ঢাকা,  শনিবার
১৯ এপ্রিল ২০২৫ , ১১:২৫ মিনিট

Donik Barta

শিরোনাম:

* রাবি ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে একাধিক ভুল, শিক্ষার্থীদের পূর্ণ নম্বর দেয়ার ঘোষণা * এ্যানির আহ্বান, অবিলম্বে সব অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করতে হবে * ক্ষমতা বদলের নয়, কাঠামোগত পরিবর্তনের জন্যই জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থান: এনসিপি আহ্বায়ক * বাংলাবান্ধা সীমান্তে দেশের সর্বোচ্চ ফ্ল্যাগস্ট্যান্ড নির্মাণ শুরু * নারী বৈষম্য দূরীকরণে সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার * নির্বাচনের লক্ষ্যে আপাতত আন্দোলন স্থগিত: বিএনপি * খাগড়াছড়িতে অপহৃত শিক্ষার্থীদের উদ্ধারে যৌথ বাহিনীর অভিযান অব্যাহত * বাংলাদেশ-পাকিস্তান দ্বিপক্ষীয় বৈঠক: ১৫ বছর পর পুনঃশুরু সম্পর্কের নতুন দিগন্ত * তিন দিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম দ্বিগুণ ফুলবাড়ীতে, ভোগান্তিতে সাধারণ ক্রেতারা * আওয়ামী লীগের মতো দলে সাকিবের যোগ দেওয়া ঠিক হয়নি: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব

ক্ষমতা বদলের নয়, কাঠামোগত পরিবর্তনের জন্যই জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থান: এনসিপি আহ্বায়ক

repoter

প্রকাশিত: ০৬:১৬:৫২অপরাহ্ন , ১৯ এপ্রিল ২০২৫

আপডেট: ০৬:১৬:৫২অপরাহ্ন , ১৯ এপ্রিল ২০২৫

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: ছবি: সংগৃহীত

জুলাই মাসে সংঘটিত গণঅভ্যুত্থান কেবলমাত্র ক্ষমতা পরিবর্তনের উদ্দেশ্যে ছিল না বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, একটি দলকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে অন্য দলকে বসানোর পরিকল্পনা ছিল না, বরং এই আন্দোলনের লক্ষ্য ছিল রাষ্ট্র কাঠামোর মৌলিক ও গুণগত পরিবর্তনের মাধ্যমে জনগণের অধিকার সুরক্ষিত করা এবং একটি নতুন রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা।

শনিবার জাতীয় সংসদের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে এক সংলাপে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি জানান, গণঅভ্যুত্থানের ধারাবাহিকতায় এনসিপির রাজনৈতিক যাত্রা শুরু হয়েছে, যার ভিত্তি হলো দেশের তরুণ সমাজ। এই তরুণরাই গণঅভ্যুত্থানের প্রেরণা এবং শক্তির উৎস।

নাহিদ ইসলাম বলেন, এনসিপি জন্ম নিয়েছে সেই আকাঙ্ক্ষার ধারাবাহিকতায় যা জনগণের ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের ফসল। তিনি স্পষ্ট করেন, এই রাজনৈতিক সংগঠনের মূল লক্ষ্য হলো একটি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের সূচনা, যেখানে জনগণের অধিকার ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকবে, আর রাষ্ট্রীয় কাঠামো হবে জনগণকেন্দ্রিক ও জবাবদিহিমূলক।

তিনি আরও বলেন, অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে বারবার ব্যর্থতা এসেছে। ৯০-এর দশকের গণআন্দোলন নিয়ে আমরা বইয়ে পড়েছি, তবে সে সময়ের আকাঙ্ক্ষাগুলোর অনেকটাই অপূর্ণ রয়ে গেছে। এরই ধারাবাহিকতায় দেশে দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে একটি ফ্যাসিস্ট শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা পায়। তাই এবারের গণঅভ্যুত্থান যেন ব্যর্থ না হয়, সে বিষয়ে জাতির প্রতি অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি।

নাহিদ ইসলাম বলেন, ২০২৪ সালের জুলাইয়ে সংঘটিত গণঅভ্যুত্থানই বর্তমান সংলাপের পথ তৈরি করেছে। এই অভ্যুত্থানে বাংলাদেশের জনগণ ১৬ বছরের ফ্যাসিস্ট শাসককে অপসারণে বাধ্য করেছে, যার জন্য অনেক মানুষ শাহাদাত বরণ করেছেন, অনেকে আহত হয়েছেন। এই আত্মত্যাগের পেছনে ছিল একটি গণতান্ত্রিক ও মানবিক রাষ্ট্রের আকাঙ্ক্ষা।

সংলাপে তিনি বলেন, এনসিপির সংস্কার ভাবনা কেবল সীমিত রাজনৈতিক পরিবর্তনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এনসিপি সংস্কার বলতে বোঝে সেইসব মৌলিক পরিবর্তন, যা রাষ্ট্র কাঠামোর ভেতরে গুণগত ও গভীর রূপান্তর আনতে সক্ষম হবে। তিনি বলেন, অতীতে সংবিধান এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো দলীয়করণের শিকার হয়েছে। একব্যক্তিকেন্দ্রিক শাসন কাঠামোর ভিত তৈরি হয়েছিল সংবিধানে, যার ফলে যে দলই ক্ষমতায় থাকুক, স্বৈরাচারী ও ফ্যাসিস্ট প্রবণতা অব্যাহত ছিল।

তিনি বলেন, এই বাস্তবতায় এনসিপি রাষ্ট্র সংস্কারের প্রশ্নে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। বিশেষ করে সংবিধান পুনর্বিন্যাস, প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা সীমিতকরণ, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, এবং একটি নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার ওপর জোর দিচ্ছে দলটি।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে যে সুপারিশগুলো পাঠানো হয়েছিল, তার অধিকাংশের সঙ্গে এনসিপি একমত বলে জানিয়েছেন নাহিদ ইসলাম। তিনি আরও বলেন, শুধু রাজনৈতিক দল বা প্রতিষ্ঠান নয়, সমগ্র রাষ্ট্র কাঠামোকে পুনর্গঠনের জন্য একটি সুস্পষ্ট রোডম্যাপ তৈরি করতে হবে। এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য ঐকমত্য কমিশনকে কার্যকর ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান তিনি।

নাহিদ ইসলাম মনে করেন, রাষ্ট্রের কাঠামোগত দুর্বলতা এবং ক্ষমতার কেন্দ্রীভবনের কারণে বিগত সময়ে ফ্যাসিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। তাই শুধু সরকার পরিবর্তন নয়, এই কাঠামো ভেঙে একটি নতুন, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও মানবিক রাষ্ট্র গঠনের দিকেই এখন অগ্রসর হওয়া উচিত।

এনসিপির এই আহ্বায়ক তাঁর বক্তব্যে স্পষ্ট করেন যে, তাদের আন্দোলন কোনো ব্যক্তি বা দলের বিরুদ্ধে নয়, বরং একটি নতুন রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা। তিনি বলেন, জনগণের ভেতরে যে প্রত্যাশা ও আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে, তা ব্যর্থ হলে জাতির ভবিষ্যৎ আরও অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। তাই এই ঐতিহাসিক মুহূর্তকে কাজে লাগিয়ে ভবিষ্যতের রাষ্ট্র নির্মাণে সব পক্ষকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।

repoter