
ছবি: ছবি: সংগৃহীত
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ১০৭ জন শিক্ষার্থীকে অবৈধভাবে ভর্তি করানোর অভিযোগে সাবেক জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু হেনা মোরশেদ জামান এবং আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ শাহান আরা বেগমসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে।
এই মামলাটি রোববার (৬ এপ্রিল) দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে উপপরিচালক মাহবুবুল আলম বাদী হয়ে দায়ের করেন। দুদকের জনসংযোগ দপ্তর এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। মামলার আসামিদের মধ্যে আছেন—আবু হেনা মোরশেদ জামান, শাহান আরা বেগম, ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সদস্য মো. শহীদুল ইসলাম, গোলাম আশরাফ তালুকদার, মো. মুজিবুর রহমান, মো. আব্দুর রব মিয়া, মোহাম্মদ আলী, আজিজা বেগম, মুনিরজাদী কাফিয়া আলম, মো. গোলাম মোস্তফা, এবং মাকসুদা আক্তার।
এজাহারে জানানো হয়েছে, আসামিরা নিজেদের ক্ষমতার অপব্যবহার করে এবং সরকারি নীতিমালা লঙ্ঘন করে ২০২১ শিক্ষাবর্ষে আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের মতিঝিল শাখায় ১ম, ২য়, ৩য়, ৪র্থ এবং ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ১০৭ জন শিক্ষার্থীকে ভর্তি করিয়েছেন। তারা অবৈধভাবে ১১ ধাপে শিক্ষার্থী ভর্তি করেন, যার ফলে যোগ্য শিক্ষার্থীরা ভর্তি হতে পারেননি। এই কার্যক্রম দণ্ডবিধির ৪২০/১০৯ ধারাসহ দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
এছাড়া, শাহান আরা বেগমের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগও রয়েছে। ২০১৯ সালে মতিঝিল শাখায় এসএসসি ফরম পূরণের জন্য শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হয়। পাশাপাশি, অনুত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বিশেষ বিবেচনায় পাস করার জন্য ২০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত আদায় করা হয়। এছাড়া, বিভিন্ন শাখায় শিক্ষার্থী ভর্তির জন্যও টাকার বিনিময়ে অবৈধ লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে।
তদন্তে জানা গেছে, শিক্ষার্থীপ্রতি চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা আদায় করা হত, যা প্রথমে স্কুল ফান্ডে জমা হলেও পরবর্তীতে তা ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের মধ্যে ভাগ হয়ে যেত। এইভাবে শাহান আরা বেগম কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এছাড়া, ২০১৯ সালে আইডিয়াল স্কুলের বনশ্রী শাখায় ‘বিশেষ ক্লাস’ নামে বাধ্যতামূলক অর্থ আদায়ের অভিযোগে দুদক অভিযান চালায় এবং প্রাথমিক তথ্য-উপাত্ত জব্দ করে। ২০১৯ সালের মে মাসে, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষার উত্তরপত্র ঘষামাজা করে নম্বর দেওয়ার অভিযোগ প্রমাণিত হলে, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বোর্ড শাহান আরা বেগমকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়।
এমন পরিস্থিতিতে, এই মামলা এবং তদন্ত ইস্যু দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রশাসনিক দুর্নীতির বিরুদ্ধে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এটি সরকারের কাছে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে, যেখানে শিক্ষাক্ষেত্রে অপব্যবহার এবং দুর্নীতি নিয়ে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হচ্ছে ।
repoter