
ছবি: -সংগৃহীত ছবি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনকে ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন। মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে তারা ভিসির বাসভবনে গিয়ে এ সাক্ষাৎ করেন।
সাক্ষাৎ শেষে ভিসি সাংবাদিকদের জানান, ছাত্রদল নেতারা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তিনটি বিষয়ে তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাদের প্রথম উদ্বেগ ছিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জামায়াতে ইসলামী দ্বারা প্রভাবিত কি না। দ্বিতীয়ত, বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটের বাইরে জামায়াতের নেতাকর্মীরা জড়ো হয়েছে—এ বিষয়ে উপাচার্য অবগত আছেন কি না, তা তারা জানতে চান। তৃতীয়ত, নির্বাচন প্রক্রিয়ায় কোনো ধরনের ‘ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং’ বা কারচুপি হচ্ছে কি না, সে নিয়েও তারা শঙ্কা প্রকাশ করেন।
এই প্রসঙ্গে ভিসি নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, “যে কোনো অংশীজনের মতামত আমরা সম্মান করি। মাঝে মাঝে ছাত্রদল নেতারা দেখা করতে আসেন এবং তাদের বক্তব্য জানান। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শুধু জামায়াত নয়, অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের প্রভাবেও পরিচালিত নয়।” তিনি যোগ করেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিরপেক্ষভাবে কাজ করছে এবং সব পক্ষের অংশগ্রহণে নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
এর আগে ভোটগ্রহণ শেষে ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের সহ-সভাপতি (ভিপি) পদপ্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান অভিযোগ করেন, নির্বাচনে নানা ধরনের অনিয়ম ঘটছে। তিনি দাবি করেন, এখন পর্যন্ত তারা মোট ১২টি অভিযোগ জমা দিয়েছেন, তবে এর কোনোটিরও সমাধান হয়নি। আবিদুল বলেন, কিছু কেন্দ্রে ব্যালট পেপারে আগেই নির্দিষ্ট প্রার্থীর নামে চিহ্ন দেওয়া ছিল এবং এ বিষয়ে তারা লিখিত অভিযোগ করলেও প্রশাসন কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি।
ডাকসু নির্বাচন সবসময়ই রাজনৈতিক দলগুলোর আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাজনীতির পাশাপাশি জাতীয় রাজনীতিতেও এর প্রভাব পড়ায় নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিয়ে নানা মহলে আলোচনা হয়। এবারের নির্বাচন ঘিরে বিভিন্ন প্যানেলের প্রার্থীরা শুরু থেকেই প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে আসছেন। বিশেষ করে ছাত্রদল সমর্থিত প্রার্থীরা অভিযোগ করছেন, প্রশাসন তাদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করছে এবং তাদের অভিযোগগুলোকে গুরুত্ব দিচ্ছে না।
অন্যদিকে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে বারবার বলা হয়েছে, নির্বাচন নিরপেক্ষভাবে পরিচালনার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। উপাচার্য এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জোর দিয়ে বলেছেন, কোনো রাজনৈতিক দল বা প্রভাবশালী গোষ্ঠীর নির্দেশে তারা কাজ করছেন না। তবে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ ও প্রতিবাদে নির্বাচনী পরিবেশে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে।
ডাকসু নির্বাচন ঐতিহাসিকভাবেই ছাত্রদের গণতান্ত্রিক নেতৃত্ব গঠনের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে বিবেচিত। এই নির্বাচনকে ঘিরে ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা সবসময়ই তীব্র থাকে। এ কারণেই প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুললে বিষয়টি শুধু বিশ্ববিদ্যালয় নয়, বরং জাতীয় রাজনীতিতেও আলোচনার জন্ম দেয়।
এবারের নির্বাচনে ছাত্রদলসহ বিভিন্ন প্যানেলের প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ভোটগ্রহণ শেষ হলেও অভিযোগ ও পাল্টা অভিযোগের কারণে ফলাফলের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। ছাত্রদল নেতারা অভিযোগ করেছেন, তাদের অভিযোগগুলো তদন্ত না করলে নির্বাচনের ফলাফলকে প্রশ্নবিদ্ধ মনে হবে। অন্যদিকে প্রশাসনের দাবি, প্রমাণ ছাড়া কোনো অভিযোগের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব নয়।
সামগ্রিকভাবে ডাকসু নির্বাচন শেষ হলেও, নির্বাচনী অনিয়ম, প্রশাসনের নিরপেক্ষতা এবং অভিযোগ ব্যবস্থাপনা নিয়ে বিতর্ক থামেনি। ছাত্রদলের অভিযোগ, ভিসির কাছে তাদের উদ্বেগ জানানো সত্ত্বেও এখনো পর্যন্ত কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ফলে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার আগেই এটি নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভক্তি ও অসন্তোষ তৈরি হয়েছে।
repoter