
ছবি: ছবি: সংগৃহীত
দেশের বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহে বড় ধরনের স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। চলতি অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি মাস শেষে এ খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি নেমে এসেছে মাত্র ৬ দশমিক ৮২ শতাংশে, যা গত ২১ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত সর্বশেষ হালনাগাদ তথ্যে এই চিত্র উঠে এসেছে।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৯ দশমিক ৮ শতাংশ। তবে ফেব্রুয়ারিতে বাস্তবায়িত প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক কম হয়েছে। আগের মাস জানুয়ারিতে ঋণ প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৭ দশমিক ১৫ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি শেষে দেশের বেসরকারি খাতে ব্যাংকগুলোর বিতরণকৃত ঋণের মোট স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ৮৪ হাজার ৩৮৩ কোটি টাকায়। এর আগের বছরের (২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি) একই সময়ে এ অঙ্ক ছিল ১৫ লাখ ৭৬ হাজার ৯১৪ কোটি টাকা। ফলে এক বছরে প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ৬ দশমিক ৮২ শতাংশ।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ব্যবসায়িক অনিশ্চয়তা, উচ্চ সুদহার, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির কারণে উদ্যোক্তারা নতুন করে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। ফলে ব্যাংকগুলোও ঋণ বিতরণে রক্ষণশীল হয়ে উঠেছে।
ব্যাংক খাত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বিগত সময়ে অনেক ভুয়া কোম্পানির মাধ্যমে ঋণ গ্রহণ করে অর্থপাচারের ঘটনা ঘটেছে। বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংক ও অন্যান্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা এই প্রবণতা নিয়ন্ত্রণে কঠোর হওয়ায় এ ধরনের ভুয়া কোম্পানির মাধ্যমে ঋণ নেয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। ফলে প্রকৃত বিনিয়োগ না বাড়ার পাশাপাশি ভুয়া চাহিদাও কমে গেছে, যার প্রভাব পড়ছে মোট ঋণ প্রবৃদ্ধিতে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ একটি দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের শক্তিমান নির্দেশক। তাই এ খাতে প্রবৃদ্ধির এই নিম্নহার দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক গতি প্রবাহে উদ্বেগজনক সংকেত বহন করে। নতুন করে বিনিয়োগ ও উৎপাদন কার্যক্রমে গতি না ফিরলে কর্মসংস্থান, রাজস্ব আয় ও প্রবৃদ্ধি হ্রাস পাওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে।
পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে অর্থনীতিবিদরা বেসরকারি খাতে আস্থা ফিরিয়ে আনতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ ও সুদহার নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগ গ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করছেন। পাশাপাশি প্রকৃত উদ্যোক্তাদের প্রণোদনা ও সহজ শর্তে ঋণ প্রদানেও গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।
repoter