
ছবি: -সংগৃহীত ছবি
ফিলিস্তিনপন্থী আন্দোলনের সক্রিয় নেতা মাহমুদ খলিলকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কারের নির্দেশ দিয়েছেন লুইজিয়ানার এক বিচারক। রায়ের মাধ্যমে বলা হয়েছে, খলিলকে হয় আলজেরিয়া নয়তো সিরিয়ায় ফিরে যেতে হবে।
বুধবার আদালতে তার গ্রিন কার্ড আবেদনের শুনানিতে প্রকাশ পায়, তিনি আবেদনপত্রে ইচ্ছাকৃতভাবে তথ্য গোপন করেছিলেন। এ কারণেই তার স্থায়ী বসবাসের আবেদনের বৈধতা নষ্ট হয়েছে এবং বহিষ্কারের আইনি ভিত্তি তৈরি হয়েছে।
আদালতের রায়ের প্রতিক্রিয়ায় খলিল এক বিবৃতিতে বলেন, “এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, ট্রাম্প প্রশাসন আমার মতপ্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করার জন্য এমন পদক্ষেপ নিয়েছে।” তিনি যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের স্থায়ী বাসিন্দা। তার স্ত্রী একজন মার্কিন নাগরিক এবং তাদের একটি সন্তানও রয়েছে।
খলিলকে তিন মাস আগে অভিবাসন কর্মকর্তারা আটক করেছিলেন। অভিযোগ ছিল, তিনি যুক্তরাষ্ট্রে থেকে প্রকাশ্যে ফিলিস্তিনপন্থী আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এই আন্দোলনের কারণে তিনি আন্তর্জাতিক মহলে পরিচিত একটি মুখ হয়ে উঠেছেন। খলিলের ছাত্রজীবনও প্রভাবশালী ছিল—তিনি নিউইয়র্কের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন এবং সেখান থেকেই তার রাজনৈতিক সচেতনতা ও সক্রিয়তা বৃদ্ধি পায়।
তাকে আটক করার পর মানবাধিকার সংস্থা ও বিভিন্ন অভিবাসী অধিকার সংগঠন তার মুক্তির দাবি জানায়। ব্যাপক আলোচনার পর চলতি বছরের জুন মাসে তিনি জামিনে মুক্তি পান। তবে তখন থেকেই তার বিরুদ্ধে বহিষ্কারের হুমকি বজায় ছিল। এবার আদালতের রায়ে সেই হুমকি বাস্তবে রূপ নিল।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, খলিল তার গ্রিন কার্ড আবেদনে পূর্ববর্তী রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড এবং বিদেশ ভ্রমণের তথ্য গোপন করেছিলেন। এ তথ্য গোপন করা অভিবাসন আইনের গুরুতর লঙ্ঘন। তাই আদালত তাকে যুক্তরাষ্ট্রে থাকার অনুমতি না দিয়ে ফেরত পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
খলিলের আইনজীবীরা অবশ্য বলছেন, বিষয়টি সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তাদের দাবি, খলিলের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং রাজনৈতিক অবস্থানই মূলত তার বিরুদ্ধে প্রশাসনের এই অবস্থানের কারণ। তারা রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
ফিলিস্তিনপন্থী আন্দোলনের কর্মী ও সমর্থকেরা বলছেন, খলিলকে বহিষ্কারের পদক্ষেপ কেবল একজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রে ফিলিস্তিন ইস্যুতে মতপ্রকাশ সীমিত করার এক কৌশল। তারা মনে করেন, এর মাধ্যমে অন্য আন্দোলনকর্মীদের ভয় দেখানো হচ্ছে, যাতে তারা প্রকাশ্যে আর কোনো অবস্থান না নেয়।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা, বিবিসি ও দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, খলিলকে বহিষ্কার করা হলে তিনি আলজেরিয়া অথবা সিরিয়ায় যেতে বাধ্য হবেন। তবে সেখানে তার নিরাপত্তা নিয়েও উদ্বেগ রয়েছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো ইতিমধ্যে সতর্ক করেছে যে, রাজনৈতিক কারণে বহিষ্কার আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন লঙ্ঘন করতে পারে।
মাহমুদ খলিলের পরিবার বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রেই বসবাস করছে। স্ত্রী একজন মার্কিন নাগরিক হওয়ায় তিনি দেশে থাকার অধিকার রাখেন। ফলে রায়ের পর তাদের পারিবারিক ভবিষ্যৎও অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে।
এই বহিষ্কারাদেশ কেবল যুক্তরাষ্ট্রে নয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অনেকেই বলছেন, এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনের অভিবাসন নীতির কড়াকড়ির আরেকটি উদাহরণ। অন্যদিকে সমালোচকরা মনে করছেন, এতে যুক্তরাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও বাকস্বাধীনতা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
repoter