ঢাকা,  শুক্রবার
১৯ ডিসেম্বর ২০২৫ , ০৩:৪০ মিনিট

Donik Barta

শিরোনাম:

* জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধ: ওবায়দুল কাদেরসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল * গুলিবিদ্ধ শরিফ ওসমান হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, দেশে–বিদেশে উদ্বেগ * ঢাকা–দিল্লি সম্পর্কে নতুন করে উত্তেজনা, আজ চালু থাকছে ভারতীয় ভিসা কেন্দ্র * ৬৬ হাজার কোটি টাকার সম্পদ জব্দ, বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারে গতি আনছে সরকার * যুক্তরাষ্ট্রের ‘সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ’ ফিরিয়ে আনছেন ট্রাম্প, সমালোচনার কেন্দ্রে ভেনেজুয়েলা অভিযান * পাবনার বেড়ায় স্পিডবোটে এসে বাজারে ডাকাতি, ব্যবসায়ীরা আতঙ্কিত * যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভেনেজুয়েলা অভিযান: মাদুরো সরকারের ওপর চাপ বাড়ছে * ট্রাম্পের ২৮ দফা শান্তি পরিকল্পনা: ইউক্রেন–রাশিয়া যুদ্ধ বন্ধে নতুন জটিলতা * গুম ও মানবতাবিরোধী অভিযোগে ১৩ সেনা কর্মকর্তা ট্রাইব্যুনালে * বিএনপির ৪০টির বেশি আসনে মনোনয়নসংক্রান্ত অসন্তোষ, কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ব্যস্ত সমাধান খুঁজতে

স্বৈরাচার পতনের বর্ষপূর্তিতে 'জুলাই ঘোষণাপত্র': ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও ২৮ দফা রূপরেখা ঘোষিত

repoter

প্রকাশিত: ০৭:৩৫:২০অপরাহ্ন , ০৫ আগস্ট ২০২৫

আপডেট: ০৭:৩৫:২০অপরাহ্ন , ০৫ আগস্ট ২০২৫

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউয়ে মঙ্গলবার বিকেল ৫টায় এক আনুষ্ঠানিক আয়োজনে 'জুলাই ঘোষণাপত্র' পাঠ করেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এদিন ছিল শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী সরকারের পতন ও দেশত্যাগের প্রথম বর্ষপূর্তি। এই ঘোষণাপত্রে ২৮টি দফার মাধ্যমে একটি নতুন, গণতান্ত্রিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্র কাঠামোর রূপরেখা তুলে ধরা হয়।

ঘোষণাপত্র পাঠ অনুষ্ঠানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন, যাদের মধ্যে ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, এনসিপির আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলামসহ আরও অনেকে। পুরো অনুষ্ঠানজুড়ে ছিল আবেগময় পরিবেশ ও ভবিষ্যতের জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ এক দৃঢ় সংকল্প।

ঘোষণাপত্রে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাস স্মরণ করে বলা হয়, এই ভূখণ্ডের মানুষ উপনিবেশবাদ ও স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে দীর্ঘকাল ধরে সংগ্রাম করে এসেছে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ ছিল সেই প্রতিরোধের চূড়ান্ত রূপ, যার মাধ্যমে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়। তবে স্বাধীনতা-পরবর্তী শাসনে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন না হওয়ায় গণতন্ত্র বারবার ব্যাহত হয়েছে।

ঘোষণায় উল্লেখ করা হয় যে, ১৯৭২ সালের সংবিধান প্রণয়নের সময় কাঠামোগত দুর্বলতা এবং শাসন ব্যবস্থার অপপ্রয়োগের কারণে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিকৃত হয়। একদলীয় শাসন, বাকশাল প্রতিষ্ঠা, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা হরণসহ একাধিক ঘটনার মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকার রাষ্ট্রযন্ত্রকে নিজেদের করায়ত্ত করে। এতে জনগণের রাজনৈতিক অধিকার হরণ হয় এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংসের মুখে পড়ে।

বিশেষভাবে আলোচিত হয়েছে গত ১৬ বছরের আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামল, যেখানে ‘ফ্যাসিবাদী’ চরিত্র, গুম-খুন, দমন-পীড়ন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ, নির্বাচনী প্রহসন ও সীমাহীন দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ধরা হয়। একইসঙ্গে দেশজুড়ে ছাত্র, তরুণ, চাকুরিপ্রত্যাশী ও সাধারণ নাগরিকদের ওপর চালানো নিপীড়নের বিবরণ দেওয়া হয়। এ সব ঘটনার পরিণতিতে ২০২৪ সালের জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়, যা পরবর্তীতে এক সর্বস্তরের গণআন্দোলনে রূপ নেয়।

ঘোষণাপত্রে বলা হয়, এই গণঅভ্যুত্থান জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারের বৈধ প্রয়োগ এবং আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একটি বৈপ্লবিক রূপান্তর। এই অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়েই ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। এরপর জনগণের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ১২তম সংসদ বিলুপ্ত করে সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শে সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়।

২৮ দফা ঘোষণাপত্রে ভবিষ্যৎ রাষ্ট্র পরিচালনার কাঠামো, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা, মানবাধিকার, সুশাসন ও নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি রয়েছে। বিশেষভাবে, ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক অভ্যুত্থানকে রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা এদিন সর্বাধিক গুরুত্ব পায়। ঘোষণায় জানানো হয়, এই অভ্যুত্থানকে সংবিধানের সংশোধিত তফসিলে অন্তর্ভুক্ত করা হবে এবং আন্দোলনে শহীদদের জাতীয় বীর হিসেবে ঘোষণা করা হবে।

এছাড়াও ঘোষণায় দেশের রাজনীতি থেকে বৈষম্য দূরীকরণ, একদলীয় শাসনের পুনরাবৃত্তি রোধ, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও দুর্নীতির বিচারের অঙ্গীকার এবং পরিবেশবান্ধব টেকসই উন্নয়ন পরিকল্পনার দিকনির্দেশনা তুলে ধরা হয়। ঘোষণার মাধ্যমে জনগণ একটি নতুন বাংলাদেশের স্বপ্নে আত্মনিয়োগের সংকল্প প্রকাশ করে, যেখানে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অধিকার নিশ্চিত করা হবে এবং সমাজে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়িত হবে।

এভাবে এক ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে 'জুলাই ঘোষণাপত্র' বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ পথনির্দেশের প্রতীক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলো, যা ছাত্র-জনতার রক্তে লেখা গণতান্ত্রিক চেতনার নবউদয়ের অঙ্গীকার।

repoter