
ছবি: -সংগৃহীত ছবি
বিএনপি জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে কোনো ধরনের রাজনৈতিক জোটে যাবে না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেছেন, বিএনপি ইসলামি মূল্যবোধে বিশ্বাস করে বটে, তবে জামায়াতের সঙ্গে ঐক্যের কোনো প্রশ্নই ওঠে না।
মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশানে নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ অবস্থান পরিষ্কার করেন। সাংবাদিকরা আসন্ন জাতীয় নির্বাচন ঘিরে বিএনপির নির্বাচনী জোটের কৌশল জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি ইসলামি দলের সঙ্গে আলোচনা চলছে। তবে জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক স্থাপনের কোনো সম্ভাবনা নেই।
তিনি আরও বলেন, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির শুরুতেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন, সরকার কিংবা বিএনপির কারও মধ্যেই কোনো দ্বিধা বা শঙ্কা নেই। তিনি আশা প্রকাশ করেন, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনেই দেশের রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসনের পথ সুগম হবে।
জুলাই সনদ প্রসঙ্গে বিএনপির এই নেতা বলেন, এমন কোনো প্রস্তাব তারা গ্রহণ করবে না, যা আদালতে প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে। শেষ পর্যন্ত সংসদের মাধ্যমেই এটি বাস্তবায়ন করতে হবে। তিনি মনে করেন, রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য সংসদই একমাত্র গ্রহণযোগ্য পথ।
নির্বাচন বর্জনের সম্ভাবনা প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, কোনো রাজনৈতিক দল যদি নির্বাচনে না যেতে চায়, সেটা তাদের নিজস্ব সিদ্ধান্ত। তবে তিনি মনে করেন, যে দলগুলো নির্বাচন বয়কট করবে, তারা নিজেরাই রাজনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তার ভাষায়, যারা ভোটের মাঠ থেকে দূরে থাকবে, তারাই মাইনাস হয়ে যাবে। এ কারণেই তিনি বিশ্বাস করেন, বড় কোনো দল সেই ঝুঁকি নেবে না।
বিএনপির প্রার্থী নির্বাচনের প্রসঙ্গেও তিনি স্পষ্ট অবস্থান তুলে ধরেন। তার মতে, যারা বিগত সময়ে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন, প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে তাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। মেধা, দক্ষতা ও দায়িত্বশীলতার ভিত্তিতে যারা রাজনীতি করছে, তারাই আগামীতে বিএনপির প্রতিনিধিত্ব করবে।
সালাহউদ্দিন আহমদের বক্তব্যে পরিষ্কার হয়, বিএনপি আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে জোটের রাজনীতিতে কিছুটা নমনীয় হলেও জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে কঠোর অবস্থানে রয়েছে। এর ফলে রাজনৈতিক অঙ্গনে যে দীর্ঘদিনের জোট গঠনের গুঞ্জন ছিল, তা কার্যত অবসান ঘটল।
তিনি আরও বলেন, বিএনপি এমন একটি রাজনৈতিক সংস্কৃতি চায়, যেখানে যোগ্যতা, দেশপ্রেম ও ত্যাগের মূল্যায়ন হবে। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, আসন্ন নির্বাচন হবে দেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতির জন্য একটি মোড় ঘোরানো অধ্যায়।
প্রসঙ্গত, দীর্ঘদিন ধরে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে অতীতের জোট নিয়ে আলোচনা চললেও সাম্প্রতিক সময়ে সেই জোটে ফাটল ও অবিশ্বাসের কথা প্রকাশ্যে আসতে শুরু করেছে। বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের বক্তব্যে স্পষ্ট হয়ে উঠছে, তারা নতুন প্রজন্মের জন্য ভিন্ন ধরনের রাজনৈতিক বার্তা দিতে চাইছে। এই প্রক্রিয়ায় জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার বিষয়টিও বিএনপির কৌশলের অংশ বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অভিমত।
সালাহউদ্দিন আহমদের এই বক্তব্যের মাধ্যমে বিএনপি কার্যত নির্বাচনী রাজনীতির নতুন দিকনির্দেশনা দিয়েছে। এখন মূল প্রশ্ন হচ্ছে, ইসলামি মূল্যবোধে বিশ্বাসী অন্য কোন দলগুলো তাদের সঙ্গে যুক্ত হবে এবং আগামী নির্বাচনে কেমন প্রভাব ফেলবে। সময়ের পরিক্রমায় রাজনৈতিক অঙ্গন সেই উত্তরই দেবে।
repoter