
ছবি: ছবি: সংগৃহীত
দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার হাটবাজারগুলোতে মাত্র তিন দিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ২৩ থেকে ২৫ টাকা বেড়ে গেছে। যা কিছুদিন আগেও ছিল ২৩ থেকে ২৫ টাকা, এখন সেই একই মানের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪৭ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে। হঠাৎ করে এমন দামবৃদ্ধি সাধারণ ক্রেতাদের মধ্যে চরম অস্বস্তি তৈরি করেছে।
শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) সকাল বেলায় ফুলবাড়ী পৌর বাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহে কোনো ঘাটতি না থাকলেও দাম বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে। বাজারে উপস্থিত একাধিক ক্রেতা জানান, রমজানের সময়েও পেঁয়াজের দাম বাড়েনি, অথচ এখন যখন তেমন কোনো মৌসুমি চাহিদা নেই, তখন কেন এই অযৌক্তিক দাম বৃদ্ধি তা কেউ বুঝে উঠতে পারছেন না।
রিকশাচালক আফজাল হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “কয়েকদিন আগেও ভালো মানের পেঁয়াজ ২৫ টাকা কেজি দরে কিনেছি। এখন সেই পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে ৫০ টাকা কেজিতে। এভাবে যদি দাম বাড়ে, তাহলে তো আমাদের পক্ষে সংসার চালানো অসম্ভব হয়ে পড়বে।”
শহরের আরেক ক্রেতা শহিদুল ইসলাম বলেন, “রমজানেও এত দাম বাড়েনি। এখন তো রমজানও শেষ। কী এমন হলো যে হঠাৎ কেজিপ্রতি ২৫ টাকা বেড়ে গেল? বাজারে নজরদারি থাকলে ব্যবসায়ীরা এমন দাম বাড়ানোর সাহস করত না।”
ফুলবাড়ী পৌর বাজারের একাধিক খুচরা ব্যবসায়ী জানান, দেশের পেঁয়াজ উৎপাদনের প্রধান অঞ্চল পাবনা, ফরিদপুর ও নাটোর থেকে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ আমদানি অব্যাহত থাকলেও স্থানীয় পাইকারি পর্যায়ে মজুতের কারণে বাজারে প্রভাব পড়েছে। তারা বলেন, পাইকারি ব্যবসায়ীরা এখন বেশি দামে পেঁয়াজ কিনে আনতে বাধ্য হচ্ছেন, ফলে তারাও বাধ্য হয়ে বেশি দামে বিক্রি করছেন। এতে করে লাভও খুব বেশি হচ্ছে না, কিন্তু সাধারণ মানুষ ভোগান্তিতে পড়ছে।
পাইকারি ব্যবসায়ী মিহির প্রামাণিক বলেন, “আমরা পেঁয়াজ বেশি দামে কিনতে বাধ্য হচ্ছি। মোকামে যারা বড় মাপের ব্যবসায়ী, তারা হঠাৎ করেই মজুত শুরু করেছে। এর ফলে মোকামে দাম বেড়ে গেছে। আমরা স্বল্প লাভে বিক্রি করলেও বাজারে দাম বেড়েছে বলে মনে হচ্ছে।”
আরেক ব্যবসায়ী সামসুল ইসলাম বলেন, “এটা কেবল স্থানীয় সমস্যা নয়। দেশের অন্যান্য জায়গায়ও দাম বাড়ছে। যদি মোকামের দাম আবার কমে আসে, তাহলে ফুলবাড়ীর বাজারেও পেঁয়াজের দাম কমে যাবে।”
পেঁয়াজের এই দামবৃদ্ধির পেছনে কারসাজির অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে পাইকারি বিক্রেতারা বলছেন, আমদানির উৎসেই দাম বাড়ায় তার প্রভাব পড়ছে খুচরা পর্যায়ে। তবে বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে লাভবান হওয়ার চেষ্টাই মূলত এই হঠাৎ দাম বৃদ্ধির পেছনে কাজ করছে।
এদিকে উপজেলা প্রশাসন বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে বলে জানিয়েছেন ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইসাহাক আলী। তিনি বলেন, “বাজার মনিটরিংয়ের মাধ্যমে আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখব। অযৌক্তিকভাবে কেউ পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এভাবে বাজারে হঠাৎ করে কোনো পণ্যের দাম দ্বিগুণ হয়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় চাপ বাড়ছে। ক্রেতারা মনে করছেন, বাজার ব্যবস্থাপনায় আরও কড়াকড়ি আর কার্যকর নজরদারি না থাকলে ভবিষ্যতে আরও পণ্যের ক্ষেত্রে এমন মূল্যবৃদ্ধির ঘটনা ঘটতে পারে।
repoter