
ছবি: -সংগৃহীত ছবি
বাংলাদেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি গুরুতর রূপ ধারণ করেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আরও ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ পর্যন্ত চলতি বছরে ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা ১৮৭ জনে পৌঁছেছে। একই সময়ে ৬৬৮ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের বিভাগের ভিত্তিতে বণ্টন করলে দেখা যায় বরিশাল বিভাগে ১৫৮ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১০৬ জন, ঢাকা বিভাগের শহরের বাইরের এলাকায় ১২৬ জন, ঢাকা উত্তর সিটিতে ৯৪ জন এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ৭৩ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এছাড়াও খুলনা বিভাগে ৪১ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ৩০ জন, রাজশাহী বিভাগে ৩৫ জন এবং রংপুর বিভাগে ৫ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
ডেঙ্গুর কারণে গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ৫ জনের মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩ জন এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ২ জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এই মৃতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছে এবং সকলকে সতর্ক থাকার জন্য নির্দেশনা জারি করেছে।
এ বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি হওয়া মোট রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৩ হাজার ৮৪১ জন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গু এখনও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিস্তারমান। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং স্থানীয় প্রশাসন মশা নিধন, ফোকাসড স্প্রে ও রোগীদের দ্রুত চিকিৎসা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নিচ্ছে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করাচ্ছেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে স্বাস্থ্য সচেতনতা অত্যন্ত জরুরি। বাড়ির আশেপাশে পানি জমে থাকা, মশার প্রজননের জন্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করা উচিত নয়। মশারি ব্যবহার, মশার ধোঁয়া এবং প্রয়োজনীয় পরিচ্ছন্নতার মাধ্যমে ডেঙ্গুর বিস্তার রোধ করা সম্ভব।
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে বেশিরভাগই হঠাৎ জ্বর, মাথাব্যথা, পেশী ও জয়েন্টের ব্যথা এবং বমি-বমি ভাবের সঙ্গে চিকিৎসা নিচ্ছেন। হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের জন্য পর্যাপ্ত বিছানা ও ওষুধ সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সতর্ক করেছে, জ্বর, র্যাশ বা অন্যান্য ডেঙ্গুর উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত হাসপাতালে যোগাযোগ করতে হবে।
প্রায়শই দেখা যায়, শহরাঞ্চল এবং নদী-নালা সংলগ্ন এলাকায় মশার প্রজনন বেশি হয়। তাই সেসব এলাকায় বিশেষ মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও স্থানীয় প্রশাসনের যৌথ তৎপরতা চলমান। মশার বৃদ্ধি রোধে নিয়মিত স্প্রে কার্যক্রম চালানো হচ্ছে এবং রোগীদের সেবা নিশ্চিত করার জন্য হাসপাতালগুলো প্রস্তুত।
ডেঙ্গুর কারণে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, যদি নাগরিক সচেতন না হন এবং সরকারি তৎপরতা যথাযথভাবে অনুসরণ না করা হয়, তাহলে পরিস্থিতি আরও গুরুতর হয়ে উঠতে পারে। ডেঙ্গু মোকাবিলায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া অপরিহার্য।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এই মুহূর্তে দেশের নাগরিকদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছে। ডেঙ্গুর বিস্তার রোধে সরকারি ও আধা-সরকারি প্রতিষ্ঠান, স্থানীয় প্রশাসন, স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, হাসপাতাল এবং সাধারণ জনগণকে একযোগে কাজ করার জন্য নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।
চলতি বছর ডেঙ্গু পরিস্থিতি তদারকি এবং নিয়ন্ত্রণে রাখা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নাগরিকদের সচেতনতা, পরিচ্ছন্নতা এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা অপরিহার্য, যাতে ডেঙ্গু সংক্রমণ এবং মৃত্যু কমানো যায়।
repoter