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

আপডেট: ০৭:০৪:৫২অপরাহ্ন , ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

-সংগৃহীত ছবি

ছবি: -সংগৃহীত ছবি

নেপালে দুর্নীতি ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরকারের কঠোর নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে তরুণ প্রজন্মের বিক্ষোভে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪ জনে। সোমবার দেশটির বিভিন্ন হাসপাতালের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিমালয়ান টাইমস। নিহতদের মধ্যে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে ন্যাশনাল ট্রমা সেন্টারে, তিনজন সিভিল হাসপাতালে, তিনজন এভারেস্ট হাসপাতালে, একজন কাঠমান্ডু মেডিকেল কলেজে (কেএমসি) এবং একজন ত্রিভুবন বিশ্ববিদ্যালয় টিচিং হাসপাতালে।

এদিকে আহতের সঠিক সংখ্যা এখনও নিশ্চিত করা যায়নি। তবে চিকিৎসকদের বরাতে জানা গেছে, কয়েক শ মানুষ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছেন। প্রচুর সংখ্যক রোগী একসঙ্গে ভর্তি হওয়ায় সিভিল হাসপাতাল ও ট্রমা সেন্টারসহ রাজধানীর বেশ কয়েকটি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান রোগী সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে। অনেককে প্রাথমিক চিকিৎসার পর অন্য হাসপাতালে স্থানান্তর করা হচ্ছে। হাসপাতালগুলোর করিডর থেকে শুরু করে বারান্দা পর্যন্ত ভর্তি রয়েছে আহতদের ভিড়ে। জরুরি ওয়ার্ডে রোগীদের জায়গা না থাকায় অনেককে মেঝেতে শুইয়ে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

সম্প্রতি নেপালে ২৬টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্ম নিষিদ্ধ করে সরকার। এর মধ্যে জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্ম ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, এক্স (সাবেক টুইটার), ইউটিউব ও ইনস্টাগ্রামও রয়েছে। সরকারের দাবি, ভুয়া খবর, গুজব এবং রাষ্ট্রবিরোধী প্রচারণা ঠেকাতেই এই পদক্ষেপ। তবে তরুণ প্রজন্ম এটিকে সরাসরি মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর আঘাত হিসেবে দেখেছে। তাদের মতে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম শুধু বিনোদনের প্ল্যাটফর্ম নয়; বরং এটি রাজনৈতিক আলোচনা, সংগঠন গড়ে তোলা ও সামাজিক প্রতিবাদের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।

সরকারের এ সিদ্ধান্তকেই কেন্দ্র করে রাজধানী কাঠমান্ডুতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ও জেনারেশন জেড-এর তরুণদের নেতৃত্বে বিক্ষোভ শুরু হয়। প্রথমে এটি শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি হিসেবে সংসদ ভবনের সামনে সীমাবদ্ধ থাকলেও ধীরে ধীরে তা রূপ নেয় সহিংসতায়। সোমবার দুপুরের দিকে বিক্ষোভকারীদের একটি অংশ জাতীয় পার্লামেন্ট ভবনের ফটক ভাঙার চেষ্টা করে। তখনই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী টিয়ার শেল, জলকামান ও রাবার বুলেট ছুড়ে বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। কিন্তু পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। চারপাশে গুলির শব্দ ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক।

অন্যদিকে, বিক্ষোভকারীরাও হাতের কাছে পাওয়া লাঠি, গাছের ডাল, ইট-পাটকেল ও পানির বোতল দিয়ে প্রতিরোধে নামেন। তারা সরকারবিরোধী স্লোগান দিতে দিতে রাস্তায় অবস্থান নেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধের পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরে চলা দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও অকার্যকর নীতির প্রতিবাদও উঠে আসে তাদের দাবিতে। অনেক তরুণ অভিযোগ তুলেছেন, শিক্ষিত হয়েও তারা চাকরি পাচ্ছেন না, আর সরকারি সেবাখাতের দুর্নীতি সাধারণ মানুষকে বিপর্যস্ত করে রেখেছে।

নেপালের প্রশাসনের দাবি, বিক্ষোভকারীরাই প্রথম সহিংসতা উসকে দেয়। তাদের বিরুদ্ধে পুলিশের ওপর হামলা ও সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করার অভিযোগ তোলা হয়েছে। তবে আন্দোলনকারীদের বক্তব্য ভিন্ন। তারা বলছেন, শান্তিপূর্ণ মিছিলের মধ্যেই পুলিশ প্রথম টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করে, যা জনতার মধ্যে ক্ষোভ ও ভীতি ছড়িয়ে দেয়। এরপর থেকেই পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে।

ঘটনার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কাঠমান্ডু জেলা প্রশাসন কারফিউ জারি করে। নোটিশে জানানো হয়, স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা ৩০ মিনিট থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় কারফিউ কার্যকর থাকবে। তবে বাস্তবে তা মানেনি বিক্ষুব্ধ জনতা। তারা কারফিউ ভেঙেই রাস্তায় নেমে আসে এবং বিভিন্ন মোড়ে পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় জড়িয়ে পড়ে।

বর্তমানে কাঠমান্ডুতেই সীমাবদ্ধ থাকলেও, আন্দোলন দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। বিরোধী দলগুলো ইতোমধ্যেই সরকারের পদত্যাগ দাবি করেছে এবং বিক্ষোভে প্রাণহানির জন্য প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে দায়ী করছে। অন্যদিকে নাগরিক সমাজের একাংশ বলছে, এ আন্দোলন কেবল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধের প্রতিবাদ নয়; বরং এটি দীর্ঘদিন ধরে জমে থাকা তরুণদের ক্ষোভ, অর্থনৈতিক হতাশা ও শাসনব্যবস্থার প্রতি অবিশ্বাসের বহিঃপ্রকাশ।

বিশ্লেষকদের মতে, নেপালের সাম্প্রতিক ইতিহাসে তরুণদের এমন সরব উপস্থিতি নজিরবিহীন। তারা সতর্ক করেছেন, সরকার যদি এই আন্দোলনকে শুধু শক্তি দিয়ে দমন করার চেষ্টা করে তবে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে। ইতিমধ্যে সহিংসতার শিকার হয়ে প্রাণহানি ও ব্যাপক আহত হওয়ার ঘটনা দেশটিতে নতুন রাজনৈতিক সংকট ডেকে আনতে পারে।

repoter