
ছবি: -সংগৃহীত ছবি
জাতীয়করণ বঞ্চিত পাঁচ হাজার বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণের দাবিতে রাজধানীতে বিক্ষোভে নামেন শিক্ষকরা। প্রেস ক্লাব থেকে যমুনা অভিমুখে যাওয়া তাদের মিছিল হাইকোর্ট সংলগ্ন কদম ফোয়ারা এলাকায় পৌঁছালে বাধা দেয় পুলিশ। পরে জলকামানের পানি ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়। এতে কয়েকজন শিক্ষক আহত হন।
সোমবার বিকেল চারটার দিকে প্রেস ক্লাব থেকে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার দিকে রওনা দেন শিক্ষকরা। তবে কদম ফোয়ারায় পুলিশের বাধার মুখে তারা পড়েন। মুহূর্তেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। শিক্ষকরা শ্লোগান দিতে থাকলে এক পর্যায়ে পুলিশ জলকামান চালায় এবং একাধিক সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। ভয় ও আতঙ্কে মিছিল ভেঙে যায় এবং আন্দোলনকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়েন। পরে পুলিশ তাদের পল্টনমুখী করে দেয়।
এর আগে সকাল দশটা থেকেই প্রেস ক্লাব এলাকায় অবস্থান নেন শিক্ষকরা। বাংলাদেশ বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সাধারণ শিক্ষক ঐক্য পরিষদের ব্যানারে তারা দিনভর বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন। বক্তৃতায় শিক্ষকরা জানান, ২০১৩ সালের ৯ জানুয়ারি সরকার সারা দেশের বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণের ঘোষণা দিলেও তখনকার রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে অনধিক পাঁচ হাজার বিদ্যালয় বাদ পড়ে যায়। জাতীয়করণ করা হয় ২৬ হাজার ১৯৩টি বিদ্যালয়।
শিক্ষকদের দাবি, এরপর থেকে ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন সময়ে সরকারি চিঠি ও সুপারিশ দেওয়া হলেও বাদ পড়া বিদ্যালয়গুলোর জাতীয়করণ আর হয়নি। ২০১৬ সালের জুলাইয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জেলা পর্যায়ে যাচাই-বাছাই করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকেও আবেদনকৃত বিদ্যালয়গুলোর সারসংক্ষেপ পাঠানোর নির্দেশনা আসে।
শিক্ষকরা অভিযোগ করেন, বহুবার আন্দোলন করার পরও কোনো সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। চলতি বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়। এর পর ২৮ ফেব্রুয়ারি কনসালটেশন কমিটি সুপারিশ করে, অনধিক পাঁচ হাজার বিদ্যালয় দ্রুত জাতীয়করণ করা হোক। কিন্তু এতকিছুর পরও অগ্রগতি নেই।
মিছিল শেষে সাধারণ শিক্ষক ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক মো. নওশাদ আহমেদ বলেন, “বর্তমান সরকার শিক্ষা-বান্ধব সরকার। আমরা প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের চিঠি এবং কনসালটেশন কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী অবিলম্বে বাদ পড়া বিদ্যালয়গুলোর জাতীয়করণ চাই।”
অন্যদিকে সংগঠনের সমন্বয়ক মাহবুবা মালা বলেন, “জাতীয়করণ না হওয়ায় শিক্ষকরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। আমরা প্রতিদিন শিশুদের পাঠদান করি, অথচ আমাদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটেনি।”
শিক্ষকরা অভিযোগ করেন, শিক্ষা ও সমাজ গঠনের কাজে নিবেদিত থেকেও তারা অবহেলিত। তারা শিক্ষাসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রতি এবং প্রধান উপদেষ্টার কাছে সরাসরি হস্তক্ষেপের আহ্বান জানান।
প্রেস ক্লাব থেকে যমুনা অভিমুখে যাওয়া বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশের হস্তক্ষেপে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লেও শিক্ষকরা তাদের দাবি থেকে সরে আসেননি। তারা জানান, জাতীয়করণের ন্যায্য দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।
repoter