
ছবি: -সংগৃহীত ছবি
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট লি জে মিয়ং বলেছেন, ঢাকা ও সিউলের মধ্যে বিদ্যমান সহযোগিতা ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে আরও গভীর করার জন্য নতুন পথ ও সম্ভাবনা খুঁজে বের করা জরুরি। তিনি উল্লেখ করেন, দুই দেশের পারস্পরিক বোঝাপড়া ও আস্থার ভিত্তিতে গড়ে ওঠা এই সম্পর্ক আগামী দিনে আরও সুদৃঢ় করতে হবে।
মঙ্গলবার সিউলে প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ে বাংলাদেশের নতুন রাষ্ট্রদূত তোফিক ইসলাম শাতিল তার পরিচয়পত্র পেশ করলে এ মন্তব্য করেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট।
ঢাকায় প্রাপ্ত এক বার্তায় জানানো হয়, পরিচয়পত্র প্রদানের অনুষ্ঠানটি অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ ও আন্তরিক পরিবেশে সম্পন্ন হয়। আনুষ্ঠানিকতা শেষে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট লি জে মিয়ংয়ের সৌজন্য সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় রাষ্ট্রদূত তোফিক ইসলাম শাতিল বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার শুভেচ্ছা পৌঁছে দেন। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টও পাল্টা শুভেচ্ছা জানান এবং বাংলাদেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি কামনা করেন।
সাক্ষাৎকালে রাষ্ট্রদূত শাতিল বলেন, দক্ষিণ কোরিয়া বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বন্ধু ও নির্ভরযোগ্য উন্নয়ন সহযোগী। তিনি উল্লেখ করেন, শিল্প, প্রযুক্তি, শিক্ষা ও মানবসম্পদ উন্নয়নের ক্ষেত্রে কোরিয়ার অভিজ্ঞতা বাংলাদেশকে বহুমাত্রিক অগ্রগতির পথে এগিয়ে নিতে ভূমিকা রাখছে। তিনি দুই দেশের সম্পর্ককে আরও বিস্তৃত ও বহুমুখী করার জন্য তার পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালানোর আশ্বাস দেন।
রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় দক্ষিণ কোরিয়ার ধারাবাহিক মানবিক সহায়তা ও সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, এই সহায়তা বাংলাদেশের মানবিক উদ্যোগকে শক্তিশালী করেছে এবং বাস্তুচ্যুত মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে কার্যকর ভূমিকা রাখছে।
সাক্ষাৎকালে রাষ্ট্রদূত শাতিল দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়ানোর ঘোষিত নীতির প্রশংসা করেন। তিনি উল্লেখ করেন, দক্ষিণ কোরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় দেশগুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ততা বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা বাংলাদেশের জন্যও নতুন সুযোগের দ্বার উন্মোচন করবে। বিশেষ করে বিনিয়োগ, প্রযুক্তি স্থানান্তর ও বাণিজ্যিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে দুই দেশ পারস্পরিকভাবে উপকৃত হতে পারে।
আলোচনায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ভবিষ্যতে পারস্পরিক সুবিধাজনক সময়ে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান। তিনি বলেন, উচ্চ পর্যায়ের সফর বিনিময় কেবল রাজনৈতিক সম্পর্ককে নয়, অর্থনীতি ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রেও সহযোগিতা বাড়াবে।
প্রেসিডেন্ট লি জে মিয়ং রাষ্ট্রদূতের বক্তব্যের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেন এবং বলেন, বাংলাদেশ-দক্ষিণ কোরিয়া সম্পর্কের সম্ভাবনা অনেক বিস্তৃত। তিনি জানান, বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও উন্নয়ন সহযোগিতার পাশাপাশি জনগণের মধ্যে সম্পর্ক আরও জোরদার করতে উভয় পক্ষকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
দুই দেশের মধ্যে শ্রমশক্তি বিনিময়, তথ্যপ্রযুক্তি খাতে যৌথ উদ্যোগ এবং অবকাঠামো উন্নয়নে সহযোগিতা জোরদারের বিষয়েও আলোচনা হয়। রাষ্ট্রদূত আশা প্রকাশ করেন, দক্ষিণ কোরিয়ার অভিজ্ঞতা ও প্রযুক্তি বাংলাদেশের ভিশন-২০৪১ বাস্তবায়নে সহায়ক হবে।
সাক্ষাৎ শেষে উভয় পক্ষই দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন যে, কূটনৈতিক সম্পর্কের সুবর্ণজয়ন্তী অতিক্রম করার পর বাংলাদেশ ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে নতুন মাত্রার সহযোগিতা গড়ে উঠবে। তারা একমত হন যে, আঞ্চলিক শান্তি ও উন্নয়নের স্বার্থে দুই দেশের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা বাড়ানো অপরিহার্য।
রাষ্ট্রদূতের এই সাক্ষাৎকে দুই দেশের ভবিষ্যৎ সম্পর্কের জন্য একটি ইতিবাচক মাইলফলক হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। কূটনৈতিক মহল মনে করে, বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক সম্ভাবনা এবং দক্ষিণ কোরিয়ার প্রযুক্তি ও বিনিয়োগ সক্ষমতা একত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে। এ প্রেক্ষাপটে প্রেসিডেন্ট লি জে মিয়ংয়ের বার্তা দুই দেশের সম্পর্ককে আরও উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার বহন করছে।
repoter