
ছবি: -সংগৃহীত ছবি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে। বুধবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে নির্বাচন কমিশন আনুষ্ঠানিকভাবে ফল প্রকাশ করে। ফলাফলে স্পষ্ট হয়েছে, ডাকসুর শীর্ষ তিন পদ—সহ-সভাপতি (ভিপি), সাধারণ সম্পাদক (জিএস) এবং সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস)—সবকটিতেই জয়ী হয়েছেন ছাত্রশিবির-সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থীরা।
ভিপি পদে নির্বাচিত হয়েছেন ছাত্রশিবির-সমর্থিত মো. আবু সাদিক, যিনি সাদিক কায়েম নামেও পরিচিত। তিনি পেয়েছেন ১৪ হাজার ৪২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদল-সমর্থিত মো. আবিদুল ইসলাম খান পান ৫ হাজার ৭০৮ ভোট। স্বতন্ত্র প্রার্থী উমামা ফাতেমা পান ৩ হাজার ৩৮৯ ভোট, আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী শামীম হোসেন পান ৩ হাজার ৮৮৪ ভোট। এ ফলাফলে ভিপি পদে সাদিক কায়েমের জয় নিশ্চিত হয় বড় ব্যবধানে।
জিএস পদে জয় পেয়েছেন শিবিরের এস এম ফরহাদ। তিনি ১০ হাজার ৭৯৪ ভোট পান। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদল নেতা তানভীর বারী হামীম পান ৫ হাজার ২৮৩ ভোট। প্রতিরোধ পর্ষদের প্রার্থী মেঘমল্লার বসু ৪ হাজার ৯৪৯ ভোট পেয়ে তৃতীয় হন। ফরহাদের এই বিজয় জিএস পদে শিবির-সমর্থিত প্রার্থীর আধিপত্যকে নিশ্চিত করেছে।
এজিএস পদে জয় এসেছে মুহা. মহিউদ্দীন খানের হাতে, যিনি শিবির-সমর্থিত প্যানেল থেকে প্রার্থী হয়েছিলেন। তিনি পেয়েছেন ১১ হাজার ৭৭২ ভোট। এই পদে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ছাত্রদলের প্রার্থী তানভীর আল হাদী মায়েদ, যিনি পেয়েছেন ৫ হাজার ৬৪ ভোট। বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদের প্রার্থী আশরেফা খাতুন পান মাত্র ৯০০ ভোট। ফলে বিশাল ব্যবধানে এজিএস পদটিও শিবিরের দখলে গেছে।
ফলাফল ঘোষণার পর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসজুড়ে আলোচনা শুরু হয়। শিক্ষার্থীদের অনেকে বলছেন, এ ফলাফল প্রমাণ করেছে যে, দীর্ঘদিনের সাংগঠনিক দুর্বলতা কাটিয়ে শিবির আবারও শক্ত অবস্থানে ফিরছে। অন্যদিকে ছাত্রদল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা শীর্ষ তিনটি পদে উল্লেখযোগ্য অবস্থান তৈরি করতে ব্যর্থ হওয়ায় প্রশ্ন উঠছে তাদের কৌশল ও গণভিত্তি নিয়ে।
তবে একইসঙ্গে আলোচনায় এসেছে বিকল্প শক্তির প্রার্থীরা। বিশেষ করে মেঘমল্লার বসুর প্রাপ্ত ভোট এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সংগ্রাম নিয়ে অনেকেই মন্তব্য করেছেন যে, ছাত্ররাজনীতির মাঠে এখনও বহুমাত্রিক সম্ভাবনা আছে। যদিও জয় নিশ্চিত করতে পারেননি, তবুও তারা নির্বাচনে নতুন ভাবনার উপস্থিতি জানান দিয়েছে।
ডাকসু নির্বাচন সবসময়ই ছাত্ররাজনীতির জন্য একটি বড় প্ল্যাটফর্ম। এবারের নির্বাচনের ফলাফলও সেই ধারাকে পুনরায় সামনে এনেছে। শিবির-সমর্থিত প্যানেলের নিরঙ্কুশ জয় একদিকে যেমন ছাত্ররাজনীতির শক্তির ভারসাম্যকে নতুনভাবে সাজিয়েছে, অন্যদিকে প্রতিদ্বন্দ্বী পক্ষগুলোর ব্যর্থতা তাদের ভবিষ্যৎ সংগঠনের দিকনির্দেশনা নিয়ে বড় প্রশ্ন রেখে গেছে।
শিক্ষার্থীরা এখন অপেক্ষা করছে, নবনির্বাচিত ডাকসু নেতৃত্ব কেমন ভূমিকা রাখে এবং তাদের রাজনৈতিক অবস্থান কিভাবে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রতিফলিত হয়। বিশেষ করে যাদের হাতে শীর্ষ তিনটি পদ গেছে, তারা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা পূরণ করতে কতটা সক্ষম হন, সেটিই হয়ে উঠবে আগামীর প্রধান আলোচ্য বিষয়।
repoter