
ছবি: -সংগৃহীত ছবি
ডাকসু নির্বাচন-পরবর্তী প্রতিক্রিয়ায় প্রতিরোধ পর্ষদ থেকে জিএস পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা মেঘমল্লার বসু জানিয়েছেন, যেকোনো প্রতিকূলতার মধ্যেও জীবন দিয়ে লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। বুধবার দুপুরে দেওয়া এক ফেসবুক পোস্টে তিনি ভোট-পরবর্তী পরিস্থিতি ও রাজনৈতিক বাস্তবতা নিয়ে নিজের মতামত প্রকাশ করেন।
তার বক্তব্যে উঠে আসে, পোস্ট-আইডিয়োলজি বলে কিছু নেই। বরং এটি কেবল মানুষকে ভ্রান্ত করার একটি কৌশল। ব্যালট গণনার সঙ্গেই এসব ভ্রান্ত ধারণার অবসান ঘটেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। মেঘমল্লারের মতে, প্রতিক্রিয়ার শক্তির বিরুদ্ধে প্রগতির শক্তিকেই দাঁড়াতে হবে। তিনি জানান, এবারের নির্বাচনে প্রবল প্রতিক্রিয়ার স্রোতে অনেক শক্তি ভেসে গেলেও অপশিবিরের বাইরে একমাত্র প্রার্থী হিসেবে জয়ী হয়েছেন হেমা চাকমা, যিনি যাবতীয় অপপ্রচারের মাঝেও টিকে গেছেন।
নিজের প্রাপ্ত ভোট নিয়েও মন্তব্য করেন ছাত্র ইউনিয়নের এই নেতা। তিনি জানান, প্রায় পাঁচ হাজার ভোট পেয়েছেন তিনি, যদিও অমি পিয়াল, পিনাকী, জিয়া হাসান, কুলদা রায়দের সম্মিলিত সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে তাকে। এরপরও এই ফলাফল তাকে আশাবাদী করেছে।
মেঘমল্লার আরও উল্লেখ করেন, যাদের সম্ভাব্য বিজয়ী হিসেবে ধরা হচ্ছিল, সেই বাগছাস, নতুন স্বতন্ত্র জোট কিংবা ছাত্রদল—কেউই শেষ পর্যন্ত টিকতে পারেনি। তাদের হাতে যথেষ্ট রিসোর্স ও কৌশলবিদ থাকা সত্ত্বেও পরাজিত হয়েছে। তিনি স্বীকার করেন যে, ভোটে অনিয়ম হয়েছে, তবে সেই অনিয়ম মাথায় রেখেই তিনি এই মূল্যায়ন করেছেন। তার মতে, বামপন্থীদের যদি আঠারোটি হলে সংগঠন থাকত, তবে পুরো পরিস্থিতি ভিন্ন হতে পারত।
তিনি মনে করেন, মানুষের আস্থা অর্জনের জন্য বিকল্প দৃষ্টিভঙ্গি সামনে আনা জরুরি। মানুষের সঙ্গে চ্যালেঞ্জ নিয়ে কথা বলা ও নিজের বিশ্বাসে দৃঢ় থাকা ছাড়া অন্য কোনো পথ নেই। শত্রুর সামনে দৃঢ় থেকে আর মানুষের সামনে বিনয়ী হয়ে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ডাক দেন তিনি।
নিজেকে একজন দীর্ঘমেয়াদি সংগ্রামী হিসেবে উল্লেখ করে মেঘমল্লার বলেন, তিন দশক ধরে পিছিয়ে থাকলেও পনেরো দিনের মধ্যে সব পরিবর্তন সম্ভব নয়। তবে এটিই একটি ভালো শুরু। মানুষের আস্থা অর্জন করা সম্ভব এবং অপমান, অত্যাচার ও নিপীড়নকে বুক পেতে নেওয়ার মধ্য দিয়েই সেই আস্থা তৈরি হবে। তার ভাষায়, যত আঘাত সহ্য করা যাবে, তত মানুষের ভরসা অর্জন করা সম্ভব। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, অন্ধকার যতই গভীর হোক না কেন, সেটিই ভোরের আগমনের পূর্বাভাস।
অতীত ইতিহাসের উদাহরণ টেনে তিনি আরও বলেন, ১৯৪৮ সালে পূর্ব পাকিস্তানে কমিউনিস্টদের দেখা গেলেই মানুষ তাদের পুলিশের হাতে তুলে দিত। কিন্তু মাত্র বিশ বছরের মধ্যে সেই কমিউনিস্টদের নেতৃত্বেই বাংলাদেশ রাষ্ট্র গঠিত হয়েছে। কোনো শর্টকাট নেই—এই শিক্ষা নিয়েই তিনি বলেন, তাদের লড়াই জীবন দিয়েই চালিয়ে যেতে হবে। শেষ পর্যন্ত তিনি সমর্থক ও সহযোদ্ধাদের উদ্দেশে লেখেন, এখন শুধু একটু বিশ্রাম নিয়ে আবার লড়াইয়ের প্রস্তুতি নেওয়া দরকার।
মেঘমল্লারের এই প্রতিক্রিয়া ডাকসু নির্বাচনের পর বামপন্থী ছাত্র রাজনীতির ভিন্ন মাত্রা উন্মোচন করেছে। প্রতিকূলতা, অনিয়ম, অপপ্রচার—সবকিছুর মাঝেও তিনি যে সংগ্রামের প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন, তা ভবিষ্যতে প্রগতিশীল রাজনীতির জন্য নতুন প্রেরণা হতে পারে।
repoter