
ছবি: ছবি: সংগৃহীত
গ্যাস খাতে আর্থিক ক্ষতি কমাতে বারবার মূল্যবৃদ্ধি করেও বাংলাদেশের সরকার গ্যাসের সরবরাহ বৃদ্ধি বা অপচয়-চুরি কমাতে সক্ষম হয়নি। সরকার গ্যাসের দাম বাড়ানোর মাধ্যমে নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে তা পূরণ হয়নি। ব্যবসায়ীরা মূল্যবৃদ্ধি হলেও অপ্রতুল সরবরাহের কারণে সমস্যায় পড়ছেন।
গ্যাস খাতে অপচয় ও চুরি কমানোর উদ্যোগগুলো কার্যকর হয়নি, যার কারণে দেশের গ্যাস খাতে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ বেড়েছে। সিস্টেম লস, গ্যাস চুরি ও দুর্নীতি দেশের গ্যাস খাতের সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর পরও সরকার গ্যাসের দাম বাড়ানোর পথে চলেছে, যা দেশের শিল্পখাতে বিনিয়োগ আকর্ষণ কমিয়ে দেয় এবং অসম প্রতিযোগিতার সৃষ্টি করে।
বিদ্যুৎ ও শিল্প খাতে গ্যাসের দাম বিগত তিন দশকে ২৫ দফায় বেড়েছে। ২০০৪ সাল থেকে ২০২৪ পর্যন্ত গ্যাসের দাম অনেক বেড়েছে, তবে সরবরাহের কোনো স্থিতিশীলতা আসেনি। বর্তমানে, নতুন শিল্প ও ক্যাপটিভ সংযোগে গ্যাসের দাম ৩৩ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে, যা নতুন বিনিয়োগকারীদের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এফআইসিসিআই ও ইউরোচ্যাম বাংলাদেশ, বিদেশী বিনিয়োগকারীদের সংগঠন, গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধিকে বৈষম্যমূলক ও বিভ্রান্তিকর আখ্যা দিয়েছে। তারা বলছে, নতুন ও বিদ্যমান গ্রাহকদের মধ্যে বৈষম্য এবং ভিন্ন ভিন্ন দাম প্রথা তৈরি করলে, তা দেশের প্রতিযোগিতামূলক বাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমিয়ে দেবে।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, গ্যাস খাতে দুর্নীতি ও চুরি কমানো না গেলে, গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া কখনোই দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি উন্নতি করতে সাহায্য করবে না। সরকারের কাছে গ্যাস খাতে আর্থিক ক্ষতি কমানোর জন্য সুস্পষ্ট পরিকল্পনা থাকা জরুরি।
গ্যাসের সরবরাহের সংকট মোকাবেলায় সরকারের তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে স্থানীয় গ্যাসের সরবরাহ পর্যাপ্ত নয় এবং এলএনজি আমদানির মাধ্যমে সেই ঘাটতি পূরণ করা হচ্ছে। ২০১৮ সালের পর থেকে এলএনজি আমদানিতে সরকারের খরচ বেড়েছে, যার ফলে ভর্তুকি পরিমাণও বৃদ্ধি পেয়েছে।
গ্যাস খাতে চুরি ও অপচয়ের কারণে দেশের অর্থনীতিতে এক ধরনের অস্বাভাবিক চাপ তৈরি হয়েছে। পেট্রোবাংলার কর্মকর্তাদের মতে, সিস্টেম লসের নামে যে পরিমাণ গ্যাস চুরি হয়ে যাচ্ছে, তার বেশিরভাগই অবৈধ সংযোগের মাধ্যমে চুরি করা হচ্ছে।
এদিকে, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, “গ্যাসের বর্তমান বাস্তবতা এবং সরবরাহ সংকটের কারণে দাম বাড়ানো ছাড়া কোনো বিকল্প ছিল না।” তিনি জানান, গ্যাসের দাম সামান্য বাড়ানো হয়েছে, তবে নতুন সংযোগের ক্ষেত্রে এই মূল্যবৃদ্ধি কার্যকর হবে।
গ্যাস খাতে উৎপাদন খরচ বাড়ানোর কারণে উদ্যোক্তারা বিনিয়োগ করতে আগ্রহী নন। গ্যাসের দাম বাড়ানোর পাশাপাশি বিদ্যুৎ খাতের সমস্যা এখনও সমাধান হয়নি, যার কারণে দেশীয় শিল্প ও ব্যবসা খাত সংকুচিত হয়ে পড়েছে।
repoter