ছবি: ছবি: সংগৃহীত
ঢাকার ন্যাশনাল বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে গুরুতর দগ্ধ রোগীদের জরুরি চিকিৎসা কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে উৎসুক জনতার অতিরিক্ত ভিড়ের কারণে। সোমবার (২১ জুলাই) সন্ধ্যায় একটি ফেসবুক পোস্টে প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্যবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বিষয়টি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
তিনি জানান, উত্তরার মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনায় দগ্ধ অসংখ্য রোগীকে বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে বার্ন ইনস্টিটিউটে নিয়ে আসা হচ্ছে। কিন্তু হাসপাতালের সামনের রাস্তায় বিপুল সংখ্যক কৌতূহলী জনতা জড়ো হওয়ায় অ্যাম্বুলেন্স চলাচল, জরুরি পানি সরবরাহ, অক্সিজেন সিলিন্ডার এবং চিকিৎসাসামগ্রী পৌঁছাতে ব্যাপক বিঘ্ন ঘটছে। ছাত্র ভলান্টিয়াররা অক্লান্ত পরিশ্রম করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করলেও জনতার চাপ এতটাই ভয়াবহ যে তারা একা এই পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন।
ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব তাঁর পোস্টে লেখেন, “ছাত্রদের আরেকটি টিম দরকার। দয়া করে উৎসুক জনতাকে পুরো রাস্তা থেকে এমনকি ফুটপাত থেকেও সরিয়ে দিতে চেষ্টা করুন। আগামী কয়েক ঘণ্টা রাস্তা ফাঁকা রাখতে হবে।” তিনি জানান, বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে রোগীদের ক্রমাগত এই ইনস্টিটিউটে স্থানান্তর করা হচ্ছে, কারণ এখানে তুলনামূলক উন্নত চিকিৎসা সেবা পাওয়া যাচ্ছে।
দুঃখ ও ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি আরও লেখেন, “এমনকি হাসপাতালের পানি, জরুরি সামগ্রী এবং অক্সিজেন সরবরাহের গাড়িও ঢুকতে পারছে না, যা এক লজ্জাজনক ও অমানবিক বিষয়। কিছু লোক লাইভ ভিডিও করে পরিস্থিতিকে শোডাউন বানাচ্ছে, কেউ কেউ জোর করে হাসপাতালে প্রবেশের চেষ্টা করছে। এতে চিকিৎসক ও নার্সরা লিফট বা অন্যান্য প্রয়োজনীয় সাপ্লাই ব্যবহারে বিঘ্নিত হচ্ছেন। হাসপাতালের স্বাভাবিক কার্যক্রম কঠিন হয়ে উঠেছে।”
এ সময় তিনি রক্তদানের ব্যাপারে স্পষ্ট বার্তা দিয়ে জানান, “হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই মুহূর্তে নেগেটিভ রক্তের আর প্রয়োজন নেই। যদি ভবিষ্যতে প্রয়োজন হয়, তখন জানানো হবে। যারা রক্ত দিতে ইচ্ছুক, তাদের হটলাইনে যোগাযোগ করে নাম ও রক্তের গ্রুপ জানিয়ে রাখতে অনুরোধ করা হচ্ছে।” যারা ইতোমধ্যে রক্ত দিয়েছেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদও জানান তিনি।
পোস্টের শেষাংশে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব আবেগঘনভাবে লেখেন, “মানুষ মানুষের জন্য—এই মহান চেতনাই আমাদের শক্তি। তবে এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে অকারণে ভিড় করে যেন আর কোনো মানুষের মৃত্যু কারণ না হন। যারা সহযোগিতা করছেন, স্বেচ্ছাসেবার অংশ হচ্ছেন—তাদের জন্য আমাদের শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা সীমাহীন। তবে যারা উৎসুকতা চরিতার্থ করতে এসে চিকিৎসার পথে বাধা সৃষ্টি করছেন, তাদের এখনই সরে যেতে হবে।”
এই বিপর্যয়ের মুহূর্তে মানবিক সহানুভূতির পাশাপাশি সচেতনতা ও দায়িত্ববোধ দেখানো সবার কর্তব্য। হাসপাতালের সামনে জনতার এই অযাচিত ভিড় শুধু রোগীদের চিকিৎসাকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে না, বরং একটি জাতীয় ট্র্যাজেডিকে আরও গভীর সংকটে ঠেলে দিচ্ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হস্তক্ষেপ ও স্বেচ্ছাসেবকদের আরও সমন্বিত প্রচেষ্টা এখন সময়ের দাবি।
repoter




