
ছবি: ছবি: সংগৃহীত
অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) দুই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। তারা হলেন এনবিআরের সদস্য পদে দায়িত্ব পালনরত আবু সাইদ মো. মুস্তাক এবং কর কমিশনার পদে থাকা মো. গোলাম কবীর। বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) এনবিআরের পক্ষ থেকে তাদের বাধ্যতামূলক অবসর সংক্রান্ত দুটি পৃথক প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, চীন থেকে কোনো বৈধ উৎস ছাড়াই ৭২১ কোটি টাকা দেশে এনে তা রেমিট্যান্স হিসেবে প্রদর্শনের সুযোগ করে দিয়েছিলেন এই দুই কর্মকর্তা। তারা কর অঞ্চল-৫–এ দায়িত্ব পালনকালে একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট গঠন করেন এবং বিভিন্ন বড় প্রতিষ্ঠানের কর সংক্রান্ত অনিয়মের সমাধান তাদের দপ্তর থেকেই সরবরাহ করা হতো।
বিশেষ করে প্রতীক গ্রুপের মতো প্রতিষ্ঠানের শত শত কোটি টাকার কর সুবিধা প্রদানে তারা প্রত্যক্ষভাবে সহায়তা করেছেন বলে এনবিআরের অভ্যন্তরীণ তদন্তে উঠে এসেছে। এ ধরনের অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকায় এবং জাতীয় স্বার্থবিরোধী কার্যকলাপে সম্পৃক্ততার অভিযোগে এনবিআর কর্তৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয়।
সূত্র আরও জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই এই দুই কর্মকর্তা বিভিন্ন কর গ্রুপ ও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলেন এবং নিয়মিতভাবে কর আদায়ে প্রভাব বিস্তার করে আসছিলেন। অভ্যন্তরীণ তদন্তে একাধিক দাফতরিক অনিয়ম, ক্ষমতার অপব্যবহার ও কর আদায়ে অনৈতিক ছাড় দেয়ার তথ্য উঠে আসে। এনবিআর এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করে অবশেষে সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮–এর ৪৫ ধারার আলোকে তাদের চাকরি থেকে অবসরের সিদ্ধান্ত নেয়।
প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে, যেহেতু তাদের চাকরিকাল ২৫ বছর পূর্ণ হয়েছে এবং সরকার মনে করছে জনস্বার্থে তাদের সরকারি চাকরি থেকে অবসর দেওয়া প্রয়োজন, তাই উল্লিখিত আইনি বিধান অনুসারে তাদের বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হলো।
এ ঘটনায় কর ক্যাডারে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। কর্মকর্তাদের মতে, এটি একটি নজিরবিহীন সিদ্ধান্ত, যা ভবিষ্যতে সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য সতর্কবার্তা হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। এনবিআর-এর উচ্চপর্যায়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, ভবিষ্যতে আরও কিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও এ ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে, যাদের বিরুদ্ধে গুরুতর অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে।
সরকারি রাজস্ব ব্যবস্থাপনাকে স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক ও দক্ষ করতে সরকার জিরো টলারেন্স নীতিতে এগোচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
repoter