ঢাকা,  রবিবার
২৮ ডিসেম্বর ২০২৫ , ০৯:২২ মিনিট

Donik Barta

শিরোনাম:

খ্রিষ্টানদের ওপর হামলা ও বড়দিনের ছুটি বাতিল: ভারতের নীরবতা কী ইঙ্গিত দিচ্ছে

repoter

প্রকাশিত: ১২:৩২:৪৬অপরাহ্ন , ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫

আপডেট: ১২:৩২:৪৬অপরাহ্ন , ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫

ভারতের পাতিয়ালায় সেন্ট পিটার গির্জায় বড়দিনের উৎসবে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের মানুষ। ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, পাতিয়ালা

ছবি: ভারতের পাতিয়ালায় সেন্ট পিটার গির্জায় বড়দিনের উৎসবে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের মানুষ। ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, পাতিয়ালা

ভারতে বড়দিনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন রাজ্যে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের মানুষ, গির্জা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের ওপর একাধিক হামলার ঘটনা ঘটেছে। একই সঙ্গে কিছু রাজ্যে বড়দিনের সরকারি ছুটি বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ে গভীর উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।

বড়দিনের ছুটি বাতিল: প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত না রাজনৈতিক বার্তা

কেরালা রাজ্যে সরকারি প্রতিষ্ঠানে বড়দিনের ছুটি বাতিল করে কর্মীদের বাধ্যতামূলকভাবে একটি রাষ্ট্রীয় কর্মসূচিতে উপস্থিত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়। অনেকের মতে, এটি কেবল প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নয়; বরং এটি ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের প্রতীকীভাবে প্রান্তিক করে দেওয়ার ইঙ্গিত বহন করে। বিশেষ করে কেরালার মতো রাজ্যে, যেখানে খ্রিষ্টান জনগোষ্ঠীর উপস্থিতি উল্লেখযোগ্য, সেখানে এই সিদ্ধান্ত ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার জন্ম দেয়।

অন্যান্য রাজ্যেও একই প্রবণতা

এই প্রবণতা কেবল কেরালায় সীমাবদ্ধ নয়। উত্তর প্রদেশসহ কয়েকটি রাজ্যে বড়দিনে স্কুল খোলা রাখা এবং শিক্ষার্থীদের নির্দিষ্ট রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নিতে বাধ্য করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলোর মতে, এসব সিদ্ধান্ত ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষাব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।

সহিংসতার বাড়তে থাকা চিত্র

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে খ্রিষ্টানদের বিরুদ্ধে সহিংসতার ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। এসব হামলার মধ্যে রয়েছে শারীরিক নির্যাতন, প্রার্থনায় বাধা, গির্জা ভাঙচুর, সামাজিক বর্জন এবং জোরপূর্বক ধর্মান্তরের অভিযোগ তুলে যাজক ও ধর্মযাজিকাদের হয়রানি।

সবচেয়ে বেশি সহিংসতার খবর পাওয়া গেছে উত্তর প্রদেশ, ছত্তিশগড়, রাজস্থান, পাঞ্জাব ও হরিয়ানা থেকে। অভিযোগ রয়েছে, কিছু ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা নিরপেক্ষ ছিল না।

আইনের অপব্যবহার ও ভয়ভীতির পরিবেশ

কয়েকটি রাজ্যে কার্যকর থাকা ধর্মান্তরবিরোধী আইন খ্রিষ্টানদের জন্য নতুন ঝুঁকি তৈরি করেছে। সাধারণ ধর্মীয় কর্মকাণ্ডকেও অনেক সময় অপরাধ হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। নাগরিক অধিকার সংগঠনগুলোর মতে, এসব আইনের অপব্যবহার করে একটি ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করা হচ্ছে।

মানবিক ও সামাজিক প্রভাব

এই পরিস্থিতির প্রভাব কেবল শারীরিক সহিংসতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের মানুষ মানসিক চাপ ও অনিশ্চয়তার মধ্যে বসবাস করছেন। তাঁদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান, প্রার্থনা সভা কিংবা উৎসব—সবকিছুই এখন নিরাপত্তাহীনতায় ঘেরা।

বৃহত্তর বার্তা

বিশ্লেষকদের মতে, বড়দিনের ছুটি বাতিল ও সহিংসতার ঘটনাগুলো বিচ্ছিন্ন নয়। এগুলো একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক ও আদর্শিক পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়, যেখানে সংখ্যাগুরুবাদী দৃষ্টিভঙ্গি ধীরে ধীরে রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক পরিসরে প্রভাব বিস্তার করছে। এটি শুধু খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের নয়, ভারতের সামগ্রিক গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার জন্যও এক গুরুতর চ্যালেঞ্জ।

repoter