
ছবি: -সংগৃহীত ছবি
মালয়েশিয়ায় গ্রেফতার হওয়া বাংলাদেশিদের জঙ্গিবাদে সম্পৃক্ততা নেই বলে জানিয়েছেন পুলিশের এন্টি টেররিজম ইউনিটের (এটিইউ) প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মো. রেজাউল করিম। তিনি বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে তারা সবাই শ্রমজীবী মানুষ এবং জঙ্গিবাদের সঙ্গে তাদের কোনো সরাসরি সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর বারিধারায় এটিইউর সদর দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, মালয়েশিয়ায় গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিদের প্রত্যেককে পৃথকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তারা জানিয়েছে, অসহায় ও দুঃস্থ মানুষকে সাহায্য করার উদ্দেশ্যেই তাদের কিছু কার্যক্রম ছিল। মালয়েশিয়ার সরকারও তদন্ত শেষে তাদের ক্লিয়ার করেছে। তবে এর পেছনে অন্য কারা যুক্ত থাকতে পারে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
মতবিনিময় সভায় সাংবাদিকরা জানতে চান, যখন সরকার বলছে দেশে বর্তমানে কোনো ধরনের জঙ্গিবাদ নেই, তখন পুলিশের এন্টি টেররিজম ইউনিটের অস্তিত্বের যৌক্তিকতা কী। এর জবাবে এটিইউ প্রধান বলেন, ভবিষ্যতে জঙ্গিবাদ আবার মাথাচাড়া দেবে না—এমন নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারে না। সেই ক্ষেত্রে এটিইউর দায়িত্ব ও কার্যক্রম আগের চেয়ে আরও গুরুত্বসহকারে চালিয়ে যেতে হবে। তিনি বলেন, “আমাদের থেমে থাকার কোনো সুযোগ নেই। বরং আরও সিরিয়াসভাবে কাজ করতে হবে।”
তিনি মনে করেন, একটি মাত্র সন্ত্রাসী ঘটনা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। এ প্রসঙ্গে ২০০৫ সালের দেশব্যাপী সিরিজ বোমা হামলার উদাহরণ তুলে ধরে তিনি বলেন, কিভাবে স্বল্পশিক্ষিত এবং বিভ্রান্ত মানুষ ভুল আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি করেছিল। সেই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
এটিইউ প্রধান উল্লেখ করেন, সব ধর্মই শান্তির শিক্ষা দেয়, কোনো ধর্মই উগ্রবাদ বা সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন করে না। কিন্তু কিছু গোষ্ঠী ধর্মকে বিকৃত করে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করে। তিনি গণমাধ্যমকে আহ্বান জানান, সমাজে সঠিক বার্তা ছড়িয়ে দিতে হবে এবং যারা ধর্মকে অপব্যবহার করছে তাদের চিহ্নিত করে সচেতনতা বাড়াতে হবে।
তিনি আরও বলেন, সন্ত্রাসবাদ রোধে গোয়েন্দা তৎপরতা, প্রযুক্তির ব্যবহার এবং জনগণের সহযোগিতা অপরিহার্য। জনগণকে সম্পৃক্ত না করলে সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধ কার্যকর হবে না। এজন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে আস্থা ও সমন্বয় গড়ে তোলার প্রয়োজন রয়েছে।
মালয়েশিয়ায় গ্রেফতার হওয়া বাংলাদেশিদের প্রসঙ্গে তিনি আবারও বলেন, তারা কেউই জঙ্গিবাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। বরং শ্রমিক হিসেবে সেখানে তারা ভিন্ন পরিস্থিতিতে ভুলভাবে ব্যাখ্যাত হয়েছেন। তবে তদন্ত এখনো চলছে, যাতে কোনো দিক উপেক্ষিত না হয়।
সভায় এটিইউ প্রধান সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে দীর্ঘমেয়াদি কৌশল নিয়েও মত প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ কেবল আইন প্রয়োগের বিষয় নয়, বরং শিক্ষা, সামাজিক সচেতনতা এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন এর সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। বিভ্রান্ত মানুষদের সঠিক পথে ফেরাতে সমাজের প্রতিটি অংশকে দায়িত্ব নিতে হবে।
সভা শেষে তিনি আশা প্রকাশ করেন, বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সতর্ক তৎপরতা এবং জনগণের সহযোগিতার মাধ্যমে জঙ্গিবাদ ও উগ্রবাদ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হবে।
repoter