
ছবি: -সংগৃহীত ছবি
বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক রুমিন ফারহানা বলেছেন, গত এক বছরে অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে দেশের কোনো ক্ষেত্রেই উন্নতি হয়নি। একটি টকশোতে অংশ নিয়ে তিনি বলেন, “ভালো হোক মন্দ হোক, দেশের অগ্রগতি তখনই হয় যখন রাজনীতি রাজনীতিবিদদের হাতে থাকে। কিন্তু গত এক বছরে এই সরকারের অধীনে এমন কোনো দিক দেখাতে পারবেন না যেখানে বাংলাদেশ এগিয়েছে।”
তিনি দাবি করেন, দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতিকে রাজনীতিবিদদের হাত থেকে সরিয়ে দেওয়ার একটি পরিকল্পনা চালু রয়েছে। তার ভাষায়, “এর সূচনা হয়েছিল ২০০৬-০৭ সালের ১/১১ রাজনৈতিক পরিবর্তনের সময় থেকে। মূলধারার দুটি রাজনৈতিক দলকে দুর্বল করার চেষ্টা তখনই শুরু হয়। অথচ এই দলগুলোর হাত দিয়েই দীর্ঘ সময় দেশ শাসিত হয়েছে, বিরোধী দল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছে, আবার ক্ষমতায় থেকেও দেশ পরিচালনা করেছে। তাদের রাজনীতি থেকে দূরে সরানোর ষড়যন্ত্র তখন থেকেই শুরু হয়েছে।”
রুমিন ফারহানা অভিযোগ করেন, গত ৫ আগস্টের পর নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আসার পর থেকে বিএনপির বিরুদ্ধে ধারাবাহিকভাবে বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা চালানো হচ্ছে। “বলা হচ্ছে বিএনপি নেতাকর্মীরা নানা ধরনের দুষ্কর্ম করছে। এর জবাবে বিএনপি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে, বহিষ্কার করছে। কিন্তু বিএনপির তো আর রাষ্ট্রক্ষমতা নেই। যে সরকার ক্ষমতায় আছে, তাদের উচিত ছিল সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া। সেখানে আমরা কোনো জবাবদিহি দেখছি না,” তিনি বলেন।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে জনতার সহিংসতার ঘটনা ঘটছে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। “যেখানে সেনাবাহিনী ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার নিয়ে মাঠে আছে, সেখানেও এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। এটা কোনো স্বাভাবিক বিষয় নয়,” তিনি মন্তব্য করেন।
তার মতে, ধীরে ধীরে রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ রাজনীতিবিদদের হাত থেকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে এবং এই প্রক্রিয়াকে উৎসাহিত করেছে আওয়ামী লীগ। “শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের এখানে বড় অবদান রয়েছে। তারা এই ‘ডিপলিটিসাইজেশন’-এর ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে। ১/১১ থেকে যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল, সেটি এখনো চলছে,” রুমিন ফারহানা বলেন।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপির এই নেত্রী বলেন, মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে তার অবস্থান বাস্তবে প্রতিফলিত হচ্ছে না। তিনি বলেন, “ড. ইউনূস বলেছিলেন, আমি আপনাদের দ্বার খুলে দিলাম, আপনারা ইচ্ছামতো আমার সমালোচনা করুন। কিন্তু বাস্তব চিত্র হলো, যারা সমালোচনা করেছে তাদের মধ্যে বেশিরভাগ এখন কারাগারে। এটি কি মত প্রকাশের স্বাধীনতার উদাহরণ হতে পারে?”
রুমিন ফারহানা মনে করেন, দেশের রাজনৈতিক প্রক্রিয়া থেকে মূল শক্তিগুলোকে সরিয়ে দেওয়ার যে ধারাবাহিকতা চলছে, তার প্রভাব পড়ছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ওপর। তিনি বলেন, “রাজনীতিকে যারা এতদিন পরিচালনা করেছে, তাদের হাত থেকে তা সরিয়ে দিলে দেশে কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে না। বরং এতে রাজনৈতিক শূন্যতা তৈরি হবে এবং সেখান থেকেই অনিশ্চয়তা বাড়বে।”
তিনি অভিযোগ করেন, সরকার গণতন্ত্র ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, বাস্তবে তা কার্যকর হচ্ছে না। বরং বিরোধী দলগুলোকে কোণঠাসা করার প্রচেষ্টা চলছে। “দেশে যদি সত্যিকারের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হয়, তবে রাজনীতিকে রাজনীতিবিদদের কাছেই ফিরিয়ে দিতে হবে। নইলে রাজনৈতিক শূন্যতা বাড়বে এবং তার ফল ভুগবে জনগণ,” তিনি মন্তব্য করেন।
টকশোতে দেওয়া এসব মন্তব্যের মাধ্যমে রুমিন ফারহানা আবারও পুনর্ব্যক্ত করলেন যে, দেশের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কাঠামো থেকে বিএনপিকে পরিকল্পিতভাবে দুর্বল করার চেষ্টা চলছে। তার দাবি, গত এক বছরে দেশের কোনো ক্ষেত্রেই ইতিবাচক অগ্রগতি হয়নি বরং বিভাজন, অনিশ্চয়তা ও দমননীতিই বেড়েছে।
repoter