
ছবি: ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার এক সাধারণ যুবক মোহাম্মদ রবিন, যিনি বর্তমানে ব্রাজিলে বসবাস করছেন, তার জীবনে এক অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটে। ব্রাজিলের ফুটবল সুপারস্টার নেইমার জুনিয়রের সঙ্গে তার বন্ধুত্বের গল্প এখন অনেকের কাছে এক স্বপ্নের মতো। রবিন, যিনি আগে ফুটবল খেলতেন, ১৭ বছর আগে ব্রাজিলে পাড়ি দিয়েছিলেন। তাঁর এক সাধ ছিল নেইমারের সঙ্গে দেখা করার, কিন্তু নানা চেষ্টার পরেও সেটা সহজ ছিল না।
রবিনের প্রথম সাক্ষাৎ নেইমারের সঙ্গে ঘটে ২০২০ সালের শেষে, যখন নেইমার প্যারিসে পিএসজি দলের সদস্য হিসেবে খেলে। সেই সময় সেলসো নামক নেইমারের ছোটবেলার বন্ধু রবিনকে প্যারিসে নেইমারের বাসায় নিয়ে যান। সেখানেই প্রথম দেখা হয় নেইমারের সঙ্গে এবং রবিন বাংলাদেশ সম্পর্কে তাকে জানাতে শুরু করেন। এরপর, রবিন স্প্যানিশ, পর্তুগিজসহ একাধিক ভাষায় পারদর্শী হওয়ায়, তিনি এবং নেইমারের পরিবার একে অপরের সাথে ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করেন।
রবিনের সম্পর্ক শুধু নেইমারের সঙ্গে নয়, তার বাবা নেইমার সিনিয়র এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গেও। গত ২৫ ডিসেম্বর রবিনের জন্মদিনে নেইমারের মা নিজে এসে তার সঙ্গে জন্মদিন উদযাপন করেন। নেইমারের বাবা তার জন্য একটি বাড়িও উপহার দেন, যা সাও পাওলোতে, নেইমারের জন্মস্থানের কাছে অবস্থিত। এমনকি, রবিনের জীবন এতটাই বদলে গেছে যে, নেইমারের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বিভিন্ন দেশে ভ্রমণের সুযোগও পেয়েছেন তিনি।
একবার, রবিন দুবাইয়ে থার্টি ফার্স্ট উদযাপনের জন্য নেইমারের পরিবারের সঙ্গে ছিলেন। তাদের সঙ্গে উড়াল দেন ব্রাজিল থেকে, কিন্তু নেইমার তার নিজস্ব বিমানে আসেন। এরপর, রবিন আবারও বিভিন্ন দেশে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে, নেইমারের বাবার সঙ্গে অনেক ইভেন্টে অংশ নেন। রবিনের মতে, গত চার বছরে তিনি ৪০ বারও বেশি নেইমারের পরিবারের সঙ্গে বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করেছেন।
তবে রবিন নিজেকে ব্রাজিলের একজন প্রতিষ্ঠিত বাঙালি ব্যবসায়ী হিসেবে বেশি পরিচিত হতে চান। ব্রাজিলে তার কৃষি ব্যবসা রয়েছে, যেখানে তিনি সয়াবিন চাষ করেন। তার জমির কিছু অংশ ব্রাজিলের পারানাতে, কিছু অংশ প্যারাগুয়ের মধ্যে অবস্থিত। রবিন নিজেকে লাতিন আমেরিকার একজন কৃষক বলেই মনে করেন। তিনি বাংলাদেশের প্রথম কৃষক, যিনি ব্রাজিলে কৃষিকাজ শুরু করেছেন।
এছাড়া, রবিন ফুটবলের সঙ্গেও যুক্ত আছেন। ব্রাজিলের দ্বিতীয় বিভাগের একটি ফুটবল ক্লাবের পরিচালক হিসেবে তিনি কাজ করছেন। ফুটবলের জার্সিসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম বিক্রিও করেন তিনি ব্রাজিলে।
রবিন বর্তমানে বাংলাদেশে ছুটিতে আছেন। সম্প্রতি তিনি সাভার বিকেএসপিতে যান এবং সেখানে সেনাবাহিনী নারী ফুটবল দলের সঙ্গে একটি প্রীতি ম্যাচ উপভোগ করেন। বিকেএসপির ফুটবলাররা রবিনের কাছে নেইমারের নানা গল্প শোনেন। রবিনও শিক্ষার্থীদের জানিয়ে দেন নেইমারের প্রশিক্ষণ এবং তার দৈনন্দিন জীবন সম্পর্কে। তিনি বিকেএসপির ফুটবল বিভাগের জন্য উন্নত মানের পাঁচটি ফুটবল উপহারও দেন।
রবিনের একটি স্বপ্ন রয়েছে, তিনি একদিন নেইমারকে বাংলাদেশে আনবেন। যদিও সেটা কবে হবে তা তিনি জানেন না, তবে তার বিশ্বাস, একদিন নেইমার বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখবেন। রবিন বলেন, "নেইমার বাংলাদেশে আসতে চায়, কিন্তু সময় মেলাতে পারছে না। তবে একদিন নিশ্চয়ই আসবে।"
এখন রবিন পাঁচ-ছয় দিন দেশে থাকবেন, তারপর সৌদি আরবে যাবেন। সেখানে থেকে তিনি হয়তো ব্রাজিল বা যুক্তরাষ্ট্রে যাবেন। ৫ ফেব্রুয়ারি নেইমারের জন্মদিন, এবং সেই বিশেষ দিনে কোথাও না কোথাও রবিনের উপস্থিতি থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
repoter