
ছবি: -সংগৃহীত ছবি
রাজধানী ঢাকার বাতাস আজও অস্বাস্থ্যকর অবস্থায় রয়েছে। আন্তর্জাতিক বায়ুমান পরিমাপক সংস্থা আইকিউএয়ারের তথ্য অনুযায়ী, শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকার বায়ুমান সূচক (AQI) ছিল ১০৭। এই মানদণ্ড অনুযায়ী, বাতাস সংবেদনশীল স্বাস্থ্যের মানুষদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
বিশ্বের দূষিত বাতাসের শহরগুলোর তালিকায় ঢাকার অবস্থান ষষ্ঠ। তালিকার শীর্ষে রয়েছে ইথিওপিয়ার রাজধানী আদ্দিস আবাবা, যেখানে শনিবার AQI রেকর্ড করা হয়েছে ১৬০। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ভারতের রাজধানী দিল্লি, যার AQI-ও ১৬০। এছাড়া শীর্ষ পাঁচে রয়েছে পাকিস্তানের লাহোর (১৫৯), কঙ্গোর রাজধানী কিনশাসা (১৫৮) এবং ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তা (১২৯)।
বায়ুমানের বৈশ্বিক মানদণ্ড
আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, AQI যদি ৫০-এর নিচে থাকে, তবে তা বিশুদ্ধ বাতাস হিসেবে ধরা হয়।
-
৫০ থেকে ১০০: মাঝারি মানের বায়ু।
-
১০১ থেকে ১৫০: সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর।
-
১৫১ থেকে ২০০: সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর।
-
২০১ থেকে ৩০০: খুব অস্বাস্থ্যকর।
-
৩০১-এর বেশি: বিপজ্জনক, যা মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে।
আজকের পরিস্থিতি অনুযায়ী, ঢাকার বাতাস ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’। বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন, শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি বা হৃদরোগে ভুগছেন এমন ব্যক্তিদের দীর্ঘ সময় বাইরে না থাকার জন্য। বিশেষ করে সকালে ও রাতে, যখন বাতাস ভারী থাকে, তখন ঝুঁকি আরও বেশি।
স্বাস্থ্যঝুঁকি ও বৈশ্বিক প্রভাব
বায়ুদূষণ এখন বিশ্বের অন্যতম বড় স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ। ২০২৩ সালের নভেম্বরে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নাল (BMJ)-এ প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়, কেবল জীবাশ্ম জ্বালানিজনিত বায়ুদূষণের কারণে প্রতিবছর প্রায় ৫২ লাখ মানুষ মারা যায়।
অন্যদিকে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) তথ্য অনুযায়ী, গৃহস্থালি ও পারিপার্শ্বিক বায়ুদূষণের সম্মিলিত প্রভাবে প্রতিবছর প্রায় ৬৭ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এ হার তুলনামূলক বেশি, যেখানে শিল্পকারখানা, যানবাহন ও ইটভাটার ধোঁয়া বায়ুদূষণের প্রধান উৎস।
ঢাকার চ্যালেঞ্জ
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকায় বায়ুদূষণের প্রধান উৎস হলো –
-
যানবাহনের ধোঁয়া,
-
নির্মাণকাজ থেকে ধুলা,
-
শিল্পকারখানার নির্গমন,
-
ইটভাটা ও আবর্জনা পোড়ানো।
শীতকালে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়, কারণ ঠান্ডা আবহাওয়ায় ধুলো ও ধোঁয়া বাতাসে স্থির হয়ে থাকে, ফলে AQI দ্রুত বেড়ে যায়।
করণীয়
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও পরিবেশবিদরা মনে করেন, নগরবাসীকে সুরক্ষিত রাখতে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। এর মধ্যে রয়েছে—
-
পরিবেশবান্ধব গণপরিবহন চালু করা,
-
নির্মাণকাজে ধুলা নিয়ন্ত্রণে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার,
-
শিল্পকারখানায় নির্গমন নিয়ন্ত্রণ,
-
ইটভাটা আধুনিকায়ন,
-
এবং গণসচেতনতা বৃদ্ধি।
ঢাকাবাসীর জন্য মাস্ক ব্যবহার, ঘরে এয়ার পিউরিফায়ার রাখা এবং অপ্রয়োজনে বাইরে দীর্ঘ সময় না থাকার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বায়ুদূষণ কমানো না গেলে এর প্রভাব শুধু স্বাস্থ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং অর্থনীতি, শিক্ষা ও সামগ্রিক উন্নয়নেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
repoter