
ছবি: -সংগৃহীত ছবি
কায়রোর মিসরীয় জাদুঘর থেকে ফারাও যুগের তিন হাজার বছর পুরোনো একটি অমূল্য ব্রেসলেট চুরি হয়েছে, যা পরবর্তীতে গলিয়ে বিক্রি করা হয় মাত্র কয়েক হাজার ডলারে। বৃহস্পতিবার মিসরের পুলিশ জানিয়েছে, এ ঘটনায় জাদুঘরের একজন কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
চুরি যাওয়া ব্রেসলেটটি ছিল ল্যাপিস পাথরের পুঁথি দিয়ে সজ্জিত। ধারণা করা হয়, এটি মিসরের ২১তম রাজবংশের সম্রাট আমেনেমোপের শাসনামলে নির্মিত হয়েছিল। ব্রেসলেটটি জাদুঘরের কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে সংরক্ষিত ছিল এবং কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই ইতালিতে এক প্রদর্শনীতে পাঠানোর কথা ছিল। কিন্তু শনিবার জাদুঘরের সংরক্ষণাগার থেকে এটি নিখোঁজ হওয়ার খবর পাওয়া যায়।
সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, তদন্তে জানা গেছে যে জাদুঘরের এক কর্মী গত ৯ সেপ্টেম্বর ব্রেসলেটটি চুরি করেন। চুরি করা নিদর্শন বিক্রিতে সহায়তা করেন স্থানীয় এক রুপা ব্যবসায়ী। প্রথমে ব্রেসলেটটি এক লাখ ৮০ হাজার মিসরীয় মুদ্রায় এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করা হয়। পরবর্তীতে এটি আরও বেশি মূল্যে—এক লাখ ৯৪ হাজার মিসরীয় পাউন্ডে—এক স্বর্ণ কারখানার শ্রমিকের কাছে বিক্রি করা হয়। শেষপর্যন্ত ব্রেসলেটটি গলিয়ে ফেলা হয়।
মিসরের আইন অনুযায়ী, প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন চুরির শাস্তি অত্যন্ত কঠোর। এ ধরনের অপরাধে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের পাশাপাশি ১ থেকে ৫০ মিসরীয় মুদ্রা পর্যন্ত জরিমানার বিধান রয়েছে। এছাড়া প্রত্নসম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত করার শাস্তি হিসেবে সাত বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড ও সর্বোচ্চ ১০ লাখ মিসরীয় পাউন্ড জরিমানার বিধান রয়েছে।
মিসরবিদ জিন গুলিয়াম ওলেট পেলেটিয়ার জানান, ব্রেসলেটটি মূলত পূর্ব নীল নদের ব-দ্বীপ এলাকায় রাজা সুসেনের সমাধি থেকে প্রত্নতাত্ত্বিক খননের সময় উদ্ধার করা হয়েছিল। তার মতে, এটি শুধু নান্দনিক দিক থেকে নয়, বৈজ্ঞানিকভাবে মিসরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারগুলোর একটি। তিনি বলেন, “এই ব্রেসলেট ছিল অনন্য। এর শিল্পমান এবং প্রত্নতাত্ত্বিক মূল্য অপরিসীম। এটি হারানো মানে ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হারিয়ে যাওয়া।”
মিসরের জাদুঘর থেকে মূল্যবান প্রত্নসম্পদ হারিয়ে যাওয়ার ঘটনা এটাই প্রথম নয়। এর আগে ১৯৭৭ সালে কায়রোর এক জাদুঘর থেকে ভিনসেন্ট ভ্যান গঘের আঁকা বিখ্যাত চিত্রকর্ম পপি ফ্লাওয়ার্স চুরি হয়েছিল, যার আনুমানিক মূল্য ছিল ৫৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এ ধরনের ঘটনা মিসরের প্রত্নতাত্ত্বিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে।
সাম্প্রতিক এই চুরির ঘটনায় দেশটির প্রত্নতাত্ত্বিক মহল ও সাধারণ মানুষের মধ্যে গভীর ক্ষোভ ও উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে মনে করছেন, জাদুঘরের অভ্যন্তরে নিয়োজিত কর্মীদের যোগসাজশ ছাড়া এ ধরনের মূল্যবান নিদর্শন চুরি সম্ভব নয়। ফলে জাদুঘরের নিরাপত্তা ব্যবস্থার ওপর আস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
চুরি হওয়া ব্রেসলেটটির মূল্য অর্থ দিয়ে পরিমাপ করা সম্ভব নয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই নিদর্শন শুধু প্রাচীন মিসরের শিল্প ও সংস্কৃতির পরিচায়কই নয়, বরং ফারাও যুগের রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপট বোঝার ক্ষেত্রেও একটি গুরুত্বপূর্ণ সূত্র ছিল। অথচ তা ধ্বংস করে অর্থে রূপান্তরিত করা হয়েছে।
এই ঘটনার পর মিসরের সংস্কৃতি ও প্রত্নতত্ত্ব মন্ত্রণালয় জাদুঘরের নিরাপত্তা ব্যবস্থার পূর্ণাঙ্গ তদন্তের ঘোষণা দিয়েছে। একই সঙ্গে নিখোঁজ প্রত্নসম্পদ উদ্ধার এবং অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
repoter